ফের সংসার ভাঙছে শ্রাবন্তীর!

গত এক মাস ধরে গোটা টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রি জুড়ে সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রশ্ন, অভিনেত্রী শ্রাবন্তীর সঙ্গে তার স্বামী কৃষেণ ব্রজের সম্পর্ক কি ডেঞ্জার জোনে (বিপদজনক অবস্থায়)?

কখনও ফিল্মের পার্টি, কখনও ঘরোয়া আড্ডায় বারবার এই নিয়েই কথা চলছে। প্রশ্নের সঙ্গে অবশ্যই থাকছে একরাশ বিষণ্নতা।
ইন্ডাস্ট্রিতে মিষ্টি ব্যবহার, জুনিয়র-সিনিয়র সবাইকে সম্মান দিয়ে কথা বলা, টেকনিশিয়ানদের ভাল-মন্দ জিজ্ঞাসা করা, সাতে-পাঁচে না থাকার জন্য শ্রাবন্তীকে সবাই পছন্দ করেন। তার সম্পর্কে খারাপ কিছু শোনা গেলে কেউ আনন্দিত হন না।

তবে শ্রাবন্তী সম্পর্কে তার ঘনিষ্ঠদের অনুযোগ, তিনি কোনও সম্পর্কে জড়ালে নিজের দিকটা একেবারেই দেখেন না। তারা মনে করেন, যেকোনো সম্পর্কে শ্রাবন্তী নিজেকে বড় বেশি উজাড় করে দেন।

পরিচালক রাজীবের সঙ্গে বিয়ের পর পাঁচ বছর আর সিনেমা করেননি তিনি। কৃষেণের সঙ্গে বিয়ের পর কীভাবে তাকে নিয়ে ছবি বানানো যায় সেজন্য প্রচুর খেটেছেন তিনি, নিজের তারকা জীবন অগ্রাহ্য করে। বারবার চেষ্টা করেছেন সুপার মডেল স্বামীকে কীভাবে লঞ্চ করানো যায় বাংলা সিনেমায়।

এমনকী শোনা যায়, গত বছর জুলাই মাসে কলকাতার পাঁচতারা হোটেলে যখন তার আর কৃষেণের রেজিস্ট্রি বিয়ে হয়, সেই অনুষ্ঠান তারপর ডিনার সব কিছুর আর্থিক দায়িত্ব নিয়েছিলেন নায়িকা নিজে।

খবর ছিল, গত বছর রেজিস্ট্রি হলেও এবছর ঘটা করে কোনও পাঁচতারা হোটেলে দম্পতি অফিশিয়াল রিসেপশন দেবেন। তাহলে এখন ভাঙনের প্রশ্ন উঠছে কেন? শুধু ভাঙন না। শ্রাবন্তী নাকি ডিভোর্স(বিচ্ছেদ) ফাইল করেছেন এমন খবরও টালিগঞ্জের বাতাসে উড়ছে। এটা কি রটাচ্ছে নিন্দুকেরা? উত্তর, না। এর মধ্যে কিছু সত্যতাও রয়েছে। কিন্তু খবরের সূত্রপাত কী?

সূত্রপাত ফেসবুক। প্রায় দু’মাস আগে থেকেই শ্রাবন্তীর বর, সুপারমডেল কৃষেণ, শ্রাবন্তী বা শ্রাবন্তীর ছেলে ঝিনুকের সঙ্গে ছবি আপলোড না করে নিজের লোকজনের সঙ্গে ছবি আপলোড করা শুরু করেন। প্রথম দিকে কেউ পাত্তা দেননি। কিন্তু যখন ব্যাপারটা প্রায় রোজকার ঘটনাতে গিয়ে পরিণত হয়, তখন প্রথম ভ্রু কুঁচকানো শুরু হয় ইন্ডাস্ট্রিতে।

এর মধ্যে অবশ্যই আরও একটা তথ্য দেওয়া প্রয়োজন। বিয়ের পরেই শ্রাবন্তী নিজে উদ্যোগ নিয়ে প্রযোজক অশোক এবং হিমাংশু ধানুকার সঙ্গে একটা মিটিং করে একটা ছবিও অ্যানাউন্স করেন, যেখানে হিরো-হিরোইন হিসেবে অভিনয় করার কথা ছিল তাদের দু’জনের। তারপরেই ‘কফি হাউস’এ যুগ্মভাবে তারা সাক্ষাৎকার দেন। ছবি তৈরির জন্য ফ্ল্যাটের গোটা ড্রয়িং রুমটাই জিমে পরিণত করেছিলেন কৃষেণ। সেখানে বসেই তাদের প্রেম কাহিনির কথা বলেন তারা দু’জন। দুর্দান্ত হ্যাপি কাপল(সুখী দম্পত্তি) মনে হয়েছিল তাদের।
তারপর? শোনা যায়, যে ছবিটা তারা একসঙ্গে করবেন বলে ঠিক করেছেন সেই ছবির অর্ধেক ফান্ডিং(টাকা) জোগাড় করার কথা ছিল কৃষেণের। তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে কথা বলে যা জানা গেছে, সেই টাকা জোগাড় করতে অক্ষম হন কৃষেণ। তখন শ্রাবন্তী নিজে চেষ্টা করেন। তারপর তাদের দু’জনের মধ্যে কী হয়েছে সেটা ধোঁয়াশা। এর কিছুদিন পর থেকে তারা আলাদা আলাদা থাকতে শুরু করেন। শ্রাবন্তী থাকছেন তার বাবা মা ও ছেলের সঙ্গে। কৃষেণ নিজের পরিবারের সঙ্গে। তাদের দু’জনের মধ্যে, সব কিছু যে ঠিকঠাক নেই তা আরও পরিষ্কার হয়ে যায় শ্রাবন্তীর জন্মদিন, ১৩ আগস্ট।

যারা জানতেন ঝামেলা চলছে তারা ভেবেছিলেন স্বামী-স্ত্রীতে এগুলো হয় আবার কেটে যায়। অথচ তার জন্মদিনেও কৃষেণকে না দেখে তারা যথেষ্ট আশ্চর্য হন। শ্রাবন্তীও কিছু ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধবদের কাছে দুঃখ করেছেন, বারবার সম্পর্ক সংক্রান্ত তার এই দুর্ভোগে পড়া নিয়ে।
‘কফিহাউস’য়ের পক্ষ থেকে কৃষেণকে ফোন করা হলে তিনি ডিভোর্সের কথাটা একেবারে উড়িয়ে দিলেন। ‘দেখুন কিছু সমস্যা হয়েছিল। আমরা ঠিক করে নিয়েছি কথা বলে। ফেসবুকে কেন আমি আমার পরিবারের সঙ্গে ছবি দিচ্ছি, শ্রাবন্তীর সঙ্গে নয়, এই নিয়ে যদি কিছু মানুষ দুইয়ে দুইয়ে পাঁচ করেন সেটা তাদের সমস্যা। আমাদের নয়। আমরা বিচ্ছেদ করছি খবরটা একেবারে মিথ্যে’ সাফ বলেন কৃষেণ।
অন্য দিকে শ্রাবন্তীকে ফোন করা হলে তিনি যথেষ্ট বিরক্তির সঙ্গে জানান, এই প্রসঙ্গে কোনও কথা বলতেই চান না। ‘আমাকে এর আগেও ফোন করেছিলেন, আমি তখনও এই বিষয়ে কথা বলতে চাইনি। আমি বুঝতে পারছি না কে বা কারা আমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে এতটা আগ্রহী?’ প্রশ্ন করেন শ্রাবন্তী। তাকে যখন বলা হয়, তিনি একজন বড় তারকা এবং তার জীবন নিয়ে মানুষের একটা কৌতূহল থাকবেই। তখন তিনি বলেন, ‘আমরা তারকা বলে কি আমাদের কোনও ব্যক্তিগত জীবন নেই? প্রেস তো শুধু খবর করেই খালাস। তারপর আমাদের ফ্যামিলি আছে, আমাদের ব্যক্তিগত জীবন আছে। সেগুলো যখন আহত হবে, তখন কি প্রেস কিছু করবে আমাদের জন্য? আমি এই ব্যাপারে কিছু বলতেই চাই না। এখন মন দিয়ে কাজ করছি, তার মধ্যেও এই নতুন একটা ঝামেলা ইচ্ছাকৃত শুরু করা হচ্ছে আমাকে নিয়ে,’ এই বলে ফোন কেটে দেন শ্রাবন্তী।

ভারতের সংবাদ প্রতিদিনের খবরে বলা হয়, পুরো ব্যাপারটাই যে এখনও যথেষ্ট স্পর্শকাতর অবস্থায় সেটার আভাস শ্রাবন্তী এবং কৃষেণ, দু’জনের গলার আওয়াজেই পরিষ্কার। এরকম সংকটজনক অবস্থা থেকে ইন্ডাস্ট্রির অনেক বিবাহিত জীবন ফেরত এসেছে। আমাদের আশা, শ্রাবন্তী এবং কৃষেণ খুব তাড়াতাড়ি সেই হাসিখুশি পুরনো দিনগুলোয় ফেরত যাবেন। আর আগের মতোই একসঙ্গে পোজ দেবেন ফোটোগ্রাফারদের। হবে কি? এর উত্তর দিতে পারে একমাত্র অপেক্ষা।