বন্যায় সহস্রাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ

দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের ২০ জেলায় বন্যার কারণে সহস্রাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। প্রতিনিয়ত উজান থেকে নামা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিরপাতের কারণে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যা কবলিত এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা বাতিল হয়ে গেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

তথ্যমতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনোটি আংশিক, কোনোটি পুরোপুরি ক্ষতি হয়েছে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পানিবন্দি হয়ে পড়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর আসবাবপত্র, বই-খাতাসহ স্কুলের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নষ্ট গেছে। ফলে শিশুদের লেখাপড়া চরম বিঘ্নিত হয়েছে।

বিশেষ করে কিছু জেলায় মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল-মাদ্রাসায় অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষা বন্ধ করে দিতে হয়েছে। বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষার্থীরা। স্কুল বন্ধ থাকায় এসব শিক্ষার্থীর ক্লাস, অভ্যান্তরীণ বিভিন্ন পরীক্ষা নেয়া যায়নি। আগস্টে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা নেয়ার কথা। বন্যা পরিস্থিতি চলমান থাকলে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে এই পরীক্ষা পিছিয়ে যেতে পারে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সারাদেশে প্রায় দেড় হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে, বেসরকারি কেজি স্কুল, এমপিওবিহীন স্কুল-মাদ্রাসার অনেকগুলো সরকারি হিসাবে উঠে আসেনি। ওইগুলোসহ ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আড়াই হাজার হতে পারে বলেও কেউ কেউ ধারণা করছে।

জানা গেছে, বন্যা শেষ না হওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা যায়নি। বিভিন্ন জেলা থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি), প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) এবং শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরে (ইইডি) ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা ও ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক হিসাব পাঠানো হয়েছে।

সে অনুযায়ী প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্তত ২০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

ডিপিই মহাপরিচালক ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানান, এখনো সারাদেশের বন্যায় সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষতির পরিমান জানা যায়নি। শিক্ষকদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ১ হাজার ৯৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা পাওয়া গেছে। পানি নেমে গেলে এসব প্রতিষ্ঠানের দ্রুত সংস্কার কাজ করা হবে।

তিনি বলেন, পানি নেমে গেলে প্রকৃত ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ পাওয়া যাবে। ছেলেমেয়েদের বইপত্র নষ্ট হয়ে গেলে তাদের নতুন বই দেয়া হবে। লেখাপড়ার ক্ষতি পূরণে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে অতিরিক্ত ক্লাস নেয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলেও তিনি জানান।

অন্যদিকে, মাউশি পরিচালক অধ্যাপক এলিয়াছ হোসেন বলেন, জেলা পর্যায় থেকে বন্যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষয়-ক্ষতির তালিকা পাঠানো হচ্ছে। এর মধ্যে অবকাঠামোগত ক্ষতি দূর করতে প্রতিষ্ঠান সংস্কার করা হবে। মন্ত্রণালয় থেকে ইতিমধ্যে ইইডিকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

পাশাপাশি আমরাও একটি তালিকা পাঠিয়েছি। আমাদের কাছে আসা তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ২৮৮টি প্রতিষ্ঠান আংশিক বা পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ডিপিইতে মনিটরিং সেলের সহকারি পরিচালক নুরুল আমিন জানান, গত মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ১ হাজার ৯৩টি শুধু প্রাথমিক স্কুলের ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ১৫ কোটি টাকা। তবে এই ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। বন্যার পানি নেমে গেলে প্রকৃত হিসাব পাওয়া যাবে।

তিনি আরও জানান, আমরা ৬৪ জেলা থেকেই ক্ষতিগ্রন্ত প্রতিষ্ঠানের তথ্য চেয়েছি। এর মধ্যে ২০ জেলা থেকে তথ্য পাওয়া গেছে। ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় শীর্ষে আছে সিরাজগঞ্জ। ওই জেলার ২০০ স্কুল পানির নিচে। জামালপুরে ১৬১, গাইবান্ধায় ১৩০টি, কুড়িগ্রামে ৯৫টি, বগুড়ায় ৭৩টি, লালমনিরহাটে ১১টি, রংপুরে ৪টি এবং নীলফামারিতে ২টি স্কুল এই তালিকায় আছে। এছাড়া মানিকগঞ্জ, চাঁদপুর, চাপাইনবাবগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, বান্দরবান এবং রাঙ্গামাটিতেও কিছু প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অপরদিকে মাধ্যমিক পর্যায়ে ২৮৮টি বলা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান প্রায় ৫শ’ হবে বলে জানা গেছে। মাউশির সিলেট আঞ্চলিক অফিস থেকে গত ১৭ জুলাই ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের তালিকা পাঠানো হয়েছে।