বনানীর ধর্ষণ মামলা: আসামির সঙ্গে ধর্ষিতা তরুণীর কথোপকথন প্রকাশ

আপন জুয়ালার্সের মালিকের ছেলের বিরুদ্ধে করা বনানী থানায় ধর্ষণ মামলাটি বেশ আলোচনায়। ঘটনার প্রায় এক মাস পর এ মামলা করায় অনেকে প্রশ্ন তুলছেন বাদীর বিরুদ্ধেও। অথচ ভিকটিম বিষয়টি নিয়ে আগেই মুখ খুলতে চেয়েছিলেন। তবে মুখ খুললে আরও সমস্যা হতে পারে বলে তাকে সতর্ক করেন মামলার তিন নম্বর আসামি সাদমান সাকিফ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাদী ও সাকিফের চ্যাটিংয়ের স্ক্রিনশট থেকে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।

গত ২৮ মার্চ জন্মদিনের পার্টিতে দাওয়াত দিয়ে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয় বলে মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে। তবে এক মাসের বেশি সময় পর গত শনিবার এ বিষয়ে মামলা করা হয়। ওই মামলার এক নম্বর আসামি আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে শাফাত আহমেদ, দুই নম্বর আসামি নাঈম আশরাফ।

যদিও ঘটনার দুইদিন পর অর্থাৎ ৩১ মার্চ সাদমান সাকিফের সঙ্গে এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কথা হয় বলে দাবি করেছেন বাদী। তার ব্যবহৃত মুঠোফোন থেকে সেই কথোপকথনের স্ক্রিনশটটি প্রথম আলোর প্রতিবেদকের কাছে পাঠান। যা ওই সংবাদ মাধ্যমের সৌজন্যে হুবহু তুলে দেওয়া হলো-

সাদমান সাকিফ : এসব কথা বলে আর কি হবে।

তরুণী : আমি তো বের হচ্ছিলাম। আমাদের তো আসতে দিচ্ছিল না। আমার ফ্রেন্ড এর কার কি (গাড়ির চাবি) আটকে রেখেছে তোমার সামনে।

সাদমান : সবার আরও প্রবলেম (সমস্যা) হবে।

তরুণী : ইউ স ইট উইথ ইওর ওন আইজ (তুমি নিজের চোখে দেখেছ)। সবার প্রব (সমস্যা) হোক। বাট ওর পানিশমেন্ট (শাস্তি) পেতে হবে। আমি ওদের কাউকে ব্ল্যাকমেইল করছি না।…লাইফ তো ছিল। বাট আমি সব সময় এইটা প্রে (দোয়া) করতাম এই সব বাজে জিনিস যাতে আমি ফেইস (মুখোমুখি না হই) না করি। বাট সি অ্যাগেইন আমি ফেইস করছি (কিন্তু দেখ আমি মুখোমুখি হলাম)। আমি যদি চুপ করে থাকি তাইলে হবে না। ওরা আমাদের সাথে করছে। এমন অনেক মেয়েদের সাথেই করতে পারে।

সাদমান : লার্ন ফ্রম মিসটেকস ইন লাইফ (জীবনের ভুল থেকে শিক্ষা নাও)। করতে পারে। জাস্ট প্রে টু আল্লাহ (আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করো)।

তরুণী : তুমি আমাদের প্লেসটাতে নিজেকে রেখে ফিল করো (আমাদের জায়গা থেকে বোঝার চেষ্টা করো)।

সাদমান : তোমার কি মনে হয় না উনি আরও খারাপ কিছু করবে। এইসব বলে তাকে খেপালে। আমাকে প্রব করবে (আমাকে সমস্যায় ফেলবে)। আমি আর কিছু বলতে পারব না। অলরেডি প্রবে আছি (এরই মধ্যে সমস্যায় আছি)।

তরুণী : খারাপ কিছু আর কি করবে আমার। যা করার করছে। মাইরা ফেলুক। বাট আই ওন্ট স্টপ। (কিন্তু আমি চুপ করে থাকব না)।

সাদমান : ওকে। যা খুশি করো। আমি আর বোঝাতে পারব না।

তরুণী : ওকে।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, তাদের পুরোনো এক বন্ধু প্রধান আসামির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। পরিচয়ের সপ্তাহ দুয়েক পর ২৮ মার্চ তাদের দুজনকে ওই আসামি তার জন্মদিনের পার্টিতে দাওয়াত করেন। অনেক অনুরোধের পর তারা ওই পার্টিতে যান, যা ছিল বনানীর একটি চার তারকা হোটেল ও রেস্তোরাঁয়। ওই পার্টিতে ওই দুই শিক্ষার্থীর পুরোনো বন্ধুও ছিলেন। তবে অনুষ্ঠান শেষে তাদের ফেলে তিনি চলে যান।

আসামিরা তখন তাদের হোটেলের দুটি কক্ষে আটকে ফেলেন। সে সময় আসামিদের সঙ্গে দেহরক্ষী ও গাড়িচালক ছিলেন। প্রধান আসামি ও তার এক বন্ধু ওই দুই ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন। তাদের ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করেন আসামির গাড়িচালক।

ওই মামলার বাকি আসামিরা হলেন- শাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও অজ্ঞাতনামা দেহরক্ষী।