প্রতিভাবান ক্রিকেটারের অভাব বাংলাদেশে!

অহরহই আমাদের ক্রিকেট কর্তাব্যক্তিরা বলেন, এ দেশে এখন আর ক্রিকেট প্রতিভার অভাব নেই। প্রচুর ক্রিকেটার উঠে আসছে। জাতীয় দল সাজাতে গিয়ে অনেক সময় মধুর সমস্যায় পড়তে হয় নির্বাচকদের। অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকে শুরু করে প্রতিটি বয়সভিত্তিক দলে ক্রিকেটারের ছড়াছড়ি। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ, জাতীয় ক্রিকেট লিগ কিংবা বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের মাধ্যমেও উঠে আসছে অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটার। এ নিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতেও দেখা যায় ক্রিকেট সংশ্লিষ্টদের।

অথচ ফ্রাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট লিগ বিপিএল (বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ) আয়োজন করতে গিয়ে নাকি আয়োজকরা বাংলাদেশের প্রতিভার ঘাটতি খুঁজে পাচ্ছেন। ভারতে যে পরিমাণ ক্রিকেট প্রতিভা রয়েছে, সে পরিমাণ প্রতিভা নাকি আমাদের নেই। এ কারণে বিপিএল আয়োজক কমিটি, বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল চিন্তা করছে, আগামী আসরে প্রতিটি ফ্রাঞ্চাইজির একাদশে চারজনের পরিবর্তে পাঁচজন করে বিদেশী খেলোয়াড় খেলানো যায় কি না।

বিষয়টি এখনও চিন্তা-ভাবনার পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সভাপতি, বিসিবি পরিচালক আফজালুর রহমান সিনহা। তিনি জানিয়েছেন, ফ্রাঞ্চাইজিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

ভারত বিশাল একটি দেশ। ১২০ কোটিরও বেশি জনসংখ্যা। দেশটিতে বাংলাদেশের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি প্রতিভাবান ক্রিকেটার থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আইপিএল, রঞ্জি ট্রফি থেকে শুরু করে ঘরোয়া বিভিন্ন টুর্নামেন্টের মাধ্যমে সেসব প্রতিভা উঠে আসে। আইপিএলে তাই দেখা যায় প্রতিভার ছড়াছড়ি। আবার অনেক প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটে আইপিএলে আসে। বলা যায়, ভারতের বর্তমান জাতীয় দলটি পুরোটাই আইপিএল প্রোডাক্ট।

ভারতের তুলনায় সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশে প্রতিভা কম হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে, তাই বলে প্রতিভা তুলে আনার জন্য বিপিএলকে মঞ্চ ভাবছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

বিপিএলে দুটি ফ্রাঞ্চাইজির মালিকানা পরিবর্তন এবং একটি ফ্রাঞ্চাইজি বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয় মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। সেখানেই আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়, ঢাকা-চট্টগ্রামের সঙ্গে এবার নতুন ভেন্যু হিসেবে থাকছে সিলেটও। সেখানেই ‘বাংলাদেশে প্রতিভাবান ক্রিকেটারের অভাব রয়েছে’- এই কথাটি উঠে আসে।

স্থানীয় খেলোয়াড়দের উন্নয়ন, প্রতিভার উন্মেষ ঘটাতে আইপিএল থেকে শুরু করে প্রতিটি ফ্রাঞ্চাইজি লিগই সর্বোচ্চ ৪জন করে বিদেশি খেলোয়াড়ের সীমা বেধে দেয়। সেখানে বাংলাদেশ বিপিএলে ৫জন বিদেশি খেলানোর চিন্তা করছে। কেন? এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিক। তিনি বলেন, ‘বিপিএলে অন্তর্ভূক্ত হতে চার-পাঁচটা ফ্র্যাঞ্চাইজি আবেদন করেছে। এদের মধ্য থেকে যদি একটাও বাড়ে, তাহলে ওই পরিমাণ স্থানীয় প্রতিভা আমাদের নেই, যারা এত বড় টুর্নামেন্টে নিজেদের মেলে ধরতে প্রস্তুত। ভারতে যে পরিমাণ প্রতিভা আছে, বাংলাদেশে এখনো সেটা খুঁজে পাইনি। আমরা যদি আটটা দল করি, তাহলে আরও সাত-আটজন স্থানীয় খেলোয়াড়ের সরবরাহ থাকতে হবে।’

বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচীবের এই ব্যাখ্যার পর প্রশ্ন উঠলো ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে তো খেলছে ১২টি দল। সেখানে বিদেশি খেলানোর সীমা একজন করে। তাহলে বাকি ক্রিকেটাররা কোথা থেকে উঠে আসছে? এ প্রশ্নেরও জবাব দিলেন ইসমাইল হায়দার মল্লিক। তিনি ব্যাখ্যা দিলেন, ‘একটা ৫০ ওভার, আরেকটা ২০ ওভারের খেলা। প্রিমিয়ার লিগের ১২টা দলই কী সমান? নিচের চারটা দল ওপরের ছয়-সাতটা দলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেই পারে না। পয়েন্ট তালিকা দেখেন। কীভাবে বলছেন, ওখানে খুব প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়?’

প্রিমিয়ার লিগের পয়েন্ট টেবিলের উদাহরণ আনলে তো বিপিএলেও একই উদাহরণ টানা যায়। সেখানেও তো দু’তিনটা দল থাকে যারা, লিগ পর্ব শেষ হওয়ার অনেক আগেই বিদায় নিশ্চিত করে ফেলে। সমানতালে লড়াই করতে পারে না। এ কথারও জবাব দিলেন মল্লিক, ‘বিপিএল পুরোপুরি বাণিজ্যিক উদ্যোগ। দর্শক-সমর্থক টানতে যে পরিমাণ উপাদান থাকতে হয়। আনকোরা অনূর্ধ্ব-১৯ দলের একজন ক্রিকেটারকে খেলিয়ে তো লাভ নেই। এত বড় টুর্নামেন্টের চাপ সে নিতে পারবে না। অনেক ছেলে এভাবে খেলে ভালো করতে পারেনি। পরে তাদের ঘরোয়া অন্য টুর্নামেন্টগুলোয় সুযোগও হয়নি।’

তবে সদস্য সচিব এটাও মেনে নিয়েছেন বিপিএলের কারণে কয়েকজন প্রতিভাবান ক্রিকেটার উঠে এসেছে। তিনি বলেন, ‘আবার এটাও ঠিক, মিরাজ-আফিফ-রনির (আবু হায়দার রনি) মতো প্রতিভাবান ক্রিকেটার এই টুর্নামেন্টেই পেয়েছি আমরা।’