থামছে না চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ

রাজধানীতে মশাবাহিত রোগ চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না। বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে গত কিছুদিন থেকে নগরীতে চিকুনগুনিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের একজন পরিচালক অধ্যাপক মিরজাদী সাবরিনা ফ্লোরা জানান, বুধবার (১২ জুলাই) পর্যন্ত দুই হাজার ৭৪৮ জনের শরীরে চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়েছে।

মঙ্গলবার (১১ জুলাই) পর্যন্ত চিকুনগুনিয়া আক্রান্তের এই সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৭০০। অর্থাৎ শেষ এক দিনে নতুন করে ৪৮ জনের চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়েছে।

অধ্যাপক মিরজাদী সাবরিনা ফ্লোরার মতে, ঢাকায় চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণে সরকার, জনগণ ও বেসরকারি সংস্থা সবার সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন রয়েছে। তিনি বলেন, ভারি বৃষ্টিতে চিকুনগুনিয়ার বাহক এডিস মশা কিছু মাত্রায় মারা পড়লেও জলাবদ্ধতায় পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, শুধু চিকুনগুনিয়ার কারণে প্রাণ সংশয়ের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কিন্তু রোগীর শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকলে বা একই সঙ্গে অন্য রোগ বা সংক্রমণ থাকলে তা প্রাণঘাতী হতে পারে। তবে অধ্যাপক ফ্লোরা জানান, চিকুনগুনিয়ায় রোগী মারা যাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। চিকুনগুনিয়ার লক্ষণের মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাংস পেশি ও মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব, ক্লান্তি ও ত্বকে ফুসকুড়ি বা র‌্যাশ।

চিকুনগুনিয়া রোগীরা সাধারণত অস্থিসন্ধিতে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন যা বেশ কিছুদিন স্থায়ী হতে পারে। যে মশা চিকুনগুনিয়ার জীবাণু বহন করে ওই একই প্রজাতির এডিস মশা ডেঙ্গু রোগের জন্যও দায়ী।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী চিকুনগুনিয়ার কোনো চিকিৎসা নেই। তবে রোগের উপসর্গ দেখে ওষুধ দিয়ে উপশমের চেষ্টা করেন চিকিৎসকরা। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক রোগটি সম্পর্কে সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান শুরু করেছে। চিকুনগুনিয়ার লক্ষণ, প্রতিরোধের জন্য করণীয় ও রোগটির চিকিৎসা নিয়ে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন তথ্য প্রচার করছে তারা।

এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ব্র্যাক তার এক লাখ কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মাঝে চিকুনগুনিয়ার বিভিন্ন তথ্য সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করেছে। সারা দেশে ব্র্যাক পরিচালিত ৪৫ হাজার ৪৯৮টি স্কুলেও শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের কাছে এই লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। লিফলেটের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চিকুনগুনিয়া নিয়ে সচেতনতামূলক তথ্য প্রচার করছে ব্র্যাক। ব্র্যাক জানায়, ফেসবুকের মাধ্যমে হাজারো মানুষের কাছে তারা চিকুনগুনিয়া সম্পর্কিত তথ্য পৌঁছে দিচ্ছেন।

মহামারী বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২০১৫ সালে তিন হাজার ১৬২ জন ডেঙ্গু আক্রান্তের তথ্য পেয়েছে। এর পরের বছরই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দ্বিগণ হয়ে ছয় হাজার ২০ জনে গিয়ে দাঁড়ায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চলতি বছরের মে মাসের ১৪ তারিখ পর্যন্ত চিকুনগুনিয়ার পাশাপাশি ১৯৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্তের কথা জানতে পেয়েছে।

এডিস ও চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের বাহক স্ত্রী এডিস মশা সারা বছর বংশ বৃদ্ধি করতে পারলেও এর জন্য তাদের পরিষ্কার ও আবদ্ধ পানির প্রয়োজন হয়। আর এ বছর বর্ষাকাল শুরু হওয়ার আগে থেকেই নিয়মিত বৃষ্টি ও রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় জলাবদ্ধতাকে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধির কারণ মনে করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অধ্যাপক শফিউল্লাহ বলেন, আমাদের ধারণা অনেক মানুষ ডেঙ্গু প্রতিরোধী হয়ে উঠেছেন। কিন্তু এদের মধ্যে অনেকেই আবার চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন।

তিনি জানান, চিকুনগুনিয়ার লক্ষণ নিয়ে অনেক রোগী তাদের কাছে আসলেও তাদের সবার মধ্যে চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয় না। এর কারণ হিসেবে অধ্যাপক শফিউল্লাহ জানান, জ্বর শুরু হওয়ার দুই থেকে তিন দিন পর চিকুনগুনিয়া বোঝা যায়। শরীরে এই ভাইরাস ছড়াতে পাঁচ দিন সম লাগে। শুধুমাত্র এর পরই রোগীর শরীরে চিকুনগুনিয়া সনাক্ত করা সম্ভব হয়।