ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তিন মন্ত্রীর বৈঠকের পর

পাইকারি বাজারে চালের দাম কমছে

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারের তিন মন্ত্রীর বৈঠকের পর চালের দাম কমতে শুরু করেছে। পাইকারি বাজারে ভারত থেকে আমদানি করা মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি প্রায় ৫ টাকা কমেছে। চালকলের মালিকেরা সরু ও মাঝারি চালের দাম কেজিপ্রতি ২ থেকে ৩ টাকা কমিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

অবশ্য খুচরা বাজারে দাম কমার প্রভাব এখনো পড়েনি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, খুচরায় চালের দাম কমতে আরও কয়েক দিন লাগবে।

এদিকে দেশের বেশ কয়েকটি বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী দীর্ঘ সময় পর চাল আমদানি শুরু করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তারা চাল আমদানিতে নেমেছে বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠান থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও ভারত থেকে চাল আমদানির ঋণপত্র খুলেছে।

চালের দাম কমছে

গত মঙ্গলবার সারা দেশের চালকল মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ও খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। এ বৈঠকে চালকলের মালিকেরা দাম কেজিপ্রতি ২ থেকে ৩ টাকা কমানোর আশ্বাস দেন।

ওই বৈঠকের পর চালের বাজারে সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে দাবি পাইকারি ব্যবসায়ীদের। তাঁরা বলছেন, মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের আগে চালকলের মালিকেরা বেশ কিছুদিন চালের সরবরাহ আদেশ নেওয়া প্রায় বন্ধ রেখেছিলেন। এতে বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল যে দাম অনেক বাড়বে। এ কারণে বিভিন্ন পর্যায়ে চাল কিনে রাখার একটা প্রবণতা তৈরি হয়েছিল, যা বাজারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল।

ঢাকার বড় চালের বাজার মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের ব্যবসায়ীরা সরাসরি কুষ্টিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁসহ বিভিন্ন জেলা থেকে চাল এনে বিক্রি করেন। ফলে দাম ওঠানামার প্রভাব ওই বাজারে আগে পড়ে। বরিশাল রাইস এজেন্সির ব্যবস্থাপক মহিউদ্দিন রাজা বলেন, মোটা চালের নতুন দর কেজিপ্রতি ৪৩ টাকা, যা কয়েক দিন আগে ৪৮ টাকা ছিল। মিনিকেট চালের দামও কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা কমে ৫৮-৫৯ টাকায় নেমেছে। বিআর-২৮ চালের দাম কমেছে ২ টাকা, বিক্রি হচ্ছে ৫৩ টাকা দরে।

ঈদুল আজহার পর বাজারে সবচেয়ে বেশি বেড়েছিল মিনিকেট ও ভারতীয় মোটা চালের দাম। এ সময় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মিনিকেট চালের দাম পাইকারি বাজারে ৬২ টাকায় উঠে যায়, যা খুচরা বাজারে ছিল কেজিপ্রতি ৬৫-৬৬ টাকা।

বাবুবাজার-বাদামতলীর চালের আড়ত শিল্পী রাইস এজেন্সির মালিক কাওসার রহমান বলেন, মোটা চালের দাম কেজিতে ৩ টাকার মতো কমেছে। নতুন করে চাল এলে দাম আরও কিছুটা কমবে। কারণ, বেনাপোলে দাম আরেকটু বেশি হারে কমেছে। তিনি বলেন, চালকল মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রশিদ তাঁর কোম্পানির মিনিকেট চালের দাম ২ টাকা কমিয়ে বস্তাপ্রতি ২ হাজার ৯৫০ টাকা নির্ধারণ করেছেন। অন্যরাও মোটামুটি একই হারে কমিয়েছেন।

বেনাপোল বন্দরে মোটা চালের দাম কয়েক দিন আগে কেজিপ্রতি ৪৮ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার একই চাল সর্বোচ্চ ৪১ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, দাম কমার দিকে থাকায় ক্রেতারা চাল কেনা কমিয়ে দিয়েছেন।

কারওয়ান বাজারে গতকাল চাল কিনতে গিয়েছিলেন স্থানীয় একটি হোটেলের কর্মী মো. শাহাবুদ্দিন। তিনি বলেন, সরু চালের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছিল। গত দুই দিনে ২ টাকা কমেছে। এতে বিশেষ কোনো লাভ হবে না।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দৈনিক খাদ্যশস্য পরিস্থিতি প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলতি অর্থবছরে প্রথম আড়াই মাসে ১৮ লাখ ৬১ হাজার টন চাল আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে। এর মধ্যে দেশে এসেছে ৭ লাখ ১৮ হাজার টন চাল।