নানা রোগের প্রতিষেধক মাশরুম

মাশরুম হলো মহৌষধি গুণসম্পন্ন অত্যন্ত পুষ্টিকর ছত্রাক জাতীয় সবজি। যা পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক গুণসম্পন্ন একটি মহৌষধ। আদিকাল থেকে মাশরুমের ব্যবহার হয়ে আসছে। চীন, জাপান, ভিয়েতনাম, কানাডাসহ পৃথিবীর বহু দেশের মানুষ মাশরুম আদিকাল থেকে খেয়ে আসছে। আমাদের দেশের পাহাড়ি অঞ্চলে মাশরুম বেশি জন্মে এবং পাহাড়ি লোকেরা এটি বেশি খায়।

মাশরুমে আমিষ, শর্করা, চর্বি, মিনারেল ও ভিটামিন, চর্বি ও শর্করা (স্বল্প), ফলিক অ্যাসিড, লৌহ-প্রভৃতি ওষুধি গুণাগুণ ও উপাদান থাকায় এটি মানব শরীরে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বর্ধনপূর্বক ডায়াবেটিস, ব্লাডপ্রেসার, কিডনি ও এলার্জি, যৌনরোগ, আলসার ও বাতের ব্যথা প্রভৃতি জটিল ও কঠিন দুরারোগ্য ব্যাধি মুক্ত করে নিরাময়কের মহাভূমিকা পালন করে থাকে।

কিভাবে খেতে হবে : কাঁচা এবং শুকনা মাশরুম ১৫ বা ২০ মিনিট ফুটানো গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে ভালোভাবে ধুয়ে পানি ফেলে দিয়ে ফ্রাই বা সবজির মতো করে, তরকারি বা মাছ গোশতের মধ্যে দিয়ে বা বিবিধ প্রকারের নাস্তা ও মুখরোচক খাবার তৈরি করে খাওয়া যায়।

বিশুদ্ধ সবজি হিসেবে মাশরুমের ব্যবহার : ভিটামিন ও মিনারেলই মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিতে সাহায্য করে থাকে। শাকসবজি এবং ফলমূলে ভিটামিন ও মিনারেলের পরিমাণ বেশি। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, সুস্থ সবল জীবনযাপনের জন্য একজন মানুষের দৈনিক ২০০-২৫০ গ্রাম সবজি এবং ফল-ফলাদি খেতে হয়। এই পরিমাণমতো খাওয়া আমাদের অনেকের পক্ষে সম্ভবপর হয় না, যে কারণে আমরা অপুষ্টি ও বিভিন্ন রোগে ভুগী।

মাশরুমের পুষ্টিগুণ :
আমরা দৈনন্দিন যেসব খাবার গ্রহণ করে থাকি সেগুলোর চেয়ে মাশরুমের পুষ্টিগুণ তুলনামূলকভাবে বেশি বলে এটি শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে শরীর সুস্থ সবল রাখতে অতি মাত্রায় সাহায্য করে।

মাশরুমের পুষ্টি ভ্যালু তুলনামূলকভাবে অত্যধিক এবং এই প্রোটিন অতি উন্নতমানের এবং মানবদেহের জন্য অতিশয় উপকারী। একটি পরিপূর্ণ প্রোটিনের পূর্বশর্ত হলো মানবদেহের অত্যাবশ্যকীয় ৯টি অ্যাসিডের পরিমাণের উপস্থিতি। মাশরুমে অতীব প্রয়োজনীয় এই ৯টি এমাইনো অ্যাসিড বিদ্যমান।

অন্যান্য প্রাণিজ আমিশ যেমন-মাছ, গোশত, ডিম অতি নামী-দামি খাবার হলেও এতে চর্বি সম্পৃক্ত অবস্থায় থাকায় তা অতি মাত্রায় গ্রহণ করলে শরীরে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পেয়ে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করে, যার ফলে মেদ-ভুঁড়ির সৃষ্টি, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ প্রভৃতি জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।

পক্ষান্তরে মাশরুমের প্রোটিনে-ফ্যাট এবং কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ অতি স্বল্প এবং কোলেস্টেরল ভাঙার উপাদান-লোভস্ট্রাটিন, এন্টাডেনিন, ইরিটাডেনিন ও নায়াসিন থাকায় শরীরের কোলেস্টেরল জমতে পারে না বরং মাশরুম খেলে শরীরে বহু দিনের জমানো কোলেস্টেরল ধীরে ধীরে বিনষ্ট হয়ে যায় এবং শরীর হালকা-পাতলা হয়ে রোগমুক্ত হয়।

১০০ গ্রাম শুকনো মাশরুমে ২৫-৩৫ গ্রাম প্রোটিন রয়েছে। পক্ষান্তরে আমরা যা অতি নামী-দামি খাবার হিসেবে মাছ, গোশত, ডিম খেয়ে থাকি তার মধ্যে ১০০ গ্রাম মাছ, গোশত ও ডিমে প্রোটিনের পরিমাণ হলো ১৬-২২ গ্রাম, ২২-২৫ গ্রাম ও ১৩ গ্রাম মাত্র।

মাশরুমে ভিটামিন ও মিনারেল
মানবদেহের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা সৃষ্টি করাই ভিটামিন ও মিনারেলের প্রধান কাজ। শরীরের চাহিদামতো প্রতিদিন ভিটামিন ও মিনারেল খেতে না পারলে শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা ক্রমশ দুর্বল হয়ে নানারূপ জটিল রোগে আক্রান্ত হতে হয়। প্রাকৃতিকভাবে মাশরুমেই সবচেয়ে বেশি ভিটামিন ও মিনারেল বিদ্যমান।

তথ্য ও ছবি : ইন্টারনেট