নির্বাচনে সেনা মোতায়েনে ‘আপত্তি’ করবে না আওয়ামী লীগ

আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েনে নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। একই ধরনের প্রস্তাব এসেছে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের কাছ থেকেও। এমন প্রেক্ষাপটে বুধবার নির্বাচন কমিশনের সংলাপে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। জানা গেছে, নির্বাচনে সেনা মোতায়েনে দলটি কোনো আপত্তি জানাবে না।তবে নির্বাচনে সেনাবাহিনীর বিচারিক ক্ষমতা নিয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের বিপরীত অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীন জোটের শরিকরা সংলাপে এসে তাদের প্রস্তাবে সেনা মোতায়েন নিয়ে তাদের প্রস্তাব তুলে ধরেছে।

সংলাপে আওয়ামী লীগের অবস্থানও জোটের মতই হবে বলে জানিয়েছেন দলটির দায়িত্বশীল নেতারা।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, নির্বাচনে সহিংসতার বিষয়টি কোনোভাবেই উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে সারাদেশে পুলিশ, আনসারের মাধ্যমে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ রাখা কঠিন হতে পারে। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচন কমিশন প্রচলিত বিধিবিধান অনুযায়ী সেনাবাহিনী মোতায়েন করলে তাদের কোনো আপত্তি থাকবে না।

তবে আওয়ামী লীগের আপত্তি সেনাবাহিনীর বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া নিয়ে। বিএনপি ও সুশীল সমাজের দাবি বাস্তবায়নের সুযোগ বিদ্যমান আইনে না থাকায় এর কড়া সমালোচনাও করছেন দলটির নেতারা।

বিএনপির দাবিকে সেনাবাহিনীর প্রতি দলটির দুর্বলতা বলেই মনে করেন তারা। সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়ার বিপক্ষে সংলাপে জোরালো অবস্থান তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের এক জেষ্ঠ্য নেতা বলেন, ‘সেনা অফিসার বা সৈনিকদের জন্য ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার কি কখনও সম্ভব? বিসিএস থেকে যেসব কর্মকর্তা, তাদেরই তো এটি দিতে চায় না। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বানিয়ে যাদের পাওয়ার দেওয়া হয়েছে, সেটাই বাতিল করে দেয় দেয় অবস্থা। আর সেখানে সেনাবাহিনীকে দিবে? এটার কি দরকার? এটা বাস্তবে অসম্ভব।’

তিনি বলেন, ‘সবকিছুরই ম্যাচিউরিটির বিষয় আছে। ধাতস্ত হওয়ার বিষয় আছে। এখন পুলিশকে কি নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়া যায়? এটা সম্ভব? এসব কারণেই আমরা এর বিরোধিতা করব।’

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ও ফৌজদারি কার্যবিধিসহ প্রচলিত আইনে সেনাবাহিনীর দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট রয়েছে। এর বাইরে সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিতে বিএনপির করা দাবির পেছনে ভিন্ন কারণ রয়েছে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য রশিদুল আলম।

দলটির নির্বাচন পরিচালনা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত এই নেতা বলেন, ‘প্রচলিত আইনে প্রয়োজন হলে সিভিল এডমিনিস্ট্রেশন সেনাবাহিনীকে ডাকতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে এটা নতুন কিছু না। ডিসি, ইসি যে কেউ সেনাবাহিনী ডাকতে পারে। এখন কোনো দুর্যোগ হলে ডাকে না? রোহিঙ্গা ইস্যুতে ডাকা হয়নি?’

বিএনপির দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আইনে যেটা স্পষ্ট আছে, সেটা নিয়ে ঢাকঢোল পেটাতে হবে কেন? আসলে যে ঘর থেকে যারা আসে, তাদের সে ঘরের প্রতি দুর্বলতা থাকে। সাড়া না পেলে তাই ডাকাডাকি করে।’

ইসি প্রয়োজনে প্রচলিত আইনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আপত্তি থাকবে না জানিয়ে রশিদুল আলম বলেন, ‘স্পষ্ট আইনে রয়েছে যে, দুর্যোগময় মুহূর্তে সেনাবাহিনীকে ডাকা যাবে। এরপর আর কোনো বিষয় থাকতে পারে না। সিভিল এডমিনিস্ট্রেশন ডাকলে ডিফেন্সের যেকোনো বাহিনীকে আসতে হয়।’

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, ‘সংবিধানের বাইরে সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দেওয়া যাবে না। পৃথিবীর কোনো দেশেই এমনটি নেই।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সর্বোচ্চ স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হয়েছিল, সেটা ২০০১ সালে। সেই নির্বাচনের কি অভিজ্ঞতা সেটা আমরা দেখেছি।’

বিএনপির দাবির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনী ছিল না। নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, বিএনপি জিতেছেও।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বলছি, নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন নেই। কিন্তু, প্রয়োজন হলে সেনাবাহিনীকে ডাকা যায়, সেটা সব সময়ই ছিল।’সূত্র : পরিবর্তন ডটকম