পেইন কিলারের বিকল্প হতে পারে এই প্রাকৃতিক উপাদানগুলি!

নিত্যদিনের কর্মব্যস্ততার দৌড়-ঝাপের মাঝে হঠাৎ করেই শরীরে চোট-আঘাত লাগাটা একেবারেই অস্বাভাবিক নয়। আর এক্ষেত্রে প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষই কষ্ট কমাতে পেইনকিলারের উপর ভরসা করে থাকেন। কিন্তু এমন ওষুধের ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো সচেতনতাই যেন নেই। আজ একথা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার যে বেশি মাত্রায় পেইনকিলার খেলে একাধিক শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। এমনকি কিডনির কর্মক্ষমতাও কমতে শুরু করে। তাই এখন থেকেই সাবধান হওয়াটা জরুরি!

সাবধান তো হতেই হবে। কিন্তু কীভাবে? এক্ষেত্রে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতিকে কাজে লাগাতে পারেন। এই প্রকৃতিক উপাদানগুলি পেইনকিলারের মতোই দ্রুত ব্যথা কমায়। পাশপাশি শরীরের নানাভাবে উপকারেও লাগে। অর্থাৎ শরীরের কোনও ক্ষতি ছাড়াই ব্যথার উপশম সম্ভব হয়। তাহলে আর অপেক্ষা কেন! চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই সব কার্যকরী প্রাকৃতিক পেইনকিলারগুলো সম্পর্কে…..

১. চেরি
লাল লাল ছোট্ট-মিষ্টি এই ফলটি দেখতে যতটা সুন্দর, খেতেও ততটাই সুস্বাদু! শুধু তাই নয়, যে কোনও ধরনের যন্ত্রণা কমাতেও এই ফলটির কার্যকারিতাকে উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। আসলে চেরিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্থোসিয়ানিন নামে এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের প্রদাহ এবং ব্যথা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই এবার থেকে কোথাও চোট আঘাত লাগার কারণে যদি ব্যথা শুরু হয়, তাহলে নিশ্চিন্তে কাজে লাগাতে পারেন এই ফলটিকে।

২. হলুদ
কয়েক হাজার বছর ধরে যন্ত্রণা কমানো সহ একাধিক রোগের উপশমে হলুদের ব্যবহার হয়ে আসছে। এতে উপস্থিত কার্কিউমিন নামে একটি উপাদানে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটারি প্রপার্টিজ, যা জয়েন্ট এবং পেশির ব্যথা কমাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে। এক্ষেত্রে দুধে বা চায়ে অল্প করে হলুদ মিশিয়ে খেতে হবে। তাহলেই উপকার মিলবে।

৩. আদা
হলুদের মতোই এই প্রাকৃতিক উপাদানটিও বহু শতাব্দী ধরে ব্যথা উপশমে কাজ করে আসছে। আদাতে আছে এমন অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রপাটিজ যা অর্থ্রাইটিস, পেটের যন্ত্রণা, বুকে ব্যথা, পিরিয়ডের যন্ত্রণা সহ যে কোনও ধরনের ব্যথা কমাতে দারুন উপকারে লাগে।

৪. আঙুর
ব্যাথা উপশমে আঙুরের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। বিশেষত লাল আঙুর এক্ষেত্রে বেশি কাজে আসে। এই ফলটির শরীরজুড়ে রয়েছে রেসভার্টল নামে একটি অতি কার্যকরী অ্যান্টিঅক্সিডেন্টট প্রপার্টিজ, যা নিমেষে যে কোনও ধরনের যন্ত্রণা কমাতে সক্ষম। সেই সঙ্গে জয়েন্টে উপস্থিত কার্টিলেজের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে সার্বিকভাবে শরীরকে সচল রাখতেও আঙুর বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৫. পিপারমেন্ট পাতা
দাঁত, পেশি, নার্ভ এবং মাথার যন্ত্রণা কমাতে পিপারমেন্ট পাতার কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। এতে উপস্থিত থেরাপেটিক প্রপার্টিজ হজম ক্ষমতার উন্নতিতেও সাহায্য করে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই নানাবিধ পেটের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়। পিপারমেন্ট পাতার উপকারিতা এখানেই শেষ নয়। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে স্ট্রেস কমাতে এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও এই প্রাকৃতিক উপদানটি দারুন কাজে আসে। তাই ব্যথা-যন্ত্রণা ছাড়াও প্রতিদিন যদি অল্প করে পিপারমেন্ট পাতা খেতে পারেন, তাহলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।

৬. লবণ
একেবারে ঠিক শুনেছেন। যন্ত্রণার মতো শারীরিক কষ্ট কমাতে লবণকে কাজে লাগানো যেতেই পারে। এক্ষেত্রে ১০-১৫ চামচ লবণ পানিতে মিশিয়ে সেই পানি দিয়ে গোসল করলেই উপকার মেলে। কেন এমনটা হয় জানেন? কারণ লবণ পানি শরীরের ভেতরে প্রবেশ করে একাধিক কোষকে উজ্জীবিত করে তোলে। আর সেই সঙ্গে দেহের প্রতিটি কোণায় রক্ত চলাচলও খুব বেড়ে যায়। ফলে যন্ত্রণা কমতে শুরু করে।

৭. সয়া
‘এন সি বি আই’-এর করা এক গবেষণায় দেখা গেছে সয়া প্রোটিন আর্থ্রাইটিসের যন্ত্রণা কমাতে দারুন কাজে আসে। শুধু তাই নয়, অস্টিওআথ্রাইটিসের প্রকোপ কমাতেও সাহায্য করে। তাই যারাই এমন রোগে আক্রান্ত, তারা আজ থেকেই প্রতিদিন সয়া মিল্ক খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার পাবেন। প্রসঙ্গত, সয়াতে উপস্থিত আইসোফ্লেবোনস নামে একটি উপাদান এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিক পালন করে থাকে।

৮. দই
তলপেটের যন্ত্রণা কমাতে এটি দারুন কাজে আসে। শুধু তাই নয়, দইয়ে উপস্থিত উপকারি ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করা মাত্র হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটানোর পাশাপাশি পেট সংক্রান্ত নানাবিধ সমস্যা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৯. মরিচ
খাবারের স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যথা-যন্ত্রণা কমাতে মরিচের বাস্তবিকই কোনও প্রতিপক্ষ নেই। এতে থাকা ক্যাপসিয়াসিন নামে একটি উপাদান দ্রুত যন্ত্রণা কমাতে দারুন কাজে আসে। সেই কারণেই তো বাজার চলতি একাধিক যন্ত্রণা কমানোর মলমে এই উপাদানটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে শারীরিক কষ্ট কমাতে ২টার বেশি মরিচ খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। আর যদি হাতের কাছে কাঁচা লঙ্কা না থাকে, তাহলে দু চামচ লঙ্কা গুঁড়ো খাবারে মিশিয়ে খেতে পারেন, সমান উপকার পাবেন।

সূত্র: বোল্ড স্কাই