‘তুফানকাণ্ড’ সরকারের জন্য বিষফোড়া : রিয়াজুল হক

বগুড়ায় ছাত্রী ধর্ষণ এবং ওই ছাত্রী ও তার মাকে নির্যাতনের পর মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার ঘটনাকে সরকারের জন্য ‘বিষফোড়া’ বলে উল্লেখ করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আয়োজিত ‘নারীর প্রতি সহিংসতা, আমাদের করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন তিনি। আজ রোববার দুপুরে বগুড়া জেলা প্রশাসক কার্যালয় করতোয়ায় এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে নারী ও কন্যাশিশুর প্রতি উদ্বেগজনকভাবে সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় ইউএনডিপির হিউম্যান রাইটস কর্মসূচির সহায়তায় এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।

মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশ যখন বিশ্বে উন্নয়নের ‘রোড মডেল’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বিশ্ববাসীর কাছে প্রশংসা কুড়াচ্ছে, ঠিক তখন ‘তুফানকাণ্ড’ বাংলাদেশকে লজ্জার মুখে ফেলে দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ কারণে যাদের জন্য এ ঘটনা ঘটেছে, যে গোষ্ঠীর কারণে এ ঘটনা ঘটেছে, তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বগুড়াসহ দেশজুড়ে নারী ধর্ষণ ও নির্যাতনের দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে বিচারপ্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দায়িত্বশীল হতে হবে।

কাজী রিয়াজুল হক বলেন, দেশজুড়েই নারীর প্রতি অতিমাত্রায় সহিংসতা, নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা অনেকে বেড়েছে।

২০১২ সালে ঘটে যাওয়া দেশজুড়ে নারী ধর্ষণ ঘটনার সঙ্গে এ বছরের সাত মাসের পরিসংখ্যান চিত্রের সঙ্গে তুলনা করে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, ২০১২ সালে দেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৫০৮টি। অথচ এ বছরের সাত মাসে ৫২৬ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ওই বছরে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৫৭ জন নারী। অথচ এ বছরের সাত মাসেই গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১১৯টি। এই পরিসংখ্যানের বাইরেও অনেক ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। যেসব ঘটনা পুলিশ পর্যন্ত আসে না। গণমাধ্যমে প্রকাশ পায় না। দেশে ধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি সামাজিক অবক্ষয়কে দায়ী করেন।

রিয়াজুল হক বলেন, নারী নির্যাতনের মামলার ৮৮ শতাংশ এবং ধর্ষণ মামলার ৯৫ শতাংশ আসামি খালাস পেয়ে যায়। তাহলে কি দেশে মাত্র ১২ শতাংশ নির্যাতন আর ৫ শতাংশ ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে? তিনি বলেন, অপরাধ প্রমাণ করার ব্যর্থতার কারণে আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে আসামিরা খালাস পাচ্ছে। আর বিচারহীনতা সংস্কৃতির কারণে অপরাধীরা উৎসাহিত হচ্ছে। তাতে ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ছে। এ কারণে বিচারপ্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে।

সভায় বগুড়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী, ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল, বগুড়ার জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ জেসমিন আরা জাহান, ইউএনডিপির টেকনিক্যাল কর্মকর্তা শর্মিলা রসুল, র‌্যাব-১২ বগুড়া ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর মোর্শেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আসগর তালুকদার প্রমুখ বক্তব্য দেন।