বদলে যাচ্ছে জাতীয় চিড়িয়াখানা

ঢেলে সাজানো হচ্ছে ঢাকা জাতীয় চিড়িয়াখানাকে। এ লক্ষ্যে নেয়া হয়েছে বিশেষ পরিকল্পনা। ১৯৬০ সালে ১৮৬ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এই চিড়িয়াখানার জমি পুরোপুরি ব্যবহার করতে পুরাতন মডেলে আনা হচ্ছে আমূল পরিবর্তন। নতুন পরিকল্পনার মধ্যে রাখা হয়েছে শিম্পাঞ্জির ফাইটিং শো, ডলফিনের র‌্যাসলিং শো। একেবারে বন্য পরিবেশে বাঘ সিংহ ও অন্যান্য প্রাণীর থাকার ব্যবস্থা।

অত্যাধুনিক ও একমুখী রাস্তা, অসুস্থ ও বয়স্কদের চলাচলের জন্য টলি এবং যাদের জন্য পাহাড় টপকানো কষ্টসাধ্য তাদের সুবিধার্থে নির্মাণ করা হবে আন্ডারপাস। থাকছে লেক সাফারি ও এনিমেল সাফারির ব্যবস্থাসহ লায়ন মঠ ও টাইগার মঠ। যেখানে সিংহ ও বাঘের খাঁচার বদলে থাকবে চারদিকে পানির লেক ও স্টিলের রড দিয়ে তৈরি নিরাপত্তা বেষ্টনি।

বনের পশুকে ধরে এনে একেবারে বন্য পরিবেশে ছেড়ে দেয়া হবে এই মঠ ও সাফারির মধ্যে। অন্যান্য প্রাণী রাখার স্থানগুলোও ঢেলে সাজানো হবে। যেদিকে বাঘ থাকবে সেদিকে শুধু বাঘই থাকবে। প্রতিটি প্রাণীর জন্যও আলাদা আলাদা এলাকা থাকবে। শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়নই নয়। নতুন করে কেনা হবে বেশকিছু দেশি-বিদেশি প্রাণী। দেশের অভ্যন্তরের অঞ্চল ভিত্তিক নিয়মিত ও দুষ্প্রাপ্য প্রাণীও সংগ্রহ করে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হবে।

চিড়িয়াখানার কিউরেটরের কার্যালয় থেকে জানা গেছে, উন্নয়নের মধ্যে রয়েছে, উন্নতমানের গাড়ি পার্কিং এলাকা নির্মাণ, প্রধান ফটক এবং অন্যান্য ছোট ফটক (শিশু পার্ক), সুরক্ষা দেয়াল, দিকনির্দেশক, সব শ্রেণির মানুষের সহজে যাতায়াতের জন্য সিঁড়ি, দর্শকদের জন্য বসার ব্যবস্থা (ফুটপাথ এবং পার্কে ছাউনি এবং ছাউনি ছাড়া), রেলিং, সড়ক দ্বীপ, রোড ডিভাইডার ও বিভিন্ন গাছের পাত্র, রাস্তায় এবং বাগানে আলোর ব্যবস্থা, ফুট ওভারব্রিজ, আন্ডারপাস, দর্শকদের জন্য আলাদা রাস্তা (একমুখী) এবং দেয়াল ও বনায়ন (ভূপ্রাকৃতিক)। দর্শকদের জন্য খাঁচার নিরাপত্তায় স্টিল গ্রিলের সঙ্গে বিশেষায়িত কাচের আবরণ ব্যবহার করা হবে।

এছাড়াও ব্যবহার হবে লোহার জাল। বিশেষ কাচের দেয়াল থাকায় দর্শকরা সবচেয়ে কাছ থেকে প্রাণীদের দেখতে পারবেন। প্রত্যেক প্রাণীর নিজস্ব আবাসস্থলের মতো পরিবেশ তৈরি করতে খাঁচার ভেতরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে স্ব-নিয়ন্ত্রিত বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা। এছাড়াও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ঢাকা চিড়িয়াখানায় বসানো হবে দুষ্প্রাপ্য প্রাণীদের দশটি ম্যুরাল। নির্মাণ করা হবে চিড়িয়াখানার কিউরেটরের দপ্তর, একটি প্রধান এবং চারটি নিরাপত্তা অফিস, প্রাণী হাসপাতাল ছাড়াও কর্মকর্তাদের জন্য নতুন একটি অফিসার্স কোয়ার্টার।

ঢাকা জাতীয় চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. মো. আবদুর রাজ্জাক মানবজমিনকে বলেন, ঢাকার জাতীয় ও রংপুরের চিড়িয়াখানা উন্নয়নে একটি বড় প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। গত বছর এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। কিন্তু কমিশন এই প্রকল্প অনুমোদনের আগে একটা মাস্টারপ্ল্যান প্রস্তুত করার নির্দেশ দিয়েছে। এখন মাস্টার প্ল্যান নিয়ে কাজ চলছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের নিয়ে মাস্টারপ্ল্যানটি তৈরি করা হবে। এতে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ ও বিদেশি এক্সপার্টদের পরামর্শ নেয়া হবে। এক বছরের মধ্যে মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কাজ শেষ হতে পারে। তিনি বলেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে চিড়িয়াখানার প্রাণীরা ফিরে পাবে বনের পরিবেশ আর দর্শকরা পাবেন উন্নত বিশ্বের আদলে ব্যতিক্রমী চিড়িয়াখানা।

ঢাকা চিড়িয়াখানার কিউরেটর এসএম নজরুল ইসলাম বলেন, বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম এই চিড়িয়াখানা ঢেলে সাজাতে ৩৫০ কোটি টাকার প্রাথমিক প্রকল্প গ্রহণ করে সুপারিশ করা হয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে। এটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে জমা দিলে আগে মাস্টারপ্ল্যান তৈরির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমাদের চিন্তা-ভাবনা অনুযায়ী মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে সেটা বাস্তবায়ন করতে ৪ থেকে ৫ বছর সময় লেগে যেতে পারে। একই সঙ্গে সর্বসাকুল্যে খরচ দাঁড়াতে পারে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। নতুন এই মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী সম্পূর্ণ বন্য পরিবেশের আবহ আনা হবে। প্রাথমিকভাবে এই মাস্টারপ্ল্যান তৈরিতে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দলকে দায়িত্ব দেয়া হবে।

পরবর্তীতে বুয়েট টিম বিদেশি পরামর্শকদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করবে। চিড়িয়াখানার পশু-পাখির খাঁচাকে সম্পূর্ণভাবে বন্য আবহে তৈরি করতে একজন জাপানি জু-আর্কিটেকচার এবং একজন জু-কনসালটেন্টের সহায়তা নেয়া হবে। প্রচলিত পদ্ধতির প্রাণী খাঁচাকে বদলে আধা প্রাকৃতিক, প্রাণীবান্ধব ও তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় বিশিষ্ট খাঁচা তৈরি করা হবে। দর্শকদের জন্য খাঁচার নিরাপত্তায় স্টিল গ্রিলের সঙ্গে বিশেষায়িত কাচের আবরণ ব্যবহার করা হবে। এছাড়াও ব্যবহার হবে লোহার জাল। বিশেষ কাচের দেয়াল থাকায় দর্শকরা সবচেয়ে কাছ থেকে প্রাণীদের দেখতে পারবেন। প্রত্যেক প্রাণীর নিজস্ব আবাসস্থলের মতো পরিবেশ তৈরি করতে খাঁচার ভেতরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে স্ব-নিয়ন্ত্রিত বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা। এমজমিন