দারুণ মেধাবী এবং স্বভাবেও অত্যন্ত মিষ্টি- কে এই সুন্দরী?

দারুণ  মেধাবী এবং স্বভাবেও অত্যন্ত মিষ্টি।বাংলা টেলিভিশন জগত আমূল পাল্টে দিয়েছে তাঁর জীবন। এবার সেই পরিবর্তনের গল্প শুনুন?

৬ মাস আগে যখন ‘স্বপ্ন উড়ান’-এর প্রোমো ভেসে ওঠে টেলি পর্দায়, তখনই নজর কেড়েছিলেন তিনি— রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের কামব্যাক প্রজেক্টের নায়িকা, কে এই সুন্দরী? স্টার জলসা-র এই ধারাবাহিকটি দিয়েই টেলিভিশনে ডেবিউ এবং এই ধারাবাহিকই আমূল পাল্টে দিয়েছে ঐন্দ্রিলা বোসের জীবন। বেশ অনেকটা রাত করেই কথা হল একদিন, শ্যুটিংয়ের ফাঁকে, মিষ্টভাষী ও স্পষ্টভাষী এই নায়িকার সঙ্গে—

পড়াশোনা করতে করতে চলে এলে অভিনয়ে?

ঐন্দ্রিলা: হ্যাঁ, এখন আমি সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছি ইংলিশ অনার্স নিয়ে, পড়তে পড়তেই কাজ করছি। আসলে পি সি চন্দ্র জুয়েলার্সের গোল্ডলাইট ডিভা পেজেন্ট-এ আমি ফার্স্ট রানার-আপ ছিলাম। তার পরেই এই অফারগুলো পাই। প্রথমে একটা অডিশন দিই, তার পরে দ্বিতীয় অডিশন ‘স্বপ্ন উড়ান’ আর সিলেক্ট হয়ে গেলাম। অভিনয়ে এটাই প্রথম। আমি তার আগে অবশ্য নাচ বা আবৃত্তি করতাম আর টুকটাক মডেলিং করতাম। মেন্টালি সেরকম প্রিপারেশন ছিল না যে অভিনয়ই করব।

কেমন লাগছে গোটা ব্যাপারটা?

ঐন্দ্রিলা: ভীষণ এক্সাইটিং, মন দিয়ে খুব ভালবেসে কাজটা করি। হয়তো মনের কোনায় একটা ইচ্ছে ছিল যে কোনওদিন অভিনয় করব। আর সিরিয়ালে তো শুধু অভিনয় নয়, এই এতক্ষণ থাকা, পড়াশোনাটাও অনেকটা হ্যাম্পার্ড হয়। তার মাঝেই কষ্ট করে পড়ছি। আমার পরীক্ষা চলছে ইভেন, এই ২৮ জুন আর ৩০ জুন, দু’দিন পরীক্ষা আছে। সবাই খুব সাপোর্ট করে আর সবার সঙ্গে খুব ভাল একটা বন্ডিংও হয়ে গেছে, একেবারে ফ্যামিলির মতো।

ইংলিশ অনার্স তো খুব কঠিন ব্যাপার…

ঐন্দ্রিলা: হ্যাঁ, এরকম হয়েছে যে পরীক্ষার আগে সারা রাত ঘুম হয়নি আমার পর পর তিন দিন… আমি পড়েছি, এখানে শ্যুটিংয়ের গ্যাপে গ্যাপে… শ্যুট করতে গিয়ে প্রায় ফেন্ট হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে আমার। ওইরকম ভাবেই শ্যুটিং করেছি, পড়েছি, তার পর আবার সকাল আটটায় রওনা দিয়েছি, সকাল ১০টা থেকে পরীক্ষা, দু’খানা পেপার পরীক্ষা দিয়েছি, তার পর আবার ফিরে রাত দুটো অবধি শ্যুটিং করেছি।

প্রথম কাজটা একজন স্টারের সঙ্গে, ভয় পেয়েছিলে?

ঐন্দ্রিলা: যখন প্রথমদিন আমাদের প্রোমো শ্যুটটা করতে যাই, তার আগে আমার রাহুলদার সঙ্গে একদিনই দেখা হয়েছিল। আমার তো একটা টেনশন ছিলই মনের মধ্যে। রাহুলদা খুব ভাল অভিনয় করে, তার পাশে আমি অভিনয় করলে পুরো ব্যাপারটা ভীষণ ‘অভিনয়, অভিনয়’ দেখাবে না তো? সেই নিয়ে খুব প্যানিক হতো। তবে আস্তে আস্তে রাহুলদা একটা কমফর্ট জোন তৈরি করে। আমাকে সব সময়ে গাইড করে। এখন তো ব্যাপারটা অনেকটাই সাবলীল হয়েছে।

তোমার খুব পছন্দের অভিনেতা-অভিনেত্রী কারা?

ঐন্দ্রিলা: আমি দু’জন অভিনেত্রীর কথাই বলব। ঐশ্বর্য রাই বচ্চন আর মাধুরী দীক্ষিত। আমি মাধুরী দীক্ষিতের বিশাল বড় ফ্যান। ছোটবেলা থেকেই আমি নাচ করতে খুব ভালবাসি। মাধুরীর ওই ‘অদা’গুলো, এক্সপ্রেশনগুলো সব সময় চেষ্টা করতাম কপি করার, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে প্র্যাকটিস করার। এই ব্যাপারগুলো ছোট থেকেই ছিল।

এই প্রফেশনে এসে কোনও বিষয়ে মোহভঙ্গ হয়েছে?

ঐন্দ্রিলা: না, সেরকম কিছুই হয়নি। আমি বরঞ্চ আগে যেটা ভাবতাম যে ইন্ডাস্ট্রিতে মানুষজন কেমন হবে? সব সময় ছেলেদের সঙ্গে কাজ করা। আমাদের এখানে মেয়ে বলতে হেয়ার ড্রেসার। তাছাড়া রাত হয়ে গেলে কিন্তু কোনও মেয়েই থাকে না। কিন্তু কক্ষণও একটা সেকেন্ডের জন্যেও নিজেকে ইনসিকিওরড মনে হয়নি। এটা ভীষণ রকম সত্যি। আমি তো জাস্ট ৬ মাস হল এই ইন্ডাস্ট্রির অংশ হয়েছি। তার আগে একটা মাইন্ডসেট ছিল যে, বাবা অতগুলো ছেলের মাঝে কাজ করব, কেউ যদি খারাপ কোনও ইঙ্গিত দেয় বা কিছু কথা বলে। সেই যে একটা মাথায় ছিল, সেই কনসেপ্টটা পুরোপুরি চেঞ্জ হয়ে গেছে। আমার খুব ভাল এক্সপিরিয়েন্স। ভীষণ ফ্রেন্ডলি অ্যাটমসফিয়ার। প্রত্যেকে খুব সাপোর্ট করে, অনেক সময় বকা দেয়। প্রত্যেকদিনই নতুন কিছু শিখি।

তোমার এই অ্যাচিভমেন্টে পাড়ায় বা আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে কেমন রেসপন্স পাও?

ঐন্দ্রিলা: সবাই তো খুব খুশি। মেনলি আমার একজন পিসেমশাই আছে। সে তো আমাকে এমন অদ্ভুতভাবে ট্রিট করে, আমার নিজেরই ভীষণ লজ্জা লাগে। ভাল তো অবভিয়াসলি লাগে। আমার তো বাড়ি মালদা। সেখানে গেলে মা-বাপিদের সবাই জিজ্ঞেস করে আমার সম্পর্কে, সবার মধ্যে ভীষণ রকম হাইলাইটেড হচ্ছি, ভাল লাগে।

বাংলা টেলিভিশন তবে তোমার জীবনটা একেবারেই পালটে দিয়েছে। তো এই ইন্ডাস্ট্রিতে এসে প্রেমে পড়লে কি?

ঐন্দ্রিলা: সেরম কিছু না, তবে হ্যাঁ খুব ভাল বন্ধু হয়েছে আমার এখানে এসে, অনেকের সঙ্গে খুব ভাল বন্ডিং তৈরি হয়েছে।

যখন শ্যুটিং থাকে না বা পড়াশোনার চাপ নেই, তখন কী করো মানে ফেভারিট পাসটাইম?

ঐন্দ্রিলা: আগে এটা করতাম না, এই প্রফেশনে আসার পরে এখন আমি প্রচুর বাংলা বই পড়ি, বাংলা ভাষাটাকে রপ্ত করার জন্য। কেন না, ক্লাস টেনের পর থেকে বাংলাটা একেবারেই পড়া হতো না। আমার কোনও কিছুই বাংলায় ছিল না, তার পরে গ্র্যাজুয়েশনে‌ এসে আবার ইংলিশ অনার্স। তাই বাংলার উপর থেকে গ্রিপটা কমে যাচ্ছিল। তাই এখন বাংলা গল্পের বই পড়া, রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনা, থিয়েটার দেখা… এইগুলো এখন ভীষণ রকম চর্চা করি। অনেক সময় আমার কোনও চরিত্র ভাল লাগল, সেই চরিত্রের মতো করে ডায়লগ বলার চেষ্টা করি। এই ইউনিটে আরও দু’জন আছে, তারাও নতুন, আমরা একসঙ্গে প্রচুর ডিসকাস করি অভিনয় নিয়ে, কীভাবে আরও একটু ভাল করা যায়, চর্চার মধ্যেই থাকি।

মানে তোমরা শ্যুটিংয়ের বাইরে আরও ডিসকাস করো কীভাবে ইমপ্রুভ করা যায়?

ঐন্দ্রিলা: হ্যাঁ আমাদের ডিরেক্টর এবং প্রোডিউসার সুশান্তদা আমাদের তিনজনকে, যে তিনজন আমরা নতুন, তাদের বার বার বলেন যে, তোরা ডিসকাস করবি, চর্চা করবি যাতে যখন সিনটা করতে যাবি, তখন যেন না মনে হয় যে অভিনয় করছিস। এছাড়া সিদ্ধার্থদা, সিদ্ধার্থ পাল, আমার চ্যানেলের যারা ইপি-রা রয়েছে, রেশমিদি, লগ্নাদি, ওরা আমাকে প্রচণ্ড সাপোর্ট করে, প্রচণ্ড হেল্প করে। হয়তো খুব বকল কোনও কারণে, তার পরে ভালবেসে এত সুন্দর করে বোঝায়… আজ আমি সিনে দাঁড়িয়ে যতটুকু ডায়লগ বলছি বা যতটুকু অভিনয় করছি এই ভালবাসাগুলো ছাড়া, এদের সাহায্য ছাড়া আমি পারতাম না।-এবেলা