দিল্লিতে নারী হচ্ছে পুরুষ, পুরুষ হয়ে যাচ্ছে নারী!

দিল্লিতে হাসপাতালে অপারেশন করিয়ে কোনো নারী হয়ে যাচ্ছেন পুরুষ। আবার কোনো পুরুষ হয়ে যাচ্ছেন নারী। এদের সংখ্যা খুব বেশি না হলেও আগের চেয়ে এর হার বেড়েছে অনেক।

সংশ্লিষ্ট একজন চিকিৎসক বলেছেন, আগে বছরে এমন অপারেশন করাতেন দু’একজন। এখন প্রতি মাসেই তিন থেকে চারজন এমন অপারেশন করান। এ খবর দিয়েছে অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়া।

এতে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক দিল্লির কেন্দ্রীয় অঞ্চলে অবস্থিত লোক নায়েক হাসপাতালে গিয়ে দেখতে পান, এমন অপারেশন করানোর জন্য অপেক্ষমাণ ছিলেন ৫ জন। এমন প্রবণতা বাড়ছেই। অপেক্ষারত ওই ৫ জনের মধ্যে ছিলেন দু’জন প্রকৌশলী ও একজন মেডিকেল পড়ুয়া। হাসপাতালটির প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডাক্তার পিএস ভাণ্ডারি।

তিনি বলেছেন, প্রকৌশলী ও মেডিকেল পড়ুয়ারা এসব করাতে আসছেন এতে বিস্ময়ের কিছু নেই। বেশির ভাগই আসছেন মধ্যবিত্ত পরিবারের যুবক বা যুবতী। মানসিক রোগ বিষয়ক পরামর্শক ডাক্তার রাজিব মেহতা বলেছেন, ১০ বছর আগে বছরে আমরা এমন ঘটনা বা রোগী পেতাম একটা বা দুটো। কিন্তু এখন প্রতি বছরে তিন থেকে চারজন এমন রোগী পাচ্ছি।

সম্প্রতি এমন একজন যুবতীকে প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। তার নাম ইলা (পরিবর্তিত নাম)। নয়ডার ২৭ বছর বয়সী যুবতী তিনি। তিনি জন্মেছেন একজন নারী হয়ে। কিন্তু নারীদের মতো পোশাক পরতে তার ভালো লাগে না। মেয়েরা যেভাবে ফ্রক পরে, পুতুল নিয়ে খেলা করে তা তার পছন্দ নয়।

ইলা বলেছেন, যখন আমাকে এসব জোর করে পরানো হতো তখন ফ্রকের সঙ্গেই যেন যুদ্ধ করতাম। এসব মেনে নিতে পারতেন না বাবা-মা। তারা মনে করতেন আমি এসব করছি ইচ্ছা করে। এ নিয়ে বাবা মা’র সঙ্গে সারাক্ষণই ঝগড়া হতো। এতে বিষণ্নতায় ভুগতে থাকি আমি। এখন থেকে তিন বছর আগে এক পর্যায়ে আমি অতিরিক্ত ঘুমের বড়ি খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করি। তখন বাবা-মা দ্রুত আমাকে নিয়ে যান স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালে। সেখানে আস্তে আস্তে সুস্থ করে তোলা হয় আমাকে। ডাক্তাররা বলেন প্রচণ্ড উদ্বেগ, বিষণ্নতা, মাদক ও নিকোটিনের ওপর নির্ভর হয়ে পড়েছি আমি।

ওই সময়ে ইলা দিনে অর্ধেক বোতলের বেশি হুইস্কি এবং কমপক্ষে ২০টি সিগারেট পান করতেন। ইলা বলেন, আমার মনে হতে থাকে আমার নারী দেহের ভিতর একটি ছেলে বাসা বেঁধেছে। এ অবস্থায় ডাক্তাররা তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। তাতে দেখা যায় তিনি জেন্ডার আইডেনটিটি ডিজঅর্ডারে (জিআইডি) ভুগছেন। এটা হলো একজন মানুষের শারীরিক লিঙ্গগত পরিচয় ও তার ভিতরে নারী বা পুরুষ হিসেবে নিজেকে প্রকাশের ক্ষেত্রে সংঘাতময় অবস্থা।

একপর্যায়ে ইলার মা তাকে অনুমতি দেন। তার ওপর প্রয়োগ করা হয় বিষণ্নতারোধী ওষুধ। তাকে একজন পুরুষের মতো ভূমিকা রাখতে উৎসাহী করা হয়। কয়েক মাস ধরে তাকে দেয়া হয় টেস্টোস্টেরন (পুরুষের হরমোন) থেরাপি। এরপর মুম্বাইয়ের এক হাসপাতালে তার অপারেশন হয়। তারপরই ইলা হয়ে যান একজন পুরুষ। তবে পুরুষ হিসেবে তার নাম কি তা প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয় নি।

একজন মনোবিজ্ঞানী বলেছেন, এই পরিবর্তন বিষয়ক অপারেশনের পর আর আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার কোনো পথ নেই। তাই এক্ষেত্রে রোগীকে বলা হয় একটি পথ বেছে নিতে। হয়তো তিনি নিজে নারী হবেন না হয় তিনি পুরুষ হবেন। অপারেশনের ৬ মাস আগে তাদেরকে এ সুযোগ দেয়া হয়। এমন অপারেশন করানোর আগে একজন রোগীর মানসিক অবস্থা পুরোপুরি যাচাই করে দেখা হয়।

ম্যাক্স হাসপাতাল সাকেটের মানসিক স্বাস্থ্য ও আচরণগত বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ডাক্তার সমীর মালহোত্রা। তিনি বলেন, তিনিও এমন অপারেশন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে পর্যবেক্ষণ করেছেন।

উল্লেখ্য, এমন অপারেশন কোনো বেসরকারি হাসপাতালে করাতে গেলে সেখানে খরচ অনেক বেশি। তবে এর পরিমাণ কত তা জানা যায়নি। এমজমিন