নিখোঁজের ৩৯ ঘণ্টা পর ময়লার স্তূপে শিশুর লাশ

বাসা থেকে মাত্র ৩০০ গজ দূরে পায়ে হেঁটে বাবার কাছে যাওয়ার জন্য বের হয়ে আর ফেরেনি সালমা আক্তার নামের নয় বছরের এক শিশু। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি। অবশেষে ৩৯ ঘণ্টা পর বাসার পাশে একটি ভবনের ভেতর থেকে উদ্ধার হয় শিশুটির লাশ। সেখানে মার্কেটের সিঁড়িতে ময়লার স্তূপে কাঠের বাক্সের ভেতর পড়ে ছিল সালমার নিথর দেহ।

খবর পেয়ে আজ বৃহস্পতিবার ভোররাত তিনটার দিকে নগরের পাঁচলাইশ থানার বাদুড়তলা এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের ধারণা, শিশুটিকে শ্বাসরোধ করে দেড় দিন আগে হত্যা করা হয়েছে। তবে কারা বা কেন তাকে হত্যা করেছে, তা জানাতে পারেনি পুলিশ। শিশুটির বাবা মো. সোলায়মানও বুঝতে পারছেন না কেন তার মেয়েকে এভাবে খুন করা হয়েছে।

শিশুটির বাবা মো. সোলায়মান বলেন, বাসার পাশে আতাতুল ক্যাডেট মাদ্রাসায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে তার মেয়ে সালমা। গত মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে মাদ্রাসা থেকে বাদুড়তলা এলাকায় শাহ আমানত হাউজিং সোসাইটির ভাড়া বাসায় আসে তার মেয়ে। বাসা থেকে ৩০০ গজ দূরে নগরের বহদ্দারহাট মোড়ে একটি বাস কাউন্টারে টিকিট বিক্রি করেন সোলায়মান। তাঁর স্ত্রী মমতাজ বেগম ইফতারের খালি বাক্স বাসায় আনার জন্য মেয়েকে বাবার কাছে পাঠান। কিন্তু বেলা দুইটার দিকেও বাবার কাছে মেয়ে না পৌঁছানোয় খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। ১০টি রিকশায় করে আশপাশের এলাকায় মাইকিং করা হয় নিখোঁজ সালমার সন্ধানে। কিন্তু খোঁজ না মেলায় ওই দিন সন্ধ্যায় নগরের পাঁচলাইশ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তিনি।

সোলায়মান আরও বলেন, জিডি করার পর পাঁচলাইশ থানার পুলিশ এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে যায়। রাতে পাশের একটি মার্কেটের ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে দেখেন তারা। এতে সালমাকে বাসার গলির মুখে নঈমি ভবন নামে একটি মার্কেটের ভেতর ঢুকতে দেখেন। মার্কেটের ভেতর গুদাম ও দোকানপাটে খোঁজ করেও সালমাকে পাননি।

শিশুটির মামা মো. মহিউদ্দিন বলেন, গত বুধবার দিবাগত রাত পৌনে তিনটার দিকে মার্কেটটির সামনে দাঁড়ালে তাঁর নাকে দুর্গন্ধ লাগে। সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি তিনি ভগ্নিপতি সোলায়মানকে জানান। তাঁরা বেশ কয়েকজন গিয়ে খোঁজাখুঁজি করে মার্কেটের তৃতীয় তলায় সিঁড়ি ঘরে একটি কাঠের বাক্সের ভেতর সালমার লাশ দেখতে পান।

এ খবর ছড়িয় পড়লে স্থানীয় লোকজন এসে নগরের বহদ্দারহাট-আরাকান সড়কের বাদুড়তলা এলাকায় ব্যারিকেড দেয়। পরে পুলিশ এসে তাদের শান্ত করে। পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নগরের বহদ্দারহাট মোড় থেকে ২০০ গজ দক্ষিণে আরাকান সড়ক লাগোয়া বাদুড়তলা এলাকায় নঈমি ভবন। তিনতলার ওই ভবনে নিচতলায় টেইলার্সসহ তিনটি দোকান। দ্বিতীয় তলায় একটি দাঁতের ডাক্তারের দোকান, অপর পাশে গুদাম। তৃতীয় তলায় একটি গুদাম ও একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণের কক্ষ রয়েছে। ছাদের ওপর টিনের ছাউনি দেওয়া। ভবনটিতে ওঠা-নামার জন্য ভবনের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে দুটি সিঁড়ি রয়েছে। দক্ষিণ পাশের সিঁড়ি দিয়ে কেউ যাতায়াত করে না। সিঁড়ির তৃতীয় তলার দরজা সব সময় বন্ধ থাকে। এই দরজার পাশে ময়লার স্তূপ ও বিভিন্ন কার্টুন ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। ভবনটিতে কোনো প্রহরী নেই। নিচতলা ছাড়া বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায়ই বন্ধ থাকে বলে আশপাশের দোকানদারেরা জানান।

মর্গের সামনে আজ দুপুরে শিশুটির মা মমতাজ বেগমকে বিলাপ করতে দেখা যায়। তিনি বারবার বলছেন, ‘আমার সালমারে কারা এভাবে মারল। তাদের বিচার চাই।’

এ বিষয়ে পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ ওয়ালী উদ্দিন আকবর বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে, শিশুটিকে শ্বাসরোধে দেড় দিন আগে হত্যা করা হয়েছে। লাশটি পচন শুরু হওয়ায় শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে কি না বোঝা যাচ্ছে না। শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়েছে কি না, সেটি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে জানতে চাওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, নীলু দাশ নামে এক টেইলার্স মালিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে। মার্কেটের প্রবেশমুখের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এতে শিশুটিকে স্বেচ্ছায় ওইখানে যেতে দেখা গেছে। এখন বহদ্দারহাটে বাবার কাছে না গিয়ে ওইখানে কেন গেল, তা বের করার চেষ্টা চলছে।

নগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) মো. আবদুল ওয়ারিশ বলেন, শিশুটিকে কেন হত্যা করে বাক্সের ভেতর লাশ ফেলে রাখা হয়েছে, সেটি তদন্ত করা হচ্ছে। এ ঘটনায় নিহত শিশুর বাবা বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন।