নিরাপদ পানির সংকটে বাকৃবির শিক্ষার্থীরা

বাকৃবি প্রতিনিধি : দৈনন্দিন জীবনে বেঁচে থাকার জন্য পানি মৌলিক একটি চাহিদা। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশুদ্ধ পানির সমস্যা এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে নিরাপদ পানির দাবিতে শিক্ষার্থীদের বারবার রাস্তায় নামতে দেখা গেছে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সরবরাহকৃত পানিতে প্রতিনিয়ত ময়লা আর বালু আসার কারণে সে পানি শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করতে পারছেন না। তাই তারা এ পানির নাম দিয়েছেন শরবত পানি। সাম্প্রতিক সময়ের এ সমস্যাটি বেশি ভুগছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের চারটি হলের প্রায় ২ সহ্রাধিক শিক্ষার্থী।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শ্রাবণী চক্রবর্তী নামের এক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন “ডিয়ার ভার্সিটি কর্তৃপক্ষ, হলে ঠিকমত পানির সাপ্লাই দেন, নয়তো ভার্সিটি ছুটি দিয়ে দেন।” মৌমিতা সাহা বলেন, “পানির অভাবে না খেয়ে, না খেয়ে শুটকি হয়ে মরে যাবো মনে হয়।” কয়েকদিন পর পর তারা পানির জন্য আন্দোলন করলেও প্রশাসন সমস্যা নিরসনে তেমন কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের।

জানা গেছে, হলে পানি না থাকায় গত ২১ এপ্রিল দুপুর ১২টার দিকে শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের সামনের রাস্তা অবরোধ করেন। ওই হলের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, গত ২০ এপ্রিল ভোর থেকেই পুরো হলে পানি নেই। হলের প্রায় ৯০০ শিক্ষার্থী পানির অভাবে গোসল-খাওয়া দাওয়া কিছুই করতে পারছে না। দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে শিক্ষা জীবন। আন্দোলনের পর বিকল্প পানির ব্যবস্থা করা হলেও সেটি কার্যকর হচ্ছে না বলে অভিযোগ ওই হলের আবাসিক ঊষা ইসলামের।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সুলতানা রাজিয়া হলের চিত্রও করুণ। তিথি নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, “হলে প্রচুর ঘোলাপানি, এটাকে ঠিক পানি না, এক প্রকার শরবত বলা যেতে পারে। হুটহাট অসময়ে পানি চলে যায় । আর যখন পানি থাকে বেশিরভাগ সময়ই সরবত।” নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘হলের ৪টি ব্লকের মধ্যে ২টা ব্লকে পানি থাকেনা বললেই চলে। মাঝে মাঝে দেখা যায় দিনে ৭-৮ ঘন্টা পানি থাকেনা, আমিতো ঘুমাই ৭-৮ঘন্টা ততক্ষণের কথা বলতে পারবো না, তবে গড়ে প্রতিদিন ৬ ঘন্টা থাকেনা। ভোর বেলা দেখি পানি নাই, দুপুর দেড় টার পর পানি উধাও, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর পানি থাকে না। ১০টার দিকে পানি পাওয়া গেলেও আবার সাড়ে ১২টার পর আবার চলে যায়। তারপর আবার যতক্ষণ থাকে, পুরোটাই ময়লা পানি। বালিতে ভর্তি থাকে। ব্যবহার করা যায় না। হাতে পানি নিলে মনে হয় বালি দিয়ে হাত ধুচ্ছি। এরকম পানির সমস্যা অথচ আমাদের ব্লকের পানির জন্য দুটোর ট্যাংকির দুটিই নষ্ট, সারাক্ষণ পানি পরে। হলের আরো কয়েকটা ট্যাংকি থেকে এমন পানি অপচয় হয় আর আমরা পানির কষ্টে মরি। অনেকবার হল প্রশাসনকে বলছি কোন কাজ হয়না, শুধু বলে একটু ধৈর্য ধর! ’

তাপসী রাবেয়া হলের ভুক্তভোগী শ্রেয়সী শ্রেয়া ও স্মৃতি বিশ্বাস বলেন, ট্যাপের পানিতে বালু, পোকা আর দানাদার ময়লা পানি আসে, যা কেউ ব্যবহার করতে পারে না। তিনি আরো যোগ করেন, রাস্তার পাশের ব্লকে কয়দিন পর পরই পানি পাওয়া যেত না, এখন পুরো হলেই এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। বারবার এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেও তারা পানির সমস্যাটিতে প্রতিকার পাচ্ছেন না। এ পানি ব্যবহারের নিত্যই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলে অভিযোগ করেন তারা।

সদ্য নির্মিত বেগম রোকেয়া হলের পানির সংকট না থাকলেও ওই হলের শান্তা ইসলাম নামের এক ছাত্রী বলেন সরবরাহকৃত গোছলের পানিতে লালচে রং, আয়রণ এবং বালু আসে। হলের ছাত্রীরা অভিযোগ করেন আয়রণের কারণে চুল পড়া ও পানি ব্যবহারে শরীরের ত্বক চুলকায়।

পানির এ সমস্যাটি রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হলেও। সম্প্রতি ঈশা খাঁ হলে তিনদিন ধরে পানি সরবরাহ বন্ধ থাকায় হলে পানি সরবরাহের দাবিতে ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টার কার্যালয় ঘেরাও করে ওই হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, পানি মাঝে মধ্যে আসলেও ময়লা ও ঘোলার কারণে তা ব্যবহার উপযোগী নয়। পানি সরবারাহ বন্ধ থাকলে ঈশা খাঁ লেকের ময়লা পানিতে গোসল করতে হয় বলে অভিযোগ করেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা।

শহীদ নাজমুল আহসান হলের শাহরিয়ার আমিন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন আমরা প্রতিদিনই পানির সমস্যায় জর্জরিত। ময়লা পানিতে বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবাণু থাকায় আমাদের রোগ লেগেই আছে। মাথার চুল পড়া, চর্মরোগে অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছি। বিশুদ্ধ পানির অভাবে ময়লা আর জীবাণু যুক্ত পানি ব্যবহার করতেই হচ্ছে। হোসেন সোহারাওয়ার্দী হলের জাহিদুল হাসান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, মাঝে মাঝে ট্যাপে খুবই অপরিষ্কার পানি আসে যা ব্যবহার অনুপযোগি। ময়লা পানির সমস্যাটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হল, শহীদ জামাল হোসেন, শহীদ শামসুল হক হলসহ প্রায় সব হলেই কমবেশি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা হলের কর্মচারীদের গাফলতিকেই দায়ী করেছেন। নিয়মিত পানির ট্যাংকী পরিষ্কার রাখার দাবি জানান।

অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পানি সরবরাহ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান বলেন, একটি পাম্প নষ্ট হওয়ার কারণে সমস্যাটি হয়েছিল। পানির এখন কোন সমস্যা নেই। ময়লা, বালু আয়রণ পানির বিষয়ে তিনি বলেন, এগুলো ট্যাংকী থেকে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সচ্চিদানন্দ দাস চৌধুরীর সাথে মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।