শিশু হাসপাতালে নোংরা পরিবেশ, এসেই অসুস্থ হচ্ছে শিশুরা!

ভালো চিকিৎসা পেতে শহর ও গ্রাম থেকে অনেকে শিশুদের নিয়ে ছুটে আসেন ঢাকা শিশু হাসপাতালে। কিন্তু এই হাসপাতালের নোংরা পরিবেশ বিষিয়ে তুলছে চিকিৎসা নিতে আসা শিশু রোগী ও তাদের স্বজনদের জীবন।

হাসপাতালে সেবা নিতে আসা কয়েকজন শিশু রোগীর স্বজন অভিযোগ করেন, নিয়মিত পরিষ্কার না করায় হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোর টয়লেটের অবস্থা খুবই নাজুক। দুর্গন্ধে মিনিট খানেক টেকা যায় না সেখানে। এতে করে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে রোগীসহ স্বজনদের।

রাজধানীর শ্যামলীতে সরেজমিন দেখা গেছে, হাসপাতালের ফটক থেকে ঢুকেই ডান পাশে বহির্বিভাগের টিকেট কাউন্টার। আর কাউন্টারের পাশেই টয়লেট। দুর্গন্ধের চোটে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা দায়। টয়লেটের ভেতরে ঢুকে দেখা যায় যেন গত এক মাসে একবারও পরিষ্কার করা হয়নি সেটি।

সেখান থেকে একটু সামনে জরুরি বিভাগ ও অভ্যর্থনা কক্ষ পেরিয়ে মিলবে এক ও দুই নম্বর ওয়ার্ড। এক নম্বর ওয়ার্ডের টয়লেটসহ জামাকাপড় পরিষ্কার এবং গোসল করার স্থান এতটাই স্যাঁতসেঁতে ও নোংরা যে, সেখানে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব নয়।

এক নম্বর ওয়ার্ডের টয়লেটের কাছে যেতেই দেখা যায় একজন বমি করছেন। তাঁর নাম সামিমন। তিনি জানান, আগামীকালের মধ্যেই কেবিনে সিট হলে তিনি হাসপাতালে থাকবেন, অন্যথায় রিলিজ নিয়ে চলে যাবেন। কারণ হিসেবে তিনি হাসপাতালের নোংরা পরিবেশের কথা উল্লেখ করেন।

একই চিত্র হাসপাতালের দুই নম্বর ওয়ার্ডেরও। বারান্দার ছড়ানো-ছিটানো ভাতসহ কাদামাটি মাখা স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ। গ্রিলের বাইরে থেকে আসছে পচা গন্ধ। কয়েকটা বিড়ালও ওয়ার্ডের ভেতরেই ঘোরাঘুরি করছে। ওয়ার্ডের বামপাশের টয়লেট দেখে মনে হবে যেন সেটি কেউ কোনো দিন পরিষ্কার করে না।

হাসপাতালের সাত নম্বর ওয়ার্ড হয়ে নিচতলার পশ্চিম পাশে অর্থাৎ বি-ব্লকে আট ও নয় নম্বর ওয়ার্ড। ওয়ার্ডের গেটে যাওয়ার আগেই টয়লেটের দুর্গন্ধে নাক চেপে রাখার অবস্থা। এরপর সিঁড়ি বেয়ে দ্বিতীয় তলায় উঠলে ডানপাশে পাবেন তিন ও চার নম্বর ওয়ার্ড। এই দুটো ওয়ার্ডের অবস্থা আরো খারাপ। শৌচাগারসহ আশপাশে ময়লা এবং পচা ভাতে ভরে আছে নর্দমা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নারী বলেন, রোগীর স্বজনদের অনেকেই এখানে রান্নাবান্না করেন। আবার হাসপাতালও খাবার দেয়। কখনো তো এসব নষ্ট হতেই পারে। ময়লা ফেলার জন্য সব সময় বেডের নিচে বালতি থাকে না। এ কারণে এখানে-সেখানে ফেলতে হয় পচা ভাত। এগুলো আবার হাসপাতালের লোকজন ঠিকমতো পরিষ্কারও করে না।

জোসনা আক্তার নামের এক নারী বলেন, ‘এখানে এসেছি বাচ্চা সুস্থ করতে। উল্টো গন্ধে আর গুমট আবহাওয়ায় মেয়ের জ্বর ও সর্দি বেঁধে গেছে। একদিকে যেমন সব সময় আটকানো থাকে, অন্যদিকে ক্লিনাররাও ঠিকমতো তদারকি করে না।’

হাসপাতালের কয়েকটি কেবিনে গিয়ে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওয়ার্ডের তুলনায় কেবিনে অপেক্ষাকৃত ভালো পরিবেশ। শরিফা বেগম নামের একজন বলেন, ‘আমিও প্রথমে এসে ওয়ার্ডে ছিলাম। আসলেই খুব নোংরা পরিবেশ ওখানে। তাই দ্রুতই কেবিনে চলে এসেছি।’

হাসপাতালে গিয়ে তিন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী বলেন, ‘আমরা দুজন কাজ করি একই ওয়ার্ডে। আমার ওয়ার্ডের অন্যজন তিন দিন ধরে আসছে না। একা একা আর পেরে উঠছি না। সে না আসাতে গত দুদিন আমি বাথরুম পরিষ্কার করতে ঢুকিনি।’

আক্ষেপ করে ওই পরিচ্ছন্নতাকর্মী আরো বলেন, ‘আমরা এখানে যতজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী কাজ করি, সবাই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নেপকনস গ্রুপের। আমাদের বেতন দেয় মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাকা। গতকাল রাতে ডিউটি করেছি। সকালে আর কেউ না থাকাতে এখনো ডিউটি করছি। এভাবে আর কত?’

অপরিচ্ছন্নতার বিষয়ে হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার জাহিদ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যাঁরা এখানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করেন, তাঁরা কাজ না করলে আমরা কী করব। তবুও যতদূর সম্ভব আমরা চেষ্টা করি।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. এইচ এস কে আলম বলেন, ‘গত কয়েকদিন সরকারি ছুটি থাকায় হয়তো একটু ঝামেলা হয়েছে। আর কেউ তো আমাদের কাছে অভিযোগ করেনি। তবে আমরা দেখব। খারাপ পরিবেশ থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) কাজী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা এর আগেও ঢাকা শিশু হাসপাতাল নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ শুনেছি। আর এখন আপনি নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কথা শোনালেন। আমরা দ্রুতই ভিজিট করব। ভিজিট করার পর ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’ সূত্র : এনটিভি অনলাইন