ধেয়ে আসছে ‘মোরা’ : উপকূলে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা

উপকূলে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড়, ‘মোরা’র প্রভাবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। উপকূলকাসীকে সতর্ক থেকে প্রস্তুতি নেয়ার পরামর্শও দিয়েছে তার। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে রাজধানীতেও ভারী বৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এই বৃষ্টি থাকতে পারে টানা কয়েকদিন।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আরিফুর রহমান ‘বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোরা ঢাকায় আঘাত না হানলেও এর প্রভাবে ঢাকায় পাঁচ ছয়দিন মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। বেশ কয়েকদিনের টানা গরমে ঝড়টি প্রথমে নি¤œচাপে রূপ নিলেও এখন সেটি ঘনীভূত হয়ে ঝড়ে রূপ নিয়েছে।’

কয়েকদিন আগেও বৃষ্টিহীন ঢাকার তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি অতিক্রম করেছিল। এরপর বেশ কয়েকদিন পর ঢাকায় নি¤œচাপের প্রভাবে হালকা বৃষ্টিপাত শুরু হয়। গত শুক্রবারের এক পশলা এবং রবিবারের মাঝারি বৃষ্টি ঢাকার উত্তাপ কমাতে পারেনি খুব একটা। তবে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বৃষ্টিপাত তাপমাত্রা অনেকটাই কমাবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

উপকূলে ব্যাপক প্রস্তুতির পরামর্শ

ঢাকায় ভারী বৃষ্টি হলে মোরার প্রভাব চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূলে কী হবে?- আবহাওয়াবিদ আরিফুর রহমান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি কেন্দ্রের কাছের গতি ঘন্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটারের মধ্যে ওঠানামা করছে। এটি যতই সামনে আসবে এর গতি আরও বেশি হবে। যেহেতু এটি একটি মাঝারি থেকে মধ্য বড় আকারের ঘূর্ণিঝড় সেহেতু এটির আঘাতে উপকূলে বেশ বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতি আমরা আশঙ্কা করছি।’

এই আবহাওয়াবিদ বলেন, ক্ষয়ক্ষতি বলতে বন্দরের আশেপাশের বাড়িঘর, গাছপালা পশুপ্রাণীর ক্ষতি হতে পারে। যেহেতু আঘাত বন্দরে হানবে সেহেতু বন্দরের আশেপাশে ক্ষতিটা একটু বেশি হবে। তবে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় স্বাভাবিকভাবে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। যা স্বাভাবিক থেকে দুই থেকে আড়াইফুট বেশি উচ্চতার হতে পারে।

‘ঝড়টি আঘাত হানবে আগামিকাল সকালে সেই হিসেবে এখন থেকে ঝড় মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করে রাখা প্রয়োজন। এই জন্য হাতের কাছে শুকনো খাবার অর্থাৎ চিড়া, মুড়ি, গুড় সংরক্ষণ করে রাখতে হবে’ -বলছেন আরিফুর রহমান।

মঙ্গলবার অপ্রয়োজনে বাসার বাইরে যেতে বারণ করেছেন আবহাওয়া কর্মকর্তারা। তিনি বলেন, ‘আগামীকাল ঝড়ের সাথে তীব্র ঝড়ো বাতাস বয়ে যেতে পারে। যার ফলে গাছের ডাল, বৈদ্যুতিক তার ছিটকে গায়ের উপর পড়তে পারে।’

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর এবং মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত দেখে যেতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া বার্তায় বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় মোরা এর প্রভাবে উপকলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ভোলা, বরিশাল জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে চার থেকে পাঁচফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

এতে আরও উল্লেখ করা হয় ঘূর্ণিঝড় মোরা অতিক্রমকালে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালি, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুণা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর জেলাসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘন্টায় ৬২ থেখে ৮৮ কিলোমিটার গতিতে দমকা হাওয়া থেকে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

রাজধানীতে বৃষ্টিপাত কখন

এই বৃষ্টি কখন শুরু হবে-জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ আরিফুর রহমান বলেন, ‘আজ রাত বা আগামীকাল সকাল থেকেই ঢাকার আবহাওয়ার চিত্র বদলে যাবে।’ তিনি বলেন,‘ যেহেতু এটি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে আঘাত হানবে সেহেতু এর প্রভাবে ঢাকা ছাড়াও এর পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে বৃষ্টি হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।’

আরিফুর রহমান বলেন, ‘ঝড়ের প্রভাবে পাঁচ থেকে ছয় দিন অনায়সে ঢাকায় বৃষ্টি হবে। এই বৃষ্টির রেশ থেকে যাবে আরও কয়েকদিন পর্যন্ত।’ এই বৃষ্টির কারণে আগামী মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত তাপমাত্রা সহনীয় থাকবে বলে জানান এই আবহাওয়াবিদ। তবে জুনের শেষ দিকে রাজধানীর উপর দিয়ে দুইটি তাপদাহ বয়ে যেতে পারে।