নব্য জেএমবির আত্মঘাতী স্কোয়াডে জামায়াত-শিবিরপন্থী

জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির আত্মঘাতী স্কোয়াডের অধিকাংশ সদস্য জামায়াত-শিবিরপন্থী। শুধু তাই নয়, বর্তমানে যারা সংগঠনটির নেতৃত্ব দিচ্ছে তাদের বেশির ভাগই ইসলামী ছাত্রশিবির থেকে আসা। জামায়াত-শিবিরের লোকজন নাম-পরিচয় পাল্টে এই জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিয়েছে। অনুসন্ধানে এমন তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা।

সর্বশেষ মঙ্গলবার পান্থপথে হোটেল ওলিও-তে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট অভিযান চালালে সাইফুল ইসলাম নামের নব্য জেএমবির এক সদস্য বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী হয়। সাইফুল ছাত্রশিবিরের সঙ্গে জড়িত ছিল বলে জানা গেছে। বিএল কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সাইফুলের বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়ায়। তার বাবার নাম আবুল খয়ের। তিনি জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ছাত্রশিবির থেকে আসা সদস্যরা নব্য জেএমবিকে এখন সরাসরি নেতৃত্ব দিচ্ছে।

তিনি বলেন, সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী রাশেদুল ইসলাম র‍্যাশ নব্য জেএমবিতে এসেছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অধ্যাপক ড. এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে কুপিয়ে হত্যায় জড়িত ছাত্রশিবিরের নেতা শরিফুল ইসলাম খালেদের হাত ধরে।

হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে অভিযান শেষে মঙ্গলবার দুপুরে জঙ্গি সাইফুলের বিষয়ে মনিরুল বলেন, ১৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে নাশকতার পরিকল্পনা করছিল নব্য জেএমবির একটি সেল। মিছিলে ঢুকে আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নাশকতার মাধ্যমে তারা সংগঠনের অস্তিত্ব জানান দিতে চেয়েছিল।

তিনি বলেন, ‘গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের আশপাশের তিনটি এলাকায় ব্লক রেড চালাই। পরে নিশ্চিত হই একজন এই হোটেলের ২০১ নম্বর রুমে অবস্থান করছে। তখন ওই রুমে বাইরে থেকে তালা দিয়ে দেয়া হয়।’
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘সকালে সোয়াত সদস্যরা তাকে আত্মসমর্পণের অনুরোধ করেন। সাড়া না দিলে অভিযান শুরু হয়। সোয়াত সদস্যরা ভেতরে গুলি করতে করতে ঢুকে গ্যাস ছোড়ে। তখন একটি বিস্ফোরণে দরজা ভেঙে যায় আর বোমাসহ সে বেরিয়ে আসে।’

তিনি বলেন, ‘সোয়াত গুলি চালালে ওই জঙ্গি আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায়। তার কাছে তিনটি শক্তিশালী বোমা ছিলো যার একটি অবিস্ফোরিত ছিল, সেটি নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।’

গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত হওয়া গুলশান হামলার আরেক পরিকল্পনাকারী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নুরুল ইসলাম মারজানও একসময় শিবিরের রাজনীতিতে যুক্ত ছিল।

অন্যদিকে গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলাকারী আত্মঘাতী সাত জঙ্গির মগজধোলাইয়ের প্রশিক্ষক রায়হান কবির ওরফে তারেকও আগে শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযানের সময় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সে মারা যায়।

এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মোবারকপুর ইউনিয়নের শিবনগর-ত্রিমোহনী গ্রামের জঙ্গি আস্তানায় পরিচালিত ‘অপারেশন ঈগল হান্ট’ চলাকালে নিজেদের বোমা বিস্ফোরণে নিহত রফিকুল ইসলাম আবু ওরফে আবুল কালাম আজাদ ওরফে আবু তার শ্বশুরবাড়ির লোকদের মারফত জঙ্গী মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়। তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনও একসময় জামায়াত-শিবিরের মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিল বলে জানা গেছে।

পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, সাভারে দুর্ধর্ষ ব্যাংক ডাকাতি, গাবতলী ও আশুলিয়ার চেকপোস্টে হামলা চালিয়ে পুলিশ হত্যা এবং পুরান ঢাকার হোসেনী দালানে শিয়া মসজিদে হামলায় জড়িত জঙ্গি আলবানী ওরফে হোজ্জা ওরফে শাহদত ওরফে মাহফুজও আগে শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। গত বছরের জানুয়ারিতে গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সে মারা যায়।

গাবতলীতে পুলিশ চেকপোস্টে হামলার সময় হাতেনাতে গ্রেপ্তার মাসুদ রানাও বগুড়ায় শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। আর রাজশাহীর বাগমারায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদে আত্মঘাতী হামলাকারী তারেক আজিজ এবং তার সহযোগী জামালউদ্দিনও শিবিরের রাজনীতি করতো। হামলার সময় তারেক এবং পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে জামালউদ্দিন মারা যায়।-প্রতিবেদন পরিবর্তন এর সৌজন্যে প্রকাশিত।