বাংলাদেশের নেতৃত্বে রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংস কার্যক্রম পরিদর্শন

রাসায়নিক অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ সংস্থা (অর্গানাইজেশন ফর দ্য প্রোহিবিশন অব কেমিক্যাল উইপনসের (ওপিসিডব্লিউ) একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল চীনের পরিত্যক্ত রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংস কার্যক্রমের অগ্রগতি পরিদর্শন করেছেন।

নেদারল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও ওপিসিডব্লিউয়ের স্থায়ী প্রতিনিধি শেখ মোহাম্মদ বেলালের নেতৃত্বে গত ১২-১৫ জুন প্রতিনিধিদলটি চীন সফর করে।

এর মধ্য দিয়ে রাসায়নিক অস্ত্রের অভিশাপমুক্তি বিশ্ব বিনির্মাণে নেতৃত্বে রয়েছে বাংলাদেশ।

চলতি বছরের মার্চে ওপিসিডব্লিউয়ের নির্বাহী পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয় বাংলাদেশ। এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটির শীর্ষ পদে নির্বাচিত হয়।

পাকিস্তানের প্রার্থী রাষ্ট্রদূত ইফফাত ইমরান গারদেজিকে হারিয়ে নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং ওপিসিডব্লিউতে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি শেখ মোহাম্মদ বেলাল ২০১৭-২০১৮ মেয়াদের জন্য সংস্থাটির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন।

১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত চীনের বেশ কিছু অংশ জাপানের নিয়ন্ত্রণে ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য সেসব এলাকায় রাসায়নিক অস্ত্রের মজুত গড়ে তোলে জাপান। পরে আত্মসমপর্ণের পর রাসায়নিক অস্ত্রগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় রেখে যায় দেশটি।

রাষ্ট্রদূত শেখ মোহাম্মদ বেলালের নেতৃত্বে ৩৩ সদস্যের ওপিসিডব্লিউয়ের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলে ছিলেন ওপিসিডিব্লউয়ের মহাপরিচালক, স্পেন, ইরান, জার্মানি, সৌদি আরব, ডোমিনিকান রিপাবলিক, শ্রীলংকা, রাশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, চীন, পাকিস্তান, সেনেগাল ও কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসহকারী মন্ত্রীর অধীন থ্রেট রিডাকশন অ্যান্ড আর্মস কন্ট্রোল দফতরের প্রিন্সিপাল ডিরেক্টর।

সফরে ওপিসিডব্লিউ প্রতিনিধিদলটি চীনের উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লি বাওদোং এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মেজর জেনারেল উ জিয়াওই এর সঙ্গে বৈঠক করেন।

এছাড়াও দলটি উত্তর-পূর্ব চীনের জিলিন প্রদেশের হায়েরবালিং এসিডব্লিউ সাইটটি পরিদর্শন করেন। সেখানে তারা রাসায়নিক অস্ত্র খনন, চিহ্নিতকরণ ও ধ্বংস কার্যক্রম সরেজমিনে পরিদর্শন করেন।

যেভাবে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে রাসায়নিক অস্ত্রের হোতা দেশ জাপান ও ভুক্তভোগী দেশ চীন অস্ত্র ধ্বংস কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তার ভূয়সী প্রসংশা করেন প্রতিনিধিদলের প্রধান শেখ মোহাম্মদ বেলাল।

এ সময় রাসায়নিক অস্ত্রমুক্ত পৃথিবী গড়ার জন্য এ প্রকল্প সফল করতে ওপিসিডব্লিউয়ের পক্ষ থেকে এ জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি । বেলাল বলেন, বর্তমান সভ্য সমাজে রাসায়নিক অস্ত্রের কোনো জায়গা হতে পারে না।

সফর শেষে বেলাল চীনে রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংস কর্মসূচির অবস্থা উল্লেখ করে ২০২২ সালের মধ্যে তা শনাক্তকরণ, উদ্ধার ও ধ্বংসের জন্য চীন ও জাপানের প্রতি নির্দেশনা দেন।

হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চীনের ৯০টিরও বেশি এলাকায় প্রায় ৫৬ হাজার এসিডব্লিউ সম্পর্কিত উপাদান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে গত মে মাস পর্যন্ত প্রায় ৪৬ হাজার উপাদান ধ্বংস করা হয়েছে। এর বাইরে হায়েরবালিং সাইটে আরও তিন লাখ ৩৩ হাজারেরও বেশি এসিডব্লিউ উপাদান রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এগুলো ধ্বংসের জন্য প্রয়োজনীয় খনন ও তা শনাক্তের কাজ করতে হবে। এসিডব্লিউ ধ্বংস কার্যক্রম সহজ করতে রাসায়নিক অস্ত্র কনভেনশন একটি কাঠামো দিয়েছে। এ কনভেনশনের তদারক সংস্থা হিসেবে ওপিসিডব্লিউ ধ্বংস প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় কারিগরি সহযোগিতা দিয়ে থাকে।

রাসায়নিক অস্ত্র চুক্তিতে গৃহীত পরিকাঠামো অনুযায়ী রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংস কর্মসূচি নেওয়া হয়। ওপিসিডব্লিউ ধ্বংস কর্মসূচি তত্ত্বাবধান করে ও কারিগরি সহায়তা দেয়।