বাগেরহাটে ভেসে গেছে ১০০ কোটি টাকার মাছ

টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ভেসে গেছে বাগেরহাটের ১০ হাজার ৬ শত ৫০টি মৎস্য ঘেরের (মাছের খামার) শত কোটি টাকার মাছ। আরো কয়েকদিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে বাগেরহাট জেলায় আরো কয়েক হাজার চিংড়ি ও সাদা মাছের ঘের ভেসে যাবে বলে আশংকা করছে সংশ্লিষ্ট মৎস্য চাষীরা। তবে এপযর্ন্ত প্রাথমিক হিসেবে দেশের রপ্তানি পণ্য গলদা, বাগদা চিংড়ি ও সাদা মাছের প্রায় ৫৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে জেলা মৎস্য বিভাগ।

জোয়ারের পানির চাপে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার ডুমুরিয়া এলাকার চিত্রা নদীর ভেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছেন মৎস্য চাষীরা। এর ফলে কয়েক হাজার মাছ চাষী দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

জেলা মৎস্য বিভাগ বলছে,গত কয়েক দিনের অবিরাম বৃষ্টিপাত ও জোয়ারের পানি ঢুকে চিংড়ি ঘেরগুলোতে পানি থৈ-থৈ করছে। চিতলমারী উপজেলার ডুমুরিয়া, কালশিরা, শ্রীরামপুর ও ভেন্নাগাতিসহ ৭টি গ্রাম ও রামপাল উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বেশকিছু এলাকায় বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে ১০ হাজার ৬শত ৫০টি মাছের ঘের। এতেকরে মাছ চাষীদের হিসেবে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। অধিকাংশ চাষী ঋণ নিয়ে মাছ চাষ করে পুঁজি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। সাদা সোনখ্যাত গলদা ও বাগদা চিংড়ি বিদেশে রপ্তনির পরিমাণ আর্ধেকে নেমে আসার আশংঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই অবস্থার মধ্যে উৎপাদিত মাছ রক্ষায় চিংড়ি চাষীরা তাদের ঘেরের বাঁধ মেরামত করছেন, আবার অনেকে বাঁধের উপর দিয়ে নেট দিয়ে মাছ আটকানোর চেষ্টা করছেন। অনেকের নেট জাল কেনারও পয়সা নেই বলে জানান চিতলমারীরর চিংড়ি চাষী নমিতা বিশ্বাস।

চিতমারী উপজেলার ডুমুরিয়া গ্রামের মাছ চাষী প্রানকৃষ্ণ বাড়ই (৬২) বলেন, ২২ বছর ধরে গলদা ও বাগদা চিংড়ি মাছের ঘের করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। গতবার বন্যায় ঘের ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। এবার কৃষি ও সোনালী ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে মাছ চাষ শুরু করি। কিন্তু ভরা মৌসুমের সময় অতিবর্ষনের ও ভেড়ি বাধ ভেঙ্গে জোয়ারের পানিতে তার ১৫ বিঘার ঘেরটিতে থাকা গলদা, বাগদা চিংড়ি ও সাদা মাছ ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। তিন দিন ধরে আত্মীয় বাড়ি থেকে দেয়া খাবারের উপর বেঁচে রয়েছি। কিভাবে দেনা পরিশোধ করবো ভেবে পাচ্ছি না। এভাবে একই এলাকার মাছ চাষী লিটন মন্ডল, শেখ সেলিম হোসেনসহ অনেক চাষী তাদের চিংড়ি মাছের ঘের ভেষে যাওয়ায় সর্বসান্ত হওয়ার বর্ননা করতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। তারা সরকারের কাছে আর্থিক সহায়তাসহ লোন মওকুফের দাবি জানান।

চিতলমারী সদর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ল্ডের ইউপি সদস্য অনির্বান মন্ডল বলেন, আমাদের ইউনিয়নে ৩ হাজারের অধিক চিংড়ি ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ২ সহস্রাধিক মানুষ। চিত্রা নদীর বেড়িবাধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি ঢুকে সর্বনাশা করে দিয়েছে এলাকার মানুষের। চাষীদের ক্ষতিপুরনের পাশাপাশি সুদমুক্ত ঋণ দিয়ে পুনরায় মাছ চাষ করতে চাষীদের সহযোগীতা করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।

বাগেরহাট জেলার ভারপ্রপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা মো. কবির হোসেন বলেন, দেশের রপ্তানি পণ্য গলদা ও বাগদা চিংড়ি চাষের অর্ধেকই হয়ে থাকে বাগেরহাট জেলায়। গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ জোয়