ড্রেন সংস্কার না করেই টাইলস স্থাপন!

বরিশাল নগরীর কালীবাড়ি রোডের দুই পাশে ৬-৭ বছর আগে নির্মিত পুরনো ড্রেনের উপর (ফুটপাথ) নতুন করে টাইলস্ স্থাপন করার কাজ শুরু করেছে সিটি করপোরেশন। বর্ষা-কাদায় ড্রেনের উপর জন্মানো শ্যাওলা-ময়লা অপসারণ না করে কোন মতে বালু দিয়ে তার উপর টাইলস্ স্থাপন করার পরপরই আবার সেগুলো উঠে যাচ্ছে।

অভিযোগ উঠেছে, যেনতেন ভাবে কাজ করে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ফন্দি করেছে সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ ও ঠিকাদার। যদিও এ বিষয়ে কিছুই জানেন না দাবি করেছেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুজ্জামান।

নগরীর সদর রোডের সংযোগস্থল থেকে শীতলাখোলা পর্যন্ত কালীবাড়ি রোডের দুই পাশে কোটি টাকা ব্যয়ে বক্স ড্রেন নির্মাণ কাজ করা হয় বিগত মেয়র শওকত হোসেন হিরনের আমলে। দীর্ঘদিনেও সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ না করায় ওই ড্রেনের উপরিভাগের বিভিন্ন অংশ ভেঙ্গে গেছে। টানা বৃষ্টিতে কোথাও কাদা-ময়লা পড়েছে। কোথাও আবার শ্যাওলা জন্মেছে। যেনতেন ভাবে ময়লা-কাদা-শ্যাওলা পরিষ্কার না করেই তার উপর টাইলস্ স্থাপন করায় মুহূর্তের মধ্যে তা উঠে যাচ্ছে। অভিযোগ- ঈদের আগে একটি অসাধু চক্র অর্থ হাতিয়ে নিতে এই কাজ শুরু করেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, কালীবাড়ি রোডের দুই পাশে ৬-৭ বছর আগের পুরানো শ্যাওলা পড়া, ভাঙাচোরা ড্রেনের উপর টাইলস স্থাপনের কাজ চলছে। ভাঙা ড্রেন সংস্কার না করে শ্যাওলার উপর বসানো হচ্ছে টাইলস্। সিমেন্ট কম দিয়ে কোন মতে টাইলস্ দিয়ে ঢেকে দেওয়ার কাজ চলছে। বৃষ্টি কাদায় মধ্যে কাজ করায় পানিতে ধুয়ে যাচ্ছে। এ কারণে অনেক স্থানের টাইলস্ ভেঙ্গে গেছে আবার কোথাও উঠে গেছে।

টাইলস্ স্থাপন কাজের শ্রমিক মো. বাদল জানান, গত সপ্তাহে তারা কাজ শুরু করেছেন। এর আগে একই সড়কের পাশে ড্রেনে দেড় বছর আগে কিছু কাজ করছিলেন। বরাদ্দ না থাকায় সে সময় কাজ বন্ধ রাখেন ঠিকাদার। গত শুক্রবার থেকে ফের কাজ শুরু হয়। সদর রোডের সংযোগস্থল কালীবাড়ি রোড শীতলাখোলার মোড় পর্যন্ত ডেনে টাইলস্ লাগানো হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

কালীবাড়ি রোডের বাসিন্দা মো. শাহীন জানান, এই এলাকায় ড্রেন নির্মাণ হয়েছে তৎকালীন মেয়র শওকত হোসেন হিরনের আমলে। ৬-৭ বছরে অনেক স্থানে ড্রেন ভেঙে গেছে। বর্ষায় ড্রেনগুলোর উপরে ও পাশে শ্যাওলা জমে গেছে। পুরনো ড্রেন সংস্কার না করে কাদা-পানি ও শ্যাওলার ওপর টাইলস বসানোর মাধ্যমে অর্থ অপচায় ছাড়া আর কিছুই হবে না বলে তিনি মনে করেন।

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা মো. পলাশ জানান, সিটি করপোরেশন তাদের খেয়াল খুশী অনুযায়ী কাজ করছেন। এই কাজ তদারকি করার কোন ব্যবস্থা নেই। তা না হলে বর্ষায় পুরনো ড্রেনের উপর টাইলস্ স্থাপণ কার স্বার্থে(?)।

বরিশাল নগর সৌন্দর্য রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু জানান, অপরিকল্পিত ড্রেনের কারনে নগরবাসী প্রতিনিয়ত জলাবদ্ধায় পড়ছে। জলাবদ্ধতা কমানোর কোন উদ্যোগ না নিয়ে পুরনো ড্রেনে টাইলস্ স্থাপনের কাজ হাস্যকর এবং উদ্দেশ্যমূলক।

সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হুমায়ুন কবির জানান, কালীবাড়ী রোডের দুই পাশে ড্রেন কাম ফুটপাথের কাজ হচ্ছে সাধারণ (নিজস্ব অর্থায়ন) ফান্ডের অর্থে। এই প্রকল্পে বরাদ্দ না থাকায় এর আগে একবার কাজ বন্ধ ছিল। বর্তমানে শুরু হওয়া কাজ নিয়ে সমস্যার কথা শুনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অর্থ ভাগবাটোয়ারা কিংবা অপচয়ের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে তার দাবি।

সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুজ্জামান জানান, বর্ষায় পুরনো ড্রেনের উপর টাইলস স্থাপণ করার কথা নয়। এ রকম কোন কাজ শুরুর আগে তার জানার কথা। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। কিছু ঠিকাদার অতি উৎসাহী হয়ে কাজ করে বিল তোলার চেষ্টা করেন। তিনি এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কতা বলেন।

সরেজমিন পরিদর্শন করে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন সিটি মেয়র আহসান হাবিব কামালও।