অ | নু | গ | ল্প

প্রবাসী | আলাউদ্দিন আদর

আমাদের পাশের গ্রামে এক সুন্দরী মেয়ের খোঁজ পায় আমার বন্ধু পারভেজের পরিবার।মেয়েটি দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি পড়াশুনাতেও বেশ ভালো।বংশ মর্যাদায় বেশি ভালো না হলেও অর্থ সম্পদ খারাপ না।আমার বন্ধুটি তখন অনার্স শেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে বাবার ব্যবসায় সময় দিচ্ছে পুরোদমে।ফেনীতে নিজস্ব বাড়ি ছাড়াও ভালো অর্থসম্পদ ছিল ওদের।সে দেখতেও আমার থেকে ভালো ছিল।বংশ মর্যাদায় বেশ উচ্চ বংশের ।আমি ছেলের পক্ষ হয়ে প্রস্তাব নিয়ে যাই।ছেলেদের সব খোঁজ খবর নিয়ে মেয়ের মা তো আনন্দে আটখানা।কিন্তু যখন শুনলো ছেলে প্রবাসী,থাকে মধ্যপ্রাচ্যে।তখন মুখের উপর বলে দিল-বাবা আমাদের একটা মাত্র মেয়ে, তাকে আমরা বিদেশি শ্রমিক পোলার কাছে বিয়া দিমু না…!

এই ঘটনার বছর খানেক পর…

মেয়েটি একটি ছেলেকে পালিয়ে বিয়ে করে।নানান হুমকি ধমকি শুরু হয়।যদিও পরে উভয় পরিবার মেনে নেয় বিয়েটি।পাড়া পড়শিদের থেকে শুনলাম, ছেলেটির নাম রায়হান।ছেলে একটা বড় প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকুরি করে।ভালো মাইনে পায়।মেয়ের মা এরপরও এটা নিয়ে অহংকার করে যে, তার মেয়েকে টাকার জন্য কোন বিদেশির হাতে তুলে দেয়নি!শিক্ষিত স্মার্ট চাকুরীজীবি ছেলের সাথে বিয়ে হয়েছে, ব্লা ব্লা ব্লা…

অল্পকিছু দিনের মাঝে আমরা জানতে পারলাম।ঐ ছেলেটা একটা বীমা কোম্পানির উন্নয়ন কর্মী।কিভাবে জানলাম(?) বলছি- আমি তখন ফেনীতে থাকি।ফেনীর স্থানীয় ও জাতীয় আন্তর্জাতিক বেশ কিছু সামাজিক সংগঠনের সাথে কাজ করি।আমার কাছে কল দিলেই রক্তের ব্যবস্থা সহ যেকোন বিষয়ে সহায়তা পাওয়া যাবে এমন বিশ্বাস ছিল আমার এলাকার মানুষদের।প্রায় নানান কাজে এলাকার মানুষ কল দিতো।আমিও সাধ্যমত চেষ্ঠা করতাম পাশে থাকার।একদিন ভোরে ঐ মেয়েটির ভাই কল দিল।বললো-ওর বোনের ডেলিভারির জন্য জরুরী এক ব্যাগ (Ab+) রক্ত লাগবে।আমি নিজেই ঐ গ্রুপের ডোনার হওয়ায় তাকে আশ্বাস দিলাম আমিই যাবো রক্ত দিতে।

ঘন্টা খানেক পর আমি ঠিকানা মত হাজির হয়ে যাই ফেনী সদর হাসপাতালে।গিয়ে দেখি তুলকালাম কান্ড!হাসপাতালে ডাক্তার নেই,নার্সদের কর্কশ ব্যবহার সহ নানান অভিযোগে মেয়ের মা মেয়েকে এখানে ডেলিভারি করাবে না।শিক্ষিত জামাইটাকেও বেশ ধোলাই দিল এইসব বলে-তোমার কাছে টাকা নাই,তুমি বীমার কমিশন না পেলে চলতে পারোনা, তাহলে আমার মেয়েকে বিয়ে করলা কেন(?)একটা ভালো হাসপাতালে বউরে ভর্তি করাতে পারবে না,তবে কেন বাবা হওয়ার সখ হলো(?)…

বিকেলের দিকে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে সিজারের মাধ্যমে মেয়েটি একটা কন্যা সন্তান জন্ম দিল।সবাই মোটামুটি খুশি হলেও সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুটির নানীর মুখে মেঘে ঢাকা আকাশের মতই ভারী!যেন একটুপরই ঝড়-বৃষ্টি শুরু হবে।আমি কাছে গিয়ে একটু খোঁচা দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম-কি আন্টি, আপনি খুশি হননি(?) আমার প্রশ্নে বৃষ্টির বদলে যেন আগুন ঝরতে লাগলো আন্টির মুখ থেকে।সে আগুনে পুড়ে ভষ্ম হতে দেখলাম তার পূর্বের অহংকার।জামাই বেটারে আরেক দফা দোলাই দিয়া।কাতর কন্ঠে বললো-বাবা,আমি ভুল করছি।আমার অহংকার আল্লাহ মাটির সাথে মিশাইয়া দিছে।তুমি যে ছেলে নিয়ে আসছিলা সে ছেলের সাথে বিয়ে দিলে আজ আমাদের মান সম্মান টাকা পয়সা সব হারাতে হইতো না।মেয়ের জামাই তো পাইনি।পাইছি একটা গাধা।সে আমার মেয়েকে ভাত কাপড় কি দিবো, সময় মত বাসা বাড়াটাও দিতে পারে না।মেয়েটা আমার গলার ফাঁস হইছে…

আমি শান্তনা দিয়া কইলাম-আন্টি, বিয়ে শাদী সব আল্লাহর হাতে।যার সাথে মিলন হবে তা তিনিই ঠিক করে দেন।আপনার মেয়ের কপালে এই জামাই ছিল।তাই এসব নিয়ে মানুষের অহংকার করা ঠিক না।ধৈর্য ধরেন একটি ব্যবস্থা হবে।

আন্টি এবার কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বললো-হ্যাঁ, বাবা ঠিকই কইছো।কিন্তু কি করমু কও, আমি যা পারি দেই।এখানে সিজারের সব টাকাও আমরা দিচ্ছি।ও যা কামাই করে তা দিয়ে সে নিজেই চলতে পারেনা।মানুষের মেয়েরা স্বামীর টাকায় কত রঙ ঢং করে।অথচ আমার মেয়ের কোন স্বাদ আহ্লাদ পূরণ হয়নি! বলি কি বাবা,তোমার সাথে তো অনেক মানুষের পরিচয়।তুমি জামাইর জন্য বিদেশের ভালো একটা ভিসা দেইখো।টাকা পয়সা যা লাগে ধার কর্জ করে আমরা ব্যবস্থা করে দিমু…

আমি -আন্টি আপনার জামাই বিদেশে শ্রমিকে কাজ করবে!

আন্টি-বাবা রে, টাকা পয়সা ছাড়া সমাজে ভালো ভাবে বাঁচা যায় না।তাছাড়াও এখন ওর একটা মেয়ে হয়েছে।আগে দুই মুখ ছিল এখন তিন মুখ হইছে।কাজ না করলে ওদের মুখে খাবার দিবে কে? মেয়ের ভবিষ্যতের কথা তো ভাবতে হবে…

আন্টির বারংবার অনুরোধে আমি কিছুটা বাধ্য হয়ে একসময় বন্ধু পারভেজের সাথে ব্যাপার টা শেয়ার করি।পারভেজ সব শুনে হা হা করে হেসে দিয়ে বললো-ভিসাটা আমিই পাঠাবো।কাগজ পত্র পাঠানোর কিছুদিনের মধ্যে ভিসা হয়ে যায়।লেনদেনের পাঠ চুকিয়ে শাশুড়ির ইচ্ছা,বউয়ের আহ্লাদ পূরণ ও মেয়ের সুন্দর ভবিষ্যত গড়ার স্বপ্ন নিয়ে রায়হান পাড়ি জমায় প্রবাসে……।


লেখকঃ সম্পাদক, সময়ের জানালা