বনানীতে ফের ধর্ষণ: কি আছে তরুণীর ধর্ষণ মামলার এজহারে?

রাজধানীর অভিজাত এলাকা বনানীর রেইন ট্রি হোটেলে দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের দুই মাস কাটতে না কাটতে আবারো জন্মদিনের অনুষ্ঠানে ডেকে নিয়ে রাতভর এক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এবার অভিযোগের তীর বনানীর ব্যবসায়ী বোরহানউদ্দিনের ছেলে বাহাউদ্দিন ইভানের (২৮) দিকে।

মঙ্গলবার রাতে বনানীর ২ নম্বর রোডের ২১৪ ন্যাম ভবনে ওই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে বলে তরুণীর মামলার বিবরণী থেকে জানা গেছে। বুধবার ইভানের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন তিনি।

জানা গেছে, অভিযুক্ত ইভান বিবাহিত এবং তার এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। আর উত্তরাঞ্চলের একটি জেলার দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা দেওয়া তরুণীর বর্তমান বসবাস বারিধারা ডিওএইচএসে।

এর আগে জন্মদিনের পার্টিতে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ এনে গত ৬ মে বনানী থানায় মামলা করেন এক ছাত্রী। বনানীর রেইন ট্রি হোটেলে ধর্ষণের এ ঘটনা সারা দেশে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

পুলিশ ঘটনায় জড়িত আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ ও তার বন্ধু নাঈম আশরাফকে গ্রেপ্তার করে। তারা এখনো কারাগারে আছেন।

এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই রাজধানীর অভিজাত এলাকায় আরো একটি ধর্ষণের অভিযোগ পেল পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ সম্ভাব্য সব জায়গায় অভিযান চালালেও অভিযুক্ত ইভানকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

মামলার এজাহারে ওই তরুণী উল্লেখ করেছেন, ১১ মাস আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তাদের বন্ধুত্ব হয়। এর সূত্র ধরেই তাদের দেখা-সাক্ষাৎ হতো এবং ঘোরাঘুরি করতেন।

চার মাস আগে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ঘটনার দিন রাত নয়টায় ইভান ফোন করে ওই তরুণীকে জন্মদিনের কথা বলে তার বাসায় যেতে বলে এবং বলে, তার মায়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে।

এজাহারে তরুণী উল্লেখ করেন, ‘আমাদের সম্পর্কের বিষয়টি তাহার (ইভান) মাকে জানাবে মর্মে জানায় এবং টেলিফোনে তাহার মায়ের পরিচয় দিয়ে একজন মহিলা আমার সঙ্গে কথা বলে আর আমি তাকে তাহার মা মনে করি। তারপর আমি আমার আপুর সঙ্গে কথা বলে রাত সাড়ে ১০টায় রিকশা করে তাহার বাসার সামনে পৌঁছালে সে আমাকে রিসিভ করিয়া তাহার বাসায় নিয়ে যায়।’

ওই তরুণী বাসায় গিয়ে আর কাউকে দেখেননি। জানতে চাইলে ইভান জানায়, তার বাবা-মা অসুস্থ। তাই ঘুমিয়ে আছেন। জোরে কথা বলা যাবে না।

এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, ‘বাসায় জন্মদিনের অনুষ্ঠানের কোনো আলামত দেখি না। আমি ভয় পাই এবং বাসায় আসতে চাই। কিন্তু সে বাসায় আসতে দেয় না। সে আমাকে রাতে খাবার খাওয়ায় এবং নেশাজাতীয় দ্রব্য খাওয়ায়। আমি তাকে নিষেধ করিলে সে একদিন খেলে কিছু হবে না মর্মে জানায়।’

এরপর রাত দেড়টায় ইভান তাকে ধর্ষণ করে বলে তরুণী এজাহারে উল্লেখ করেছেন। তিনি আরো বলেন, ‘আমি চিৎকার করিতে থাকিলে সে রাত সাড়ে তিনটায় আমার ব্যাগ রেখে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।’

তরুণীর ভাষ্যে, ‘ব্যাগে তিনটা ড্রেস- ২টা জিনস, একটা কুর্তা, ৩টি মোবাইল, চার্জার, সিম কার্ড, মেমোরি কার্ড ও নগদ ১৫ হাজার টাকা ছিল।’

বাসা থেকে রাতে বের করে দেওয়ার পর পথচারী ভদ্রলোকের সহায়তায় তিনি থানায় আসেন বলেও উল্লেখ করেন।

এজাহারে তরুণী আরো বলেন, ‘আসামি আমাকে এর আগেও বিবাহের প্রলোভনে ধর্ষণ করে। আমাকে ভয় দেখায়, মুখ খুলিলে তাহার নিকট আছে এমন খারাপ ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিবে।’

কিছুটা সুস্থ হয়ে এবং আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কথা বলে এজাহার দিতে দেরি হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন উত্তরাঞ্চলের এই তরুণী।