দু’মুঠো ভাত জোগাড় হলেই ঈদ

কয়েক দিন ধরে হঠাৎ অঝোর ধারায় বৃষ্টি শুরু হয়ে ঝরছে দীর্ঘ সময়। প্রকৃতির নিয়মের আবর্তে এই বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেই দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদ। আর শপিংমলগুলোতে উচ্চবিত্তের হাকডাকে বুঝা যাচ্ছে ঈদ এসেছে।

কিন্তু ঈদের যথাযথ অর্থ মলিন হয়ে গেছে খেটে খাওয়া মানুষদের কাছে। দু’বেলা দু’মুঠো ভাত জোগাড় করতে যাদের সকাল-সন্ধ্যা অপেক্ষা করতে হয়। তাদের বেলায় ঈদ আনন্দ খাটে না, বরং দু’বেলা খাবার জোগাড় করতে পারলেই যেন ঈদের আনন্দ বোধ হয় তাদের কাছে।

জীবনযুদ্ধে আনন্দ নামের অনুভূতি অনেক আগেই হারিয়েছেন হারুন। ঈদের আনন্দ গত ১০ বছরেও তাকে স্পর্শ করেনি। দৈন্যতা তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। দু’ছেলে আর স্ত্রী আসমাকে নিয়ে সংসার নামক সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছেন। এখন তার আশা ছেলেগুলো বড় হয়ে সংসারের হাল ধরবে। তখন তার ঘরেও ঈদের চাঁদ হাসির ঝিলিক দিবে।

কথা হয় হারুন মিয়ার (৫০) সাথে। বাড়ি চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে। গত ১০ বছর ধরে রমজান আসলেই তুকমা- ইসুপগুল বিক্রি করতে কুমিল্লায় চলে আসেন। সারাদিন বিক্রি করে রাতে ঘুমান কুমিল্লা রেলস্টেশনে। বেশিরভাগ সময় হারুন মিয়া তুকমা –ইসুপগুল বিক্রি করেন শহরের টাউনহল গেইটের পাশে। ছেলে সৌরভ ও সবুজ বিক্রি করে নিউমার্কেট ও পূবার্লী ব্যাংকের পাশে। দিনভর যা বিক্রি করেন তা দিয়ে সংসারের অন্ন জোগার হয় না। আর এবছর বৃষ্টিও তার সাথে বিরূপ প্রভাব দেখিয়েছে।

বাবা হারুনের কাজে সহযোগীতা করে কিশোর সবুজ। অর্থকষ্টের কারণে পড়ালেখা ছেড়ে দিয়েছে। ছোট ছেলে সৌরভ তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। হারুনের স্বপ্ন, পড়া-লেখা করে সবুজ অনেক বড় হবে।

ঈদ প্রসঙ্গে হারুন বলেন, ‘ভাই দু’বেলা দু’মঠো ভাত খেতে পারলেই আমাদের ঈদ’। আলাদা করে জামা কাপড় নিয়ে ঈদ করার ভাগ্য আমাদের নেই।

গতকাল শনিবার (২৪ জুন) রাত সাড়ে ১০টায় বাবা হারুন মিয়ার দু’পাশে শুয়ে থাকা সবুজ আর সৌরভ গুনছিল আকাশের তারা। বাবা হারুন দু’বাহুতে জড়িয়ে যেন নিজের দৈন্যতা ঢাকার এক প্রানান্তকর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। সৌরভ আর সবুজ বাবার আদর পেয়ে মিথ্যা সান্তনায় স্বপ্ন সাজিয়ে যাচ্ছিল।

স্বপ্নের মোহে আঘাত লেগে হাতকচিয়ে উঠে পড়ে রাত সাড়ে ১১টার ট্রেনের হুইসেলে। এভাবে প্রতিদিনই স্বপ্ন দেখে আর দৈন্যতার ট্রেনের হুইসেলে ভেঙ্গে যায় তাদের আকাশের তারাগুনার স্বপ্ন।