বর্ষাকালে যে দুই গ্রামের মেয়েদের বিয়ে হয় না!

শিরোনাম দেখে কি চমকে উঠলেন! ভাবতে পারেন ডিজিটাল ও চরম সভ্যতার যুগে এমন ভুতুড়ে গ্রাম কি আছে? জ্বী হ্যাঁ! এমন দুটি গ্রাম হচ্ছে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নের ভাদালীডাঙ্গা ও হলিধানী ইউনিয়নের নাটাবাড়িয়া।

বর্ষা সমাগত হলে গ্রাম দুটিতে বিয়ের অনুষ্ঠান বন্ধ থাকে। বিশেষ করে গ্রামের মেয়েদের বিয়ে হয়-ই না। কারণ বরযাত্রীরা ওই কাদার সমু হ্রদ পেড়িয়ে নয়া বৌ নিয়ে স্বাভাবিকভাবে ফিরতে পারবে না। এমনকি কাদাপানির কারণে স্কুলে উপস্থিতিও কমে আসে। বৃদ্ধা ও রোগীদের কোলে করে উঠতে হয় পাকা রাস্তায়।

ভাদালীডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি মেম্বর আবুল কালাম জানান, দুর্গাপুর মল্লিক বাড়ির মোড় থেকে বেতাই গ্রাম হয়ে ভাদালীডাঙ্গা সড়কটি চলাচলের অযোগ্য। তিনি বলেন, কাদাপানির কারণে এ সময়টায় কোনো বাড়িতে বিয়েও হয় না। এমনকি বাড়ি থেকেও কেউ খুব একটা বের হয়না। বলা যায়, কাদাপানিতে অবরুদ্ধ দশা হয় গ্রামবাসীর।

ভাদালীডাঙ্গা গ্রামের আনিছুর রহমান জানান, দুর্গাপুর কচাতলার মোড় থেকে ভাদালীডাঙ্গা গ্রামের রায়হানের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তাটি এতটাই খরাপ যে রোগী ও বৃদ্ধ মানুষ কোলে করে নিয়ে চলাচল করতে হয়। কাদার জন্য মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারে না।

তার মতে, ডিজিটাল এই যুগে এমন রাস্তার কথা কেউ কল্পনাও করতে পারে না। হলিধানী ইউনিয়নের নাটাবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা শামীম হোসেন জানান, পাঁক-কাদার কারণে তাদের গ্রামের বাদশাকে তার অসুস্থ স্ত্রীকে সেদিন কোলে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। সে এক অমানুষিক পরিশ্রম আর ঝুঁকির কাজ ছিল রোগী আর তার স্বামীর জন্য। এমন অবস্থা কমবেশি সবার।

দেখা গেছে, এই সময়টায় দুটি গ্রামের কেউ মারা গেলেও স্বজনরা পড়েন মহাবিপদে। কারণ, মরদেহ দাফন-সৎকারের কাজটাও কঠিনতর এই গ্রাম দুটিতে।

নাটাবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম জানান, বর্ষার সময় স্কুলে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ৩০ শতাংশ কমে যায়। উল্লেখিত দুটি কাঁচা রাস্তা পাকা করার দাবী এলাকাবাসীর বহুদিনের। কিন্তু জনপ্রতিনিধিদের দুর্বল তৎপরতা আর এলজিইডির গাফলতির কারণে ভাদালীডাঙ্গা ও নাটাবাড়িয়া গ্রামের মানুষ এখনো সেই ভুতুড়ে পরিবেশে বসবাস করছেন।