তিথি বাঁচবেই, মানবতা জিতবেই

সাফাত জামিল শুভ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় : তিথি’দের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যাচমেট আমার স্কুলের বন্ধু রুশো যখন আমাকে বলল, “তিথি’র জন্য ফান্ড রেইজের কাজ শুরু হয়েছে। সে আমাদের ক্লাসেরই বান্ধবী। আমরা যথাসাধ্য চেস্টা করছি, সম্ভব হলে যেভাবেই পারিস হেল্প কর।হাতে সময় একেবারেই নেই।”

রুশো’র মেসেজটা পাওয়ার পর আমি আমার বয়স হিসেব শুরু করলাম। জীবনে এখনও আমার কী কী করা বাকী সেই লিস্টটা যখন আমি বের করি, আমার মাথা এলোমেলো হয়ে যায়।

তিথি’র সাথে আমার জীবনের হিসাব মিলবেনা। মিলবেনা কারণ; সে বাংলাদেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মাঝে একটি থেকে তার এ বছর পড়াশোনা শেষ হওয়ার কথা। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ‘তিথি’ যখন জীবনের অদ্ভুত এক মোড়ে এসে বিরল ব্যাধি হেমাফাজোসাইটিক লিম্ফোহিস্টিয়োসাইটোসিসে (এইচএলএইচ) এর সাথে যুদ্ধ করার মানসিকভাবে প্রস্তুত হচ্ছে, ঠিক সে সময়টায় মনে হয়েছে, যে মেয়েটা ঠিক আমার বয়সী; সে কেন এই মুহূর্তে এই বিভীষিকাময় যুদ্ধের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করবে? তার তো এখন স্বপ্ন দেখার কথা। বন্ধুদের সাথে এ বছর পাশ করে তিথিও ঢাকা শহর চষে ফেলেবে চাকুরীর জন্য, তার বয়স এখন আর দশ’টা বাংলাদেশী ছেলে-মেয়ের মত উন্নত দেশগুলোর দুতাবাসগুলোতে লাইন ধরে দাঁড়াবার। বিদেশে পড়াশুনা শেষে করবার পর দেশে ফিরে আসা উচিৎ কি উচিৎ না এ বিষয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তর্ক জুড়ে দেবার বয়স তার। এই বয়সটা ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশ হবার। আবার হয়তো বা আশার বারুদের হঠাৎ আগুনে ধুপ করে জ্বলে ওঠে সবাইকে অবাক দেবার বয়স তিথি’র। এখন কেন সে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুয়ে ক্যান্সারের সাথে কীভাবে যুদ্ধ করে টিকে থাকা যায়, সেই ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করবে? মুহিবের জন্য তো হাসপাতাল একটি দিনের জন্যও নয়। ওর বয়সী কেউ কি কেউ কি এভাবে হাসপাতালে শুয়ে থাকে?

কলকাতার টাটা মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসাধীন তিথি’র মনের অবস্থা অনেকটাই অনুমেয়। সে তো কখনোই ভাবেনি এই বয়সে তাকে মৃত্যুর প্রহর গুণতে হবে। অন্য সবার মতোই হাজার স্বপ্ন ছিল তার,আজ সেগুলো দুঃসপ্ন হয়ে গেছে। সে এখন বেড়াতে যাবার কথা ভাবে না,বন্ধুদের সাথে ফুর্তি করার কথা ভাবে না, ভাবে আর ক’দিন বাঁচবে,আদৌ বাঁচবে কি? ভাবে তার জন্য তার পরিবার আজ নিদারুণ কষ্টে দিন কাটায়,ভাবে আর বুঝি তার বন্ধুদের সাথে একসাথে ক্লাস করা হবে না,আড্ডা দেয়া হবে না। সে বোধহয় আর হাসে না, হাসবে কি করে,তার হাসি কোথায় হারিয়ে গেছে সে খোঁজার চেষ্টাও করে না। সুখের গানগুলো তার মনে বাঁচার আকুতি জাগায়। টিভি-ফেইসবুকে এখন সে হয়তো সময় কাটায় না আমাদের মতো,এগুলো এখন তার কাছে অর্থহীন। মা যেনো আরো ভেঙ্গে না পড়ে সেজন্য লুকিয়ে কাঁদে হয়তো। তার মন চায় বাঁচতে সবার মাঝে,কিন্তু তার মগজ বলে অন্য কথা। কার কথা সে বিশ্বাস করবে ভেবে পায়না। এসব ভাবনা তো এখন ভাবার কথা ছিল না তার।

