নদী সমস্যার জট খুলতে বৈঠকে বসছেন মোদি-মমতা

নদী সমস্যার জট খুলতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। বুধবার বিকেলে কলকাতা থেকে রাজধানী নয়াদিল্লিতে পৌঁছেছেন মমতা। বৃহস্পতিবার বিকেলে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক বসবেন তিনি।

বৈঠকের পর শুক্রবার বিকেলে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গেও বৈঠক করবেন পশ্চিমবঙ্গের এই মুখ্যমন্ত্রী। বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে সর্বসম্মতভাবে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী ঠিক করতেই এই বৈঠকে বসবেন সোনিয়া-মমতা। দিল্লিতে আরও কয়েকটি বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে তার।

দিল্লি সফরের ফাঁকেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য সময় চেয়েছিলেন মমতা। সেই প্রেক্ষিতেই প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে বৃহস্পতিবার বিকেলে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।

কলকাতা ছাড়ার আগে বুধবার নেতাজী সুভাস চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মমতা বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে সময় চেয়েছি। গঙ্গা ভাঙন সমস্যা এবং বেশ কিছু নদী সমস্যা রয়েছে, যেখানে নদীর পাড়ে বসবাসকারী বাসিন্দারা অনেক সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হবে।

নদী সমস্যা ছাড়াও রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও রাজ্যের বিভিন্ন আর্থিক দাবি নিয়েও সরব হওয়ার কথা জানান মমতা। তিনি বলেন, আমি যখনই দিল্লি যাই, কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করি। এটা হল দুই সরকারের সাক্ষাৎ।

তবে মোদি-মমতার বৈঠকে সবচেয়ে গুরুত্ব পেতে চলেছে নদী সমস্যা। একটি সূত্র বলছে, চুর্নী নদীর দূষণ, আত্রাই নদীর ওপর বাংলাদেশের বাঁধ দেয়া এবং পুনর্ভবাসহ একাধিক নদী সমস্যার বিষয় উঠে বৈঠকে উঠে আসতে পারে। আলোচনায় তিস্তার বিকল্প হিসেবে তোর্সাসহ অন্য নদীগুলোর পানি বণ্টন নিয়েও আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বাংলাদেশের কুষ্টিয়ার পদ্মা নদী থেকে মাথাভাঙা নদীর উৎপত্তি হয়ে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার মাজদিয়াতে এসে দু’টি প্রবাহে বিভক্ত হয়েছে। এর একটি হল চুর্নী নদী; যেটি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার মাজদিয়া, শিবনিবাস, হাঁসখালি, বীরনগর, আরংঘাটা, রানাঘাট, চাকদহ দিয়ে প্রায় ৬০ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়ে হুগলি নদীতে মিশেছে।

দীর্ঘদিন ধরেই এই নদী দূষিত করার অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। চলতি মাসের গোড়ার দিকেই নদীয়া জেলায় এক প্রশাসনিক বৈঠকে কৃষ্ণগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস চুর্নী দূষণ নিয়ে মমতার কাছে অভিযোগ করেন।

তৃণমূলের বিধায়ক এ দূষণের জন্য সরাসরি বাংলাদেশের দিকে আঙুল তোলেন। অভিযোগ পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী তা মেটানোর আশ্বাস দেন, যদিও এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ তোলেন মমতা। চুর্নীর পাশাপাশি ‘আত্রাই’ নিয়েও সরব হতে পারেন মমতা। আত্রাই’র ওপর বাংলাদেশের দেয়া বাঁধ নিয়ে সম্প্রতি সরব হয়েছেন মমতা। বাঁধ দেয়ার ফলে উত্তরবঙ্গে মানুষ পানি পাচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের এই মুখ্যমন্ত্রী।

আলোচনা হতে পারে তোর্সাসহ বিকল্প নদীগুলোকে নিয়েও। গত এপ্রিলের গোড়ার দিকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের সময় তিস্তার পানি বণ্টনের বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশকে তোর্সাসহ বিকল্প নদীর পানি দেয়ার প্রস্তাব দেন মমতা। যদিও ঢাকা মমতার সেই প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি।

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারও মমতার দেয়া বিকল্প প্রস্তাবের বদলে তিস্তা সমস্যা মেটানোর দিকেই জোর দেয়। ফলে তিস্তা নিয়ে মমতার ওপর ক্রমশ চাপ বাড়ছে। এ কারণেই এবার কেন্দ্রের ওপর পাল্টা চাপ বাড়ানোর কৌশল হিসেবে আত্রাই ও চুর্নীকে সামনে আনতে চাইছেন মমতা।

উল্লেখ্য, মমতার বিরোধিতার মুখে পড়ে বিগত কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারও এই চুক্তি সম্পাদন করতে পারেনি। বর্তমান এনডিএ সরকারও বাধার মুখে পড়েছে। এমন অবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারও চাইছে একটি গ্রহণযোগ্য পথ খুঁজে, সবার স্বার্থ রক্ষা করে এসব সমস্যা মিটিয়ে ফেলা। সেদিক থেকে মোদি-মমতার এই বৈঠক অনেক জট খুলে দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।