তিনি পালিয়ে থাকেন কেন? : খালেদার উদ্দেশে শেখ হাসিনা

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘তিনি এতিমের টাকা মেরে দিয়েছেন। মামলা খেয়ে ১৪০ দিন সময় নিয়েছেন। তিনি পালিয়ে থাকেন কেন? চোরের মন পুলিশ পুলিশ।’

তিনি আরও বলেন, ‘১৪০ বার কোর্টের কাছ থেকে সময় নিয়েছেন, বারবার সময় নষ্ট করেছেন। আদালত বদল করেছেন। এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন! নির্দোষ হলে মোকাবিলা করেন, পালিয়ে থাকবেন না।’

নিউ ইয়র্ক সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার রাতে (বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বুধবার সকাল) যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তিনি অনুষ্ঠানে দেশের উন্নয়নের হালচাল, সরকারের নানা কার্যক্রম, বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা, রোহিঙ্গা ইস্যুসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন।

আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অবস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘তারা নির্বাচনে যাবে না,সেটা তাদের ব্যাপার। কিন্তু নির্বাচনে যাবো না, হতেও দেবো না– এটা ঠিক না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৭ সালে আমাকে যখন দেশে ফিরতে দিচ্ছিল না, একের পর এক মামলা দিয়েছিল, তখন বিশ্বব্যাপী ও জনগণের চাপে তৎকালীন সরকার আমাকে দেশে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিল। বিভিন্ন দেশ থেকে শতাধিক প্রবাসী আমার সঙ্গে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশে গিয়েছিলেন।’

রোহিঙ্গা ইস্যুতে শেখ হাসিনা বলেন,‘মিয়ানমারকে বলছি, আপনাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে হবে। তাদের নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। আজকে যারা বিপদে পড়েছে তাদের সাহায্য দেওয়া জরুরি। ১৬ কোটি মানুষকে যদি খাওয়াতে পারি,তবে ওদের পারবো না? বাংলাদেশের মানুষ অনেক উদার। তারা একবেলা না খেয়ে ওদের খাওয়াবে।’

তিনি বলেন,‘মিয়ানমারে যে ঘটনা ঘটেছে দলে দলে মানুষ বাংলাদেশে এসেছে। মানবিক কারণে নির্যাতিত মানুষকে আশ্রয় দিতে হয়েছে। আমরাও তো পাকিস্তানের আক্রমণে প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলাম। আমাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। গুলি করে মানুষ হত্যা করা হয়েছিল।’

কফি আনান কমিশন যে সুপারিশ দিয়েছিল তার বাস্তবায়ন করতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘ওআইসি’র মিটিংয়েও এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তারাও এ বিষয়ে কথা বলেছেন। আমি বলেছি, বিশ্বে মুসলমানরাই কেন শরণার্থী হবে? তারাও আমার সঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন।’

বাংলাদেশের নাগরিকদের শরণার্থী হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারত থেকে সব শরণার্থী ফেরত এনেছিলেন। আর কোনও দেশ এতো দ্রুত ফেরত আনতে পারেনি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে বিশ্বাসী, যেটা বঙ্গবন্ধু করতেন। বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’

দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির জনকের পথ ধরে ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দেশে যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে তা অসামান্য। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা যখন বলেছিলাম তখন অনেকে হেসেছিল, বিদ্রুপ করেছিল। আজকে সারাদেশে ইন্টারনেট আছে। মানুষ স্কাইপে কথা বলতে পারছে দেশ ও দেশের বাইরে। এখন বিদ্যুৎ দিয়ে রাইস কুকারে রান্না হচ্ছে, ভ্যান চলে ব্যাটারি চার্জ করে। ২০২১ সালের মধ্যে প্রত্যেক ঘরে বিদ্যুৎ দিয়ে আলো জ্বালাবো। আমরা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে যাচ্ছি এই বছরের ডিসেম্বরের দিকে।

প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য শুনে নেতাকর্মীরা স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘স্লোগান দিলে চলবে না, ভোট বাড়াতে হবে।’

ব্রিটেনের এমপি রেজওয়ানা সিদ্দিকী টিউলিপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রী, এমপি ও নেতাদের ব্যবহার মানুষ লক্ষ্য করে। তারা ভোট দেবে এগুলো বিবেচনা করে। যুক্তরাজ্যতে টিউলিপ ১১০০ ভোট পেয়ে জিতেছিলেন। তার পরের নির্বাচনে ১৬ হাজার ভোটে জিতেছিলেন। ওখানে তো আর কেউ সিল মেরে ব্যালট বাক্স ছিনতাই ভোট দেয় না। তাই ব্যবহার দিয়ে কাজ করে ভোট বাড়াতে হবে।’