দেশে সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও আসছে ভারতীয় গরু, শঙ্কায় খামারিরা

দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে বছরে যে পরিমাণ গরু প্রয়োজন হয়, আগে তার বড় একটি অংশ অবৈধ পথে আসতো পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে। বছরের অন্যান্য সময় সুযোগ বুঝে আনা হলেও কুরবানির ঈদের(ঈদ-উল আযহা) সময়ে সবচেয়ে বেশি গরু আনা হয় বাংলাদেশে। কিন্তু সীমন্তে কড়াকড়ি ও সরকারি নীতিতে গত কয়েক বছর ভারতীয় গরু আনা কমে যাওয়ায় নিজস্ব সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে বাংলাদেশের।

প্রযোজনীয় গরু উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। গরুর খামার তৈরি ও দুধের যোগান দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত আর্থিক নীতি সহায়তা দিয়েছে। আগে খামারে বাণিজ্যিক ঋণ দেয়া হলেও এখন কম সুদের কৃষি ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়াও সুদবিহীন ইইএফ ঋণ দেয়া হয়েছে। ফলে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় অনেক গরুর খামার। যার বড় প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে গত বছরের কুরবানির ঈদে। এসময়ে ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ থাকায় দেশিয় ভালো মানের গরু কোরবানি হয়েছে। দামও ছিল তুলনামূলক হাতের নাগালে।

প্রণিসম্পদ অধিদপ্তরের দেয়া পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর কোরবানি উপলক্ষে সারা দেশে এক কোটি পাঁচ লাখ গবাদিপশু বিক্রি হয়। এবার এক কোটি ১৫ লাখের মতো গবাদিপশু দরকার হবে কোরবানির সময়। অথচ সেই জায়গায় কোরবানিযোগ্য পশু আছে এক কোটি ১৫ লাখ ৫৭ হাজার, যা এখন দেশের খামারি ও গৃহস্থদের ঘরে রয়েছে।

অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আমিষের চাহিদা মেটাতে দেশে বছরে প্রায় দুই কোটি ৩১ লাখ ১৩ হাজার গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া জবাই হয়। এর প্রায় ৫০ ভাগ জবাই হয় কোরবানির ঈদের সময়। যার ৯০ শতাংশই এখন দেশিয়ভাবে মেটানো সম্ভব।

তারই ধারাবাহিকতায় এবারও মুনাফার আশায় সারা দেশের বাণিজ্যিক খামারিরা ও পারিবারিকভাবে ২ থেকে ১০টি গরু পরিচর্যাকারীরা গরু লালন-পালন করছেন। কিন্তু এবার অনেক আগ থেকেই সীমান্ত জেলা নওগাঁ, চাঁপাই, রাজশাহী, কুষ্টিয়া ও যশোরের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার গরু অবৈধভাবে প্রবেশ করছে বাংলাদেশে।

গরু ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সীমান্ত পার করে আশপাশের বাড়িতে রাখা হচ্ছে গরুগুলো। পরবর্তীতে তা দেশিয় গরু হিসেবে চলে যাবে দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারে। ভারতে গরু জবাই নিষিদ্ধ হওয়ায় অল্প দামে বিক্রি করা ছাড়া তাদের আর উপায় নেই। আর কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে এই সুযোগটাই নিচ্ছে চোরকারবারিরা।

সীমান্ত সূত্রগুলো জানিয়েছে, রাতের বেলা গরু আসছে বাংলাদেশে। কয়েকটি চেকপোস্ট দিয়ে গরু আনা হচ্ছে অনুমতি নিয়ে। এতে প্রতি গরু ৫০০ টাকা কাস্টমসের মাধ্যমে পাচ্ছে সরকার। কিন্তু অবৈধ পথে যে পরিমাণ গরু আসছে, তার কোনো হিসাব নেই কারও কাছে।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত দিয়েই বেশি আসছে গরু। সরকারি হিসেবে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ১ হাজার ৬৭০টি গরু এসেছে অনুমোদিত চেকপোস্ট দিয়ে। কুড়িগ্রাম ও দিনাজপুরে ভারতীয় গরু আসছে নদী পথে।

শুধু বাণিজ্যিকভাবে সারা দেশে সাড়ে ২২ হাজার খামার গরু উৎপাদন কাজে জড়িত আছে। ফলে ভারত থেকে গরু আনার প্রয়োজন হবে না। আর এসময় বন্যা হওয়ায় গরুর চাহিদাও কম থাকবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে ভারত থেকে গরু আসলে ব্যবসায় লস হওয়ার ঝুঁকি দেখছেন তারা।

খামারিদের দাবি, ভারত থেকে গরু আনা পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া। এতে দেশিয় অর্থনীতি শক্তিশালী ও কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।