কালিদাস বলেছিল,”সবার ওপরে মানুষ সত্য,তাহার ওপর নাই।” আমি জানি পৃথিবীতে এখনো অনেক মানুষ আছে যারা চাইলে আমার এই ভাইটাকে বাঁচাতে সাহায্য করতে পারে। কতো বড় বড় শপিং মলে শপিং করেন আপনারা, দামী দামী জিনিস কেনেন। এই মানুষটার জীবনের জন্য কিছু দাম আর মানবতা দিতে পারেন না কি? সবাই সবার সামর্থ্য বুঝে সাহায্য করেন। ক’টা টাকার জন্য একটা জীবন হারিয়ে যাক এটা কি আপনি চান?কি ক্ষতি হবে একটা দামী জামা না কিনলে,আজে বাজে খরচের বাজেটটা দিয়ে দিলে, সিগারেট কেনার টাকাটা দিয়ে দিলে,দামী রেস্টুরেন্টে খাওয়ার টাকাটা দিয়ে দিলে? আপনাদের একটু মানবিকতা একটা মানুষকে ও তার পরিবারকে নতুন জীবন দিতে পারে,একবার ভেবে দেখেছেন কি?

বিরল এই রোগে বাংলাদেশের একমাত্র রোগী আমাদের বোন তিথি’র অপারেশন ও চিকিৎসার জন্য প্রায় ৭৫ লক্ষ টাকা প্রয়োজন।কেউ যদি সাহায্য পাঠাতে চান, তবে পাঠাতে পারেন নিচের ঠিকানায়- বিকাশ ০১৭৪৯২৭৭৫০১ এবং ০১৯৮৪৭৪০৮৮৫, রকেট ০১৭৪৯২৭৭৫০১৭। ডাচ্ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড : ১২৭১০১০০৭০৩৭০ (সৈয়দ মোহাম্মদ জব্বার)। অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড : ০২০০০০৯৬২১১১৮ (ইসমাথ জাহান ছন্দা)।সম্ভাবনাময় এ প্রাণটিকে বাঁচানোর জন্য সাহায্যের আবেদন নিয়ে তাঁর সহপাঠীরাও ছুটছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে। কিন্তু তাতে কতইবা হয়। বিত্তবানরা এগিয়ে না এলে হয়তো অকালেই ঝরে যাবে তিথি’র মতো সম্ভাবনাময় একটি প্রাণ, সাথে অপমৃত্যু ঘটবে কিছু স্বপ্নের।

আর বোন তিথি’কে বলবো- “তোমার জন্য তোমার বন্ধুরা আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছে। একদম নো টেনশন! বাংলাদেশের প্রতিটা কোনায় তোমাকে আমাদের মাঝে আবার ফিরে পাবার বার্তাটা নিয়ে তাঁরা পৌঁছে যাবে। এইচএলএইচ’কে মরণঘাতী রোগ অনেকেই বলে। আমরা একদম বিশ্বাস করি না। তোমার বিশাল চিকিৎসাভার নিয়ে যে অনিশ্চয়তা হয়েছে, সেটা নিয়েও বিচলিত হবার কোন কারণ নেই। আমরা আছি,সারা বাংলাদেশের নৃবিজ্ঞান পরিবারের বন্ধুরা আছে। আর বাংলাদেশের সাধারণ মানুষেরা তো আছেই। তুমি বিশ্বাস করবে কিনা জানি না- এদেশে শুদ্ধতম কোন বিশ্বাস খুব অল্প সময়ে মানুষ থেকে মানুষে সঞ্চারিত হয়। তোমার বেলায়ও এমন হবে। দেখে নিও, এমন হবেই। যে বিশ্বাসে আমরা বুক বেঁধেছি, সে বিশ্বাস ছড়িয়ে পড়বে চারদিকে।তোমার বাকী জীবনের স্বপ্নগুলোকে ফিরিয়ে দেবার জন্য যে যুদ্ধটুকু প্রয়োজন, সেটা আমরা চালু রাখবো। টাকার অংকে ৫০ লাখ টাকা কখনোই তোমার স্বপ্নের চেয়ে বড় কিছু নয়। তুমি আমাদের মাঝে নিশ্চিত ফিরে আসবে, আসবেই।”