ধর্ষণের সুবিচার পাচ্ছে না কুমারী মা, মামলা নেয়নি পুলিশ

জামালপুরের মেলান্দহে ১৫ বছরের একজন ধর্ষিতা পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়ে ১৮ দিন পরেও ধর্ষণের বিচার দাবিতে মামলা করতে পারেনি। ওই কুমারী মা তার শিশু সন্তানকে নিয়ে গত ১৮ দিন ধরে সুবিচারের দাবিতে স্থানীয় ইউপি চেযারম্যান, মেম্বার ও এলাকার গণ্যমান্য মাতব্বরদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।

এ ছাড়াও কুমারী মাতাটি মেলান্দহ থানায় লিখিত অভিযোগ করলেও পুলিশ অভিযোগটি আজও আমলে নেয়নি। অপরদিকে অভিযুক্ত ধর্ষক একই গ্রামের দুই সন্তানের জনক হারুন অর রশিদ পালিয়ে বেড়ালেও তার প্রভাবশালী স্বজনরা নবজাতকের পিতৃপরিচয় ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

অভিযোগে জানা গেছে, মেলান্দহ উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের পাছ পয়লা গ্রামের দিনমজুর মফিজ উদ্দিনের কিশোরী কন্যা আমেনা বেগমকে গত বছর ৯ ডিসেম্বর নিজ বাড়িতে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে একই গ্রামের প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য দুই সন্তানের জনক হারুন অর রশিদ। এ ঘটনার পর ধর্ষিতার দিনমজুর পিতা তার কন্যাকে ধর্ষণের ব্যাপারে অভিযোগ এনে ধর্ষকের পরিবার ও স্থানীয় গ্রাম মাতব্বরদের কাছে বিচার প্রার্থনা করেন। কিন্তু ধর্ষকের পরিবারটি স্থানীয়ভাবে অত্যান্ত প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ দিনমজুর কন্যা ধর্ষণের বিচার করেনি।

এরপরও ওই ধর্ষক হারুন অর রশিদ বিয়ের প্রলোভনে মেয়েটিকে দিনের পর দিন ধর্ষণ করে। এরই একপর্যায়ে মেয়েটি অন্ত:সত্ত্বা হয় এবং গত ২৯ সেপ্টেম্বর আমেনা বেগম তার পিত্রালয়ের কুড়ে ঘরে একটি পুত্র সন্তান জন্ম দেয়। এ ঘটনার পর ধর্ষিতার দিনমজুর পিতা মফিজ উদ্দিন তার কুমারী কন্যাকে ধর্ষণের সুবিচার দাবিতে এবং নবজাতকের পিতৃ পরিচয়ের জন্য স্থানীয় ইউপি চেযারম্যান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মনোয়ার হোসেনসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের কাছে সুবিচার প্রার্থনা করেন।

এ সময় ক্ষিপ্ত হয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ গ্রাম্য মাতব্বররা ধর্ষিতা মেয়েটিকেসহ তার শিশু সন্তানকে নিয়ে গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার জন্য হুমকি প্রদান করে। এতে নিরুপায় হয়ে দিনমজুর মফিজ উদ্দিন তার কন্যাকে ধর্ষণের সুবিচার দাবিতে মেলান্দহ থানায় গিয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। কিন্তু পুলিশ আজও অভিযোগটি আমলে না নেয়নি। এ জন্য ধর্ষিতা কুমারী মাতা তার শিশু সন্তানকে নিয়ে সুবিচারের দাবিতে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। অপরদিকে ধর্ষকের প্রভাবশালী পরিবারের সদস্যরা ধর্ষিতা কুমারী মাতাকে অভিযোগ তুলে নিতে তার পরিবারকে দফায় দফায় প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করছে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবুল খান জানান, কুমারী মাতাকে ধর্ষণের বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মিমাংসা করার আশ্বাস দিয়ে মাহমুদপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মনোয়ার হোসেন একে একে ১৭টি দিন সময়ক্ষেপণ করেছেন। ধর্ষক প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য হওয়ায় দিনমজুরের ধর্ষিত কন্যার বিচার কেউ করেনি এবং পুলিশও মামলা নেয়নি।

মেলান্দহের মাহমুদপুর ইউপি সদস্য মনোয়ার হোসেন জানান, কুমারী মাতাকে ধর্ষণের বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মিমাংসা করার জন্য কয়েক দফা চেষ্টা করেছি। ধর্ষকের প্রভাবশালী পরিবারের সদস্যদের হুমকি ধমকির কারণে মিমাংসা করা সম্ভব হয়নি। মাহমুদপুর ইউপি চেযারম্যান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ জানান, কুমারী মাতাকে ধর্ষণের বিষয়টি রহস্যজনক। প্রকৃত অপরাধী কে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবুও বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মিমাংসার চেষ্টা চলছে।

মেলান্দহ থানার ওসি মাজহারুল করিম জানান, এ ব্যাপারে থানায় কেউ কোন অভিযোগ করেছে কিনা তা জানা নেই। তবে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বিষয়টি মিমাংসা করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে শুনেছি। কেউ অভিযোগ করলে প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেলে মামলা নেওয়া হবে।