ফুটবল খেলতে খেলতেই রাজনৈতিক বিপ্লব!

দৃশ্যটা দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। একদল লোক হইহুল্লোড় করে ফুটবল খেলছেন। মাঠে তাঁদের খেলা দেখে শৈশবের দুরন্তপনার কথা মনে পড়ে যাবে যে কারও। খেলাটা ভালোই চলছিল ৪৫ মিনিট। কিন্তু খানিক বিরতিতেই বিপত্তির শুরু। নিরাপত্তাকর্মীরা সব ছুটে এলেন। রীতিমতো জোরজবরদস্তি করে সব খেলোয়াড়কে বের করে দেওয়া হলো মাঠ থেকে।

বিস্মিত হওয়ার বাকি আছে আরও। ফুটবল খেলতে খেলতে এমন তাড়া খেয়েও খেলোয়াড়দের মধ্যে খুব প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না। প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে কী হবে? এ যে নিয়মিত ব্যাপারই তাঁদের জন্য!

ভাবছেন, হলিউডের কোনো ছবির কাহিনি বলা হচ্ছে? বাস্তবেই ফুটবল খেলতে গিয়ে এভাবে লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন একদল মানুষ। এঁরা সবাই ব্যক্তিগতভাবে প্রতিষ্ঠিত এবং আধুনিক সমাজে অপরাধ বলে স্বীকৃতি পায়, এমন কোনো কুকীর্তি তাঁদের নেই। তবু কেন তাঁদের ভাগ্যে জুটছে লাঞ্ছনা? তা-ও আবার ফুটবল খেলতে গিয়ে!

কারণটা একটু অদ্ভুত। এই মানুষগুলো ফুটবল খেলেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। আনন্দের কিছু নেই এই খেলার মধ্যে। ভিয়েতনামের সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় বিরোধী মতের রাজনীতি করা খুব কঠিন। সে মানুষগুলোর প্রচার-প্রচারণা চালানোও কঠিন। গত মাসেই ফেসবুকের একটি পোস্ট (যে পোস্টটি রাষ্ট্রবিরোধী বলে দোষারোপ করা হয়েছে) দেওয়ার কারণে বিদ্রোহী মতবাদের একজনকে মাত্র এক দিনের বিচারে ১০ বছরের জেল দেওয়া হয়েছে। তাই গুয়েন চি তুয়েনের মতো বুদ্ধিমানেরা ফুটবল খেলেই নিজেদের কাজ সেরে নিতে চান।

চি তুয়েন হচ্ছেন ‘নো ইউ এফসি’ ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও চীনবিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী। ২০১১ সালে রাজনৈতিক কার্যক্রমের সুবিধার্থে তিনি এই ফুটবল দল গঠন করেন। দক্ষিণ চীন সাগরের সীমা নিয়ে চীনবিরোধী আন্দোলন ভিয়েতনামে জমে উঠেছিল। কিন্তু পুলিশের দমনপীড়নে সেটি ভেস্তে যাওয়ার পরই এই অভিনব চিন্তা মাথায় আসে চি তুয়েনের, ‘আমরা প্রকাশ্যে আলোচনা করার জায়গা খুঁজলাম।’

ফুটবল খেলার এ ছলনাতেও খুব বেশি যে কাজ হচ্ছে, তা না। চি তুয়েন জানান, ‘ফুটবল দল বানানোর পর থেকেই পুলিশ আর নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে ইঁদুর-বিড়াল খেলা চলছে।’ শুরুটা চীনবিরোধী আন্দোলন দিয়ে হলেও ধীরে ধীরে আলোচ্যসূচিতে যোগ হচ্ছে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মতো বিষয়গুলো। গত বছর এই ফুটবল দলে যোগ দিয়েছেন গুয়েন ত্রুং লিনহ। রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে জেলখাটা এই কর্মী ফুটবলের মাধ্যমেই ভিয়েতনামে গণজাগরণ সৃষ্টি করতে চাইছেন, ‘আমি এই দলে যুক্ত হয়েছি দেশে গণতন্ত্রের ডাক তুলতে। আমি চাই, সব ভিয়েতনামি একত্র হোক এবং শাসকদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নামুক।’

কাজটা খুব কঠিন। টাকা দিয়ে মাঠ ভাড়া করার পরও ম্যাচ বাতিল করে দেওয়া হয় নিরাপত্তার অজুহাতে। ম্যাচ শেষে আলোচনাও মাঝেমধ্যে পণ্ড হয়ে যায় পুলিশের হস্তক্ষেপে। নিরাপত্তাকর্মী কিংবা সাদাপোশাকের পুলিশের হাতে নিয়মিত নিপীড়নের শিকার হতে হয় এই দলের সদস্যদের। ২০১৫ সালের পর অন্তত ৩৬টি ঘটনা ঘটেছে, যেখানে শারীরিকভাবে আক্রমণের শিকার হয়েছেন বিরোধী মতবাদের লোকজন। তবে চি তুয়েনরা হাল ছাড়তে রাজি নন, ‘ওরা ছয় বছর ধরেই চেষ্টা করছে আমাদের দমানোর, কিন্তু পারেনি, ওরা ব্যর্থ।’ সূত্র: এএফপি।