নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত চলবে দুই মাস

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার বিধান অসাংবিধানিক ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় আগামী ২ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করেছে আপিল বিভাগ। ফলে এই সময়ের মধ্যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আদালত পরিচালনায় কোনো বাধা থাকবে না।

হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিলের শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ রবিবার এই আদেশ দেয়। ওই সময়ের মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগের রায় প্রকাশ হলে নিয়মিত আপিল করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে আদেশে।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। রিটকারীদের পক্ষে শুনানি করেন হাসান এম এস আজিম।

গত ১১ মে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার বিধান অসাংবিধানিক ঘোষণা করে রায় দেয় হাইকোর্ট। এ রায়ের ফলে ২০০৯ সালের ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের আওতায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা বন্ধ হয়ে যায়। রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে গত ১৪ মে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত ১৮ মে পর্যন্ত স্থগিত করে শুনানির জন্য পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেয়।

বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের ১১টি বিধান সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে ঘোষণা করে। রায়ে বলা হয়, ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের ১১টি বিধান বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ-সংক্রান্ত সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর বিরোধী।

আইনজীবী হাসান এম এস আজিম জানান, ইতিপূর্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়ে তিনটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত রুল দিয়েছিল। সেই তিনটি রুলের এক সাথে শুনানি করে হাইকোর্ট এ রায় ঘোষণা করেছে। তিনি জানান, ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর এ সংক্রান্ত একটি রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের ধারা ৫,৬ (১), ৬ (২), ৬ (৪), ৭, ৮ (১), ৯, ১০,১১, ১৩,১৫ কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল।

মামলার নথিসূত্রে জানা যায়, ভবন নির্মাণ আইনের কয়েকটি ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০১১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর এসথেটিক প্রপার্টিজ ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান খানকে ৩০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। সে বছরের ২০ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পান তিনি। এরপর ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের (মোবাইল কোর্ট অ্যাক্ট-২০০৯) কয়েকটি ধারা ও উপধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ১১ অক্টোবর কামারুজ্জামান হাইকোর্টে রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল দেন।

এদিকে ভবন নির্মাণ আইনের কয়েকটি ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০১১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর টয়নবি সার্কুলার রোডে অবস্থিত এক বাড়ির মালিক মজিবুর রহমানকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ৩০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। আইনের বিধান ও অর্থ ফেরতের নির্দেশনা চেয়ে ওই বছরের ১১ ডিসেম্বর রিট করেন মজিবুর। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই দিন হাইকোর্ট রুলসহ সাজার আদেশ স্থগিত করেন।

এ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের কয়েকটি বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১২ সালে ২ মে দিনাজপুরের বেকারি মালিকদের পক্ষে সাইফুল্লাহসহ ১৭ জন আরেকটি রিট করেন। এতে বেকারিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষেত্রে খাদ্য বিশেষজ্ঞ ও পরীক্ষার জন্য যন্ত্রপাতি সঙ্গে রেখে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা চাওয়া হয়। শুনানি নিয়ে ওই বছরের ৮ মে হাইকোর্ট রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন।