তবু জয়ের পথেই বাংলাদেশ

সাকিব আল হাসানও বিদায় নিলেন। কিন্তু মুশফিকুর রহীম একপ্রান্ত ধরে রেখেছেন। ম্যাট হেনরিকে যেভাবে ওভার দ্য টপ ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন মুশফিক তাতেই বোঝা যায় চোয়াল তার দৃঢ়। এই ম্যাচে জয় না নিয়ে মাঠ ছাড়ার এতটুকু ইচ্ছে নেই তার। মাঝে ১৭ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে যখন খাবি খাচ্ছিল টাইগাররা তখনই মুশফিক নামেন। পঞ্চম উইকেটে ৩৯ রানের মূল্যবান জুটিতে সাকিবের সাথে দলের ধস সামলান। আর এই রিপোর্ট লেখায় সময় আত্মীয় মাহমুদউল্লাহর সাথে মিলে ৩০ পেরুনো জুটি হয়ে গেছে। বিদেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম জয়ের সুবাস পাচ্ছে বাংলাদেশ। ডাবলিনে বুধবারের এই ম্যাচে টার্গেট ২৭১ রানের। শেষ খবর, ৪৪ ওভারে ৫ উইকেটে ২৩৩ রান টাইগারদেল। বাকি ৩৬ বলে জিততে দরকার ৩৮ রান। মুশফিক ৩৭ ও মাহমুদউল্লাহ ১৭ রানে ব্যাট করছেন।

তামিম ইকবাল বেশ মজবুত একটা ইনিংস গড়ে তুলেছিলেন। এমন ম্যাচে একজন ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরি মানে জয়টা সহজ হয়ে যাওয়া। সাব্বির রহমানের সাথে ইনিংস মেরামত করে সেদিকটাতেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন ড্যাশিং ওপেনার। কিন্তু স্পিনার মিচেল স্যান্টনারকে মারতে গিয়ে ভুলটা হয়ে গেল। বেনেট ছুটে এসে ক্যাচটা নিলেন দারুণভাবে। দ্বিতীয় উইকেটে ১৩৬ রান তোলার পর উইকেট হারালো টাইগাররা। ৬৫ রান করে বিদায় তামিম। এক ওভার পরই মোসাদ্দেক হোসেনের সাথে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট সাব্বির (৬৫)। একি কাণ্ড! ডাবলিনে বুধবার ২৭১ রানের জয়ের লক্ষ্যে ছোটা টাইগাররা যে বড় একটা ধাক্কা খেল!

ধাক্কার কি দেখেছে বাংলাদেশ? সাব্বির হয়েছেন স্যান্টনারের দ্বিতীয় শিকার। পরের ওভারেই জিতান তার দ্বিতীয় শিকার করেছেন মোসাদ্দেককে (১০)। ১ উইকেটে ১৪৩ থেকে দেখতে না দেখতেই টাইগাররা ১৬০ রানে ৪ উইকেট হারানো দল! মানে ১৭ রানের মধ্যে নেই মূল্যবান ৩ উইকেট। এমন আহামরী কোনো বোলিংয়ের কারণে নয়। নিজেদেরই কারণেই এই সর্বনাশ ডেকে আনা তখন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম জয়ের স্বপ্ন তাই পেন্ডুলামের মতো ঝুলতে শুরু করেছিল। ৩০ ওভারে ৪ উইকেটে তখন ১৬১ রান টাইগারদের। ক্রিজে অভিজ্ঞ কিন্তু একেবারে নতুন দুই ব্যাটসম্যান সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহীম ছিলেন।

ধাক্কা দিয়েই শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংস। তামিম প্রথম বলেই স্পিনার জিতান প্যাটেলকে ছক্কা হাঁকিয়ে মেজাজটা বুঝিয়ে দিলেন। কিন্তু ইনিংসের তৃতীয় বলে জিতানকেই তুলে দিয়ে গোল্ডেন ডাক মেরে ফেরেন শেষ দুই ম্যাচে ফিফটি করা সৌম্য সরকার। দলের ৭ রানে ওই উইকেট পতনের পর তামিম-সাব্বির জুটিতে ২৬.৩ ওভার খেলে বাংলাদেশ। কিউই বোলারদের হতাশায় ডুবিয়ে দলকে তারা নিয়ে যান ১ উইকেটে ১৪৩ পর্যন্ত।

কিন্তু ওখানেই গোত্তা খেতে হয়। ৫ রানের মধ্যে দুই সেট ব্যাটসম্যান আউট। সাব্বির যদি একটু আগে ব্যাট নামাতেন তাহলে ব্যাটিং অর্ডারে প্রোমোশন পাওয়া মোসাদ্দেককে ফিরতে হয়। কিন্তু ভাগ্যটা খারাপ সাব্বিরেরই। সাথে বাংলাদেশেরও কি না সেটা এখন প্রশ্ন। দুই সেট ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ফেলার পর ৩ উইকেটে ১৪৮ থেকে নতুন করে শুরু করতে হয়েছিল। মোসাদ্দেক এলবিডাব্লিউর শিকার হলে আরো শুরু থেকেই শুরু হয় বাংলাদেশের। মুশফিক ও সাকিব সামলালেন। তারপর মুশফিককে ধরে এগিয়ে চলা বিদেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম জয়ের দিকে।

এর আগে টস হেরে নিউজিল্যান্ডকে ক্লনটার্ফ ক্রিকেট ক্লাব মাঠে বাংলাদেশের বোলাররা ৮ উইকেটে ২৭০ রানে বেধেছেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর :
নিউজিল্যান্ড : ২৭০/৮ (ল্যাথাম ৮৪, ব্রুম ৬৩, টেলর ৬০*, অ্যান্ডারসন ২৪, প্যাটেল ৭*, নিশাম ৬, হেনরি ৫, রনকি ২, মুনরো ১, সান্টনার ০; সাকিব ২/৪১, নাসির ২/৪৭, মাশরাফি ২/৫২, মোস্তাফিজ ১/৪৬, রুবেল ১/৫৬, মোসাদ্দেক ০/১৪)।