দর্শক শূন্যতায় ২৭ সিনেমা হলের ২৪ হলই বন্ধ

নীলফামারী: দর্শক শূন্যতায় নীলফামারী জেলায় ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে ২৭টি সিনেমা হল। বাকি যে ৩টি হল আছে, সেগুলোও এখন বিভিন্ন কারণে বন্ধ হওয়ার পথে।

বিনোদনের এসব কেন্দ্র পর্যায়ক্রমে বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে সাধারণ মানুষের নির্মল আনন্দের সুযোগ আর থাকছে না। একসময় পরিবারের সবাই মিলে হলে গিয়ে সিনেমা দেখতেন। এখন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তো দূরের কথা, কেউই সিনেমা হলের দিকে যেতে চান না। ভালো ছায়াছবি তৈরি হচ্ছে না, এই কারণে এখন দর্শকরা সিনেমা হলে যেতে চান না। এছাড়াও আকাশ সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় কেউই আর সিনেমা হলে যান না। এর ফলে দর্শক শূন্যতায় সিনেমা হলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা।

এতে করে সিনেমা হল মালিকরা পুঁজি হারানোর ভয়ে সিনেমা হল বন্ধ করে অধিক লাভের আশায় সিনেমা হলকে শপিংমল বানাচ্ছেন। অন্যদিকে, অনেকেই আবার পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন।

এবিষয়ে সিনেমা হল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কেএম শাহীন বলেন, ‘আমরা যারা হল-মালিক, তারা আজ নিঃস্ব। পুঁজি হারিয়ে আমরা দিশেহারা। কেউ কেউ আবার ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে ইতোমধ্যে দেউলিয়াও হয়ে গেছেন।’

তিনি বলেন, ‘জেলার ২৭টি সিনেমা হলের মধ্যে ২৪টি হল ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে লোকসানের দায়ভার নিয়ে।

তিনি আরও বলেন, ‘চিলাহাটির একটি সিনেমা হল আনন্দমহল টানাটানি করে চালু রয়েছে। নীলফামারীর মমতাজ মহল ও দিপালী সিনেমা হল দুটি লোকসান গুণে বন্ধ হয়ে গেছে।

অন্যদিকে, হল-মালিকরা বলছেন, প্রতি মাসে হলপ্রতি অন্তত খরচ হয়ে থাকে প্রায় সোয়া লাখ টাকা। এর মধ্যে স্টাফ ব্যয় প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা, বিদ্যুৎ বিল ১২ হাজার টাকা, জেনারেটর ব্যয় ৭ হাজার টাকা, হল ভাড়া প্রায় ৩০ হাজার টাকা, পৌরকর ৫ হাজার টাকা, সরকারি ট্যাক্স ৫ হাজার টাকা, ছবি চালানোর কার্বন ব্যয় ৯ হাজার টাকা, প্রচার ব্যয় ৭ হাজার টাকাসহ আরও অন্যান্য খাতে এটাকা খরচ হয়ে থাকে। অপরদিকে, ছবি নিয়ে আসার খরচ তো রয়েছেই।

দিপালী হলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ইমান আলী জানান, বর্তমানে সুস্থ ধারার ছবি নির্মাণ হলেও সিনেমা হলগুলো থাকছে দর্শক শূন্য।

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ শহরের মানুষের হাতে রয়েছে মোবাইল ফোন সেট। কম্পিউটারের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে বিভিন্ন দৃশ্য লোড করে তা সবাই দেখছেন। বিভিন্ন ছায়াছবির সিডি বাজারের বিভিন্ন দোকানে পাওয়া যায়। পাশাপাশি ডিশ লাইন ঘরে ঘরে। এতে করে দর্শক পাওয়া যাচ্ছে না সিনেমা হলগুলোতে। তাছাড়া বিভিন্ন বিদেশি চ্যানেল বৃদ্ধি পাওয়ায় ঘরে বসে সবই দেখা যাচ্ছে। এ সমস্ত কারণে মার খাচ্ছে সিনেমা হলের মালিকরা।’

সিনেমা হলগুলোর দিকে সরকারের কোনো দৃষ্টি না থাকায় এ শিল্প ধ্বংস হতে বসেছে বলে জানান সিনেমা হলের মালিকরা। অনেকেই এ পেশা বাদ দিয়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। তাই সচেতন মহল মনে করেন, এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে নির্মাতা, সরকার, শিল্পীসহ সবাইকে দৃষ্টি দিতে হবে সিনেমা হলগুলোর দিকে।