বছরের অর্ধেক দিন বন্ধ সুপ্রিম কোর্ট

বছরের প্রায় অর্ধেক দিনই বন্ধ থাকে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট। এই দীর্ঘ সময় আদালত বন্ধ থাকার কারণে মামলা জট বাড়ছে বলে অনেকে মনে করেন। চলতি জুন মাসেও অবকাশকালীন ছুটিতে আছেন বিচারপতিরা। গত ১১ জুন থেকে এ ছুটি শুরু হয়েছে। আদালত খুলবে ২ জুলাই।

সুপ্রিম কোর্টের ক্যালেন্ডার থেকে জানা যায়, বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে ১৭৯ দিনই বন্ধ। বাকি ১৮৬ দিন চলে বিচার কাজ। প্রতি সপ্তাহে সরকারি ছুটি দুই দিন। ৫২ সপ্তাহে ছুটি ১০৪ দিন। বিচারপতিরা অবকাশকালীন ছুটি কাটান বছরে চার বার। সপ্তাহিক ও সরকারি অন্যান্য ছুটি বাদে অবকাশকালীন ছুটি ভোগ করেন ৬২ দিন। এছাড়া সরকারি ছুটি আছে ১৩ দিন।

এদিকে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের ক্যালেন্ডার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ভারতে সুপ্রিম কোর্ট বন্ধ থাকে বছরে ১৩৭ দিন। বাকি ২২৮ দিন বিচারিক কার্যক্রম চলে। ভারতে সপ্তাহিক ছুটি এক দিন। ১১ মে থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত টানা অবকাশকালীন ছুটি কাটান বিচারকরা। এছাড়া ১৮ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ছুটি থাকে ভারতে। সাপ্তাহিক ছুটি বাদে অবকাশকালীন ছুটি কাটান ৫৪ দিন।

ভারত ও বাংলাদেশের ছুটির বিষয়টি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের উচ্চ আদালতের বিচারপতিরা ৪২ দিন বেশি ছুটি ভোগ করেন। তবে এই পার্থক্যটা তৈরি হয়েছে সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন হওয়ার কারণে। তবে বাংলাদেশের বিচারপতিরা অবকাশকালীন ছুটি কম কাটান আট দিন।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা দায়িত্ব নেয়ার পর ২০১৫ সালের শুরুর দিকে সুপ্রিম কোর্টের ছুটি কমানোর বিষয়ে কথা বলেন। পরে এ নিয়ে তিনি বৈঠকও করেন বিচারপতিদের সঙ্গে। কিন্তু পরে তা আর আগায়নি।

প্রধান বিচারপতি তখন এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমি হাইকোর্ট বিভাগে যখন জুনিয়র জাজ ছিলাম তখন আমি বিষয়টি অনুভব করেছিলাম। আমি ১০ বছর আগে ফুল কোর্টে আলোচনার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলাম। একজন বিচারপতি আমাকে সমর্থন করেছিলেন। তিনি এখানে আছেন। ছুটি কমানোর জন্য আলাপ করে দেখব, যাতে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ পথ বেরিয়ে আসে।’

সুপ্রিম কোর্ট সূত্র জানায়, প্রধান বিচারপতির এই তাগাদার পর বিচারপতিদের ফুল বেঞ্চের এক সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। তবে একজন বিচারপতি ছাড়া অধিকাংশ বিচারপতি অবকাশকালীন ছুটি না কমানোর পক্ষে মত দেন।

ছুটি না কমলেও অবকাশকালীন ছুটির সময় বেঞ্চের সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। চলতি ছুটিতেও প্রতিদিন পাঁচটি করে অবকাশকালীন বেঞ্চ বসছে। এর আগের অবকাশেও তুলনামূলক বেশি অবকাশকালীন বেঞ্চ দেয়া হয়েছিল। আগের চেয়ে সম্প্রতি সময়ের অবকাশে আইনজীবীদেরও বেশি দেখা যায় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে। জামিনসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক মামলা শুনানি হচ্ছে অবকাশকালীন বেঞ্চে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা অবকাশকালীন ছুটির পক্ষে। তারা মনে করেন, আদালত চলাকালীন সময়ে বিচারপতিরা রায় লিখতে পারেন না। অবকাশকালীন সময়ে তারা রায় লেখেন।

এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সফিক আহমেদ বলেন, ‘ইতিপূর্বে অবকাশকালীন ছুটি আরো বেশি ছিল। এখনতো অনেক কম ছুটি। তবে অবকাশেও কোর্ট খোলা থাকে। অবকাশকালীন বেঞ্চ বসে। তাছাড়া ছুটিতে বিচারকরা তাদের রায় লেখেন।’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকনও একই যুক্তি দেন। তিনি বলেন, সারা পৃথিবীতেই বিচারপতিরা অবকাশকালীন ছুটি ভোগ করেন। এসময় রায় লেখাসহ নানা কাজ করেন বিচারপতিরা।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গোলাম সরওয়ার পায়েল বলেন, ‘বিচারপতি ও আইনজীবীদের জন্য অবকাশের প্রয়োজন আছে। আদালত চলাকালীন সময়ে বিচারপতিরা তাদের রায় লিখতে পারেন না। অবকাশে তারা সেই কাজটিই করেন।’

পায়েল বলেন, ‘তবে উচ্চ আদালতের মামলা জট কমাতে নতুন কোনো পদ্ধতির কথা চিন্তা করা যেতে পারে। বেশি করে অবকাশকালীন বেঞ্চ দেয়া যেতে পারে।’

অবকাশে আইনজীবীদের সমস্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অবকাশে আইনজীবীরা বেকার হয়ে যায়। মামলা নেওয়া যায় না। তাদের আয় কমে যায়।

প্রধান বিচারপতি থেকে শুরু করে জাতীয় সংসদে দেশের আদালতগুলোতে মামলা জট নিয়ে কথা হচ্ছে। বর্তমান প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাও মামলা জট কমাতে কাজ করে যাচ্ছেন। সুপ্রিম কোর্ট থেকে বিভিন্ন সময়ে এ সংক্রান্ত দিক নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।