পরিচয় স্বামী-স্ত্রীর, চালান জমজমাট দেহ ব্যবসা

ভৈরবে আবাসিক হোটেলগুলোতে চলছে জমজমাট অসামাজিক কর্মকাণ্ড ও মাদক ব্যবসা। হোটেলগুলো বর্তমানে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আস্তানায় পরিণত হয়েছে। এমন কোনো কুকর্ম নেই যা হোটেলগুলোতে হচ্ছে না।

এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে দেহ ব্যবসা। যেন দেখার কেউ নেই। আবাসিক হোটেল ছাড়াও ভৈরব বাজার বাগানবাড়ি, রানীরবাজার, নিউ টাউন, ঘোড়াকান্দা, পঞ্চবটি এলাকায় একটি চক্র স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বাসা-বাড়ি ভাড়া নিয়ে অবাধে দেহ ব্যবসা করছে।

ভৈরব বাজারে অবস্থিত হোটেল স্বাগতম, হোটেল শৈবাল, হোটেল ভিআইপি, বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আংগুর মিয়ার একটি আবাসিক হোটেলসহ একাধিক হোটেলে প্রতিদিন দেহ ব্যবসা চলছে।

এসব আবাসিক হোটেলে বেশির ভাগ বর্ডার থাকে পতিতাদের খদ্দের। অভিযোগ রয়েছে, দিনের বেলায় খদ্দেররা হোটেলগুলোতে যায়। এসব হোটেলে ৫/৭ জন পতিতা থাকে। তারা পালা করে খদ্দেরকে আনন্দ দেয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একশ্রেণির দালাল পতিতাদের চুক্তি করে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, বরিশাল, সিলেটসহ দেশের বড় বড় শহর থেকে ভৈরবের হোটেলগুলোতে নিয়ে আসে। আবার হোটেল মালিকরা দালালদের সঙ্গে চুক্তি করে কতজন নারী পতিতার চাহিদা রয়েছে। অনেক দালাল নিজেরাই ভৈরব শহরে বাসা ভাড়া করে দেহ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

এসব আবাসিক হোটেল ও বাসায় প্রায়ই পুলিশ অভিযান চালায়। রাতের বেলা অভিযান চালালে হোটেল মালিকরা বর্ডার ও নারী খদ্দেরকে স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দেয়। এ সময় দালালদের পতিতাদের স্বামী পরিচয় দিলে পুলিশের কিছুই করার থাকে না বলে পুলিশ জানায়। বাসাগুলোও স্থানীয় পরিচিত দালালরা নিজে ভাড়া নিয়ে ২/৩ জন নারী বাসায় রাখে। তবে ভাড়া বাড়িতে পুলিশি অভিযান কম থাকায় অবাধে চলচে এই ব্যবসা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, এসব বাসাতে রাতের বেলায় কোনো খদ্দের যায় না। কারণ প্রতিবেশী ভাড়াটিয়ারা বুঝে ফেলতে পারে নারী ব্যবসার রহস্য। এ কারণে দিনের বেলায় বাসাগুলোতে আত্মীয় পরিচয়ে খদ্দেররা অবস্থান করে। প্রতিদিন প্রতিটি বাসায় ৮/১০ জন খদ্দের যাতায়াত করে।

হোটেল ও বাসাগুলোতে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন শ্রেণির খদ্দের সংখ্যাই বেশি। তবে এসব কাজে নির্দিষ্ট খদ্দের সংখ্যার মধ্য সীমাবদ্ধ থাকে। নুতন খদ্দের হলে পুরনো খদ্দেরদের সঙ্গে আসে তারা।

সূত্র জানায়, অসামাজিক কাজ করে পতিতারা একজন খদ্দেরের কাছ থেকে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পায়। তার মধ্য দালাল ও হোটেল মালিক মিলে ২০০ টাকা নিয়ে যায় বলে সূত্র জানায়।

ফলে পতিতারা ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পেয়ে থাকে। তবে নারী যদি সুন্দরী হয় তার রেট একটু বেশি থাকে। সুন্দরী নারীদের খদ্দের রেট একটু বেশি হয় বলে সূত্র জানায়।

অনেক ধনী পরিবারের ছেলেরাও হোটেল ও বাসাগুলোতে যাতায়ত করে। এছাড়া মাদকাসক্ত, নেশাখোর, সন্ত্রাসীসহ সমাজের অপরাধীরাও পতিতাদের কাছে আসে। দেহ ব্যবসা নিরাপদে করতে হোটেল মালিক ও দালালরা স্থানীয় কিছু মাস্তান ও গুন্ডা পালে। এদের প্রতিদিন আয়ের একটি অংশ দিয়ে থাকে বলে সূত্র জানায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দালাল জানান, হোটেল মালিক ও দালালদের সঙ্গে পুলিশের মাসিক চুক্তি রয়েছে। যদিও ভৈরব থানা পুলিশ এ বিষয়টি অস্বীকার করেছে।

তবে পুলিশ একদিনেই এসব ব্যবসা বন্ধ করতে পারে বলে সমাজপতিরা জানায়। ভৈরবে অবাধে দেহ ব্যবসা করার কারণে সমাজে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। উঠতি বয়সের ছেলেরা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

ভৈরব পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট ফখরুল আলম আক্কাছ বলেন, এসব আবাসিক হোটেলে অসামাজিক কার্যকলাপের ফলে সমাজে নষ্ট হচ্ছে। দিনের বেলায় এসব হোটেলে পুলিশের অভিযান চালানো উচিত। দেহ ব্যবসা বন্ধ করতে তিনি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করবেন বলে জানান।

এ ব্যাপারে ভৈরব থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, আমি ভৈরবে যোগদান করে একাধিকবার হোটেলগুলোতে অভিযান চালিয়েছি। কিন্তু কোনদিনই পতিতা পাইনি। মাঝেমধ্যে হোটেলে নারী পাওয়া গেলে স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দেয়। তবে দিনের বেলায় অসামাজিক কাজ চলে কিনা তা আমি জানি না।

এ ব্যাপারে ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলরুবা আহমেদ বলেন, আমি কয়েকবার হোটেলে অভিযান চালিয়ে পতিতাদের আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করেছি। তবে দেহ ব্যবসার আইনটি কঠিন নয় বলে তারা বার বার দেহ ব্যবসায় জড়িয়ে যায়।