বগুড়ায় স্ত্রীকে ঘরের ভেতর জীবন্ত কবর দেয়ার চেষ্টা

বগুড়ার শিবগঞ্জে যৌতুক না পেয়ে মারধরে অচেতন স্ত্রীকে ঘরের মেঝেতে জীবন্ত কবর দেয়ার চেষ্টা করে স্বামী। কিস্তির টাকা নিতে আসা ব্র্যাক সদস্যরা ঘটনা টের পাওয়ায় রক্ষা পেলেন গৃহবধূ সারজিনা খাতুন (২২)। মঙ্গলবার সকালে উপজেলার উত্তর কৃষ্ণপুর ধাওয়াকান্দি গ্রামে ঘটনার পর গ্রামবাসী সাদ্দাম হোসেনকে (২৫) আটক করে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখেন। বিকালে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।

সাদ্দাম হোসেন এবং তার মা জোসনা বেগমের বিরুদ্ধে সারজিনার বাবা আজিজার রহমান শিবগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন। বুধবার দুপুরে সাদ্দামকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

ব্র্যাক শিবগঞ্জ দাড়িদহ শাখার ম্যানেজার বামিনা শারমিন রুনি, পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, প্রায় চার বছর আগে দিনমজুর সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে সারজিনা খাতুনের বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের পর থেকে যৌতুকের জন্য সাদ্দাম তার স্ত্রীর ওপর নির্যাতন চালিয়ে আসছিল। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার সালিশ বৈঠকও হয়েছে। এত কিছুর পরও সারজিনা সংসারের মায়ায় বাবা-মার অমতে স্বামীর ঘরে ফিরে আসেন।

মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে যৌতুক নিয়ে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে সারজিনাকে মারধর ও ছুরিকাঘাতে হত্যার চেষ্টা করে সাদ্দাম। তখন সারজিনা পালিয়ে পাশের একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন এবং তাকে স্বামীর হাত থেকে বাঁচাতে অনুরোধ জানান। এ সময় ওই বাড়িতে ব্র্যাকের মাঠ কর্মকর্তা মেনেকা খাতুন কিস্তির টাকা আদায় করছিলেন। ক্ষুব্ধ সাদ্দাম ওই বাড়িতে এসে তাকে জোর করে বাড়িতে নিয়ে যায়। এ সময় সারজিনা তাদের কাছে বাঁচানোর আকুতি জানালেও গ্রামবাসী এগিয়ে আসেনি। কিছুক্ষণ পর ফিল্ড ভিজিটে বের হওয়া ব্র্যাক দাড়িদহ শাখার ম্যানেজার বামিনা শারমিন রুনি সেখানে আসেন। মাঠ কর্মকর্তা মেনেকা খাতুন তাকে সারজিনার কথা জানান।

ব্র্যাক ম্যানেজার রুনি তৎক্ষণাৎ আশপাশের লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে সাদ্দামের বাড়িতে যান। তারা জানালা দিয়ে দেখেন, আগেই খুঁড়ে রাখা ঘরের মেঝেতে সারজিনাকে পুঁতে ফেলা হয়েছে। শুধু মুখ বের হয়ে আছে। তখন জ্ঞান ফিরে প্রাণ বাঁচাতে সারজিনা চিৎকার দিলে সবাই মিলে দরজা ভেঙে সাদ্দামকে আটক ও সারজিনাকে মাটির নিচ থেকে তোলা হয়। এলাকাবাসী বলেছেন, আগের রাতেও সারজিনাকে মারধর ও চুলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছিল।

ব্র্যাক ম্যানেজার রুনি আরও জানান, ডিএমপির এক কর্মকর্তার মাধ্যমে বগুড়ার পুলিশ সুপারকে বিষয়টি জানান তিনি। শিবগঞ্জ থানার এসআই আবুল কালাম আজাদ বিকালে ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে গৃহবধূ সারজিনাকে উদ্ধার এবং সাদ্দাম হোসেনকে গ্রেফতার করেন। সারজিনাকে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। সাদ্দাম হোসেন উপজেলার উত্তর কৃষ্ণপুর ধাওয়াকান্দি গ্রামের মৃত হযরত আলীর ছেলে।

এসআই আজাদ জানান, ঘরের মেঝেতে গৃহবধূকে পুঁতে রাখার সত্যতা পাওয়া গেছে। সারজিনা অসুস্থ থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। সাদ্দাম বলেছে, হত্যার জন্য নয় ভয় দেখানোর জন্য সে এ কাজ করেছিল। তার মা জোসনা বেগম পালিয়ে যাওয়ায় তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। শিবগঞ্জ থানার ওসি শাহিদ মাহমুদ খান জানান, যৌতুকের কারণে স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলা হয়েছে। অন্য আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।