দুই তরুণীকে ধর্ষণের ভিডিও ক্লিপ উদ্ধার

ধর্ষক সাফাত আহমেদের মোবাইল স্ক্যান করে বনানীর রেইনট্রি হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী ধর্ষণের ভিডিও ক্লিপ উদ্ধার করেছেন গোয়েন্দারা। একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা যুগান্তরকে শুক্রবার রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, দুই তরুণীকে মাঝখানে পার্টিশন দেয়া দুই রুমে ধর্ষণ করা হয়েছিল। পার্টিশনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন নিজের স্মার্টফোন দিয়ে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে বলে স্বীকার করেছে। পরে ভিডিও ক্লিপটি সে শেয়ারইটের মাধ্যমে সাফাতকে দেয়। সাফাত গ্রেফতার হওয়ার আগে ভিডিও ক্লিপটি তার ফোন থেকে মুছে দিয়েছিল। গোয়েন্দারা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাফাতের মোবাইল ফোন থেকে ভিডিও ক্লিপটি উদ্ধার করেছেন।

এদিকে বন্ধুর জন্মদিনের পার্টিতে বনানীর দ্য রেইনট্রি হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্ষিত দুই শিক্ষার্থীর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দিচ্ছে একটি চক্র।

এ নিয়ে দুই ছাত্রী বলেছেন, তাদের সামাজিকভাবে হেয় করার পাশাপাশি মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব ছবি ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। যেসব ছবি দুর্বৃত্তরা ছড়িয়ে দিচ্ছে তার মধ্যে অনেক ছবি তাদের নয়। ফটোশপে কারসাজি করে এসব বানানো। এ নিয়ে তথ্য ও প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে মামলা করার কথা ভাবছেন তারা। আর পুলিশ বলছে, যারা এ ধরনের কাজ করছে তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। এদিকে রিমান্ডের প্রথম দিন নাঈম আশরাফ ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন।

ধর্ষণ মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) আসমা সিদ্দিকা মিলি বলেন, যারা দুই তরুণীর ছবি ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ভুক্তভোগী এক তরুণী জানান, ছবি বিকৃত করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার পেছনে একটি উদ্দেশ্য হচ্ছে সামাজিকভাবে হেয় করা, সম্মানহানির চেষ্টা করা। আরেকটি উদ্দেশ্য হল মানসিকভাবে দুর্বল করে দেয়া। কারা এ কাজ করছে এবং এর উদ্দেশ্য কী এটা সবাই বোঝে। নানাভাবে হুমকি দিয়ে কাজ না হওয়ায় একটি চক্র এ কাজ করছে। আমরা এখন আইনের আশ্রয় নেব।

ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি সাফাত আহমেদের বাবা আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ সেলিম বিভিন্ন গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, সেদিন রাতে, আগে ও পরে কী কী করেছেন, আরও অনেক ছবি পাওয়া যাবে।

এ বিষয়ে ধর্ষিত এক ছাত্রী বলেন, ফেসবুকে কে বা কারা আপত্তিকর ছবি প্রকাশ করছে, কারা কোন স্বার্থে এসব ছবি জোগান দিয়ে সহযোগিতা করছে তা তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে। এ কারণেই আমরা আইনের আশ্রয় নেয়ার বিষয়টি চিন্তা করছি।

বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ২৮ মার্চ দুই তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ ও রেগনাম গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ হোসেন জনির ছেলে সাদমান সাকিফ বৃহস্পতিবার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে মামলার তিন আসামি নাঈম আশরাফ (প্রকৃত নাম আবদুল হালিম), সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন ও বডিগার্ড রহমত আলী রিমান্ডে আছেন। বুধবার মুন্সীগঞ্জের লৌহজং থেকে গ্রেফতারের পর বৃহস্পতিবার নাঈম আশরাফকে ৭ দিনের রিমান্ডে নেয়ার অনুমতি পেয়েছে পুলিশ।

সাফাতের বিশ্বস্ত সহযোগী নাঈম : মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, রিমান্ডের প্রথম দিনে (শুক্রবার) নাঈম আশরাফ ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন। স্ত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্য চলাকালীন সময়ে সাফাতের সঙ্গে পরিচয় হয় নাঈমের। সাফাতের পরিবারের এক সদস্যের মাধ্যমে তাদের পরিচয় হয়। নাঈম বিপর্যস্ত সাফাতকে সঙ্গ দেয়া শুরু করেন। নাঈমের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর সাফাত আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এমনকি সাফাতের বিভিন্ন অপকর্মের বিশ্বস্ত সহযোগী হয়ে ওঠেন নাঈম। প্রায়ই তারা এ ধরনের পার্টির আয়োজন করে তরুণীদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতেন। ওই দিনের ঘটনাটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত। ঘটনার দিন সাফাত বিকালেই রেইনট্রিতে যান। সন্ধ্যার দিকে ওই হোটেলে যান নাঈম। সেখানে তারা সন্ধ্যার পর থেকেই মদ খাওয়া শুরু করেন। পার্টি শেষ করে দুই ছাত্রীকে আটকে রেখে রাতভর ধর্ষণ করেন। সাদমান সাকিফ তখন হোটেলেই অবস্থান করছিলেন। সাকিফ ধর্ষণ না করলেও পুরো ঘটনায় তার সমর্থন ও সহযোগিতা ছিল।

নাঈম আশরাফ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেবেন কিনা এ বিষয়ে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘সে রিমান্ডের প্রথম দিনেই ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে। রিমান্ডে সে অনেক তথ্য দিচ্ছে। এগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এ কারণে একটু সময় প্রয়োজন। ঘটনার সময় নাঈম সবচেয়ে বেশি বর্বর আচরণ করেছে।’

২৮ মার্চ বন্ধুর সঙ্গে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়ে বনানীর ‘দ্য রেইনট্রি’ হোটেলে ধর্ষণের শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া দুই তরুণী। ওই ঘটনায় ৬ মে রাজধানীর বনানী থানায় আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ (সিরাজগঞ্জের আবদুল হালিম) ও রেগনাম গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ হোসেন জনির ছেলে সাদমান সাকিফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন ও বডিগার্ড রহমত আলীর বিরুদ্ধে মামলা করেন তারা। বৃহস্পতিবার সাফাত ও সাকিফ ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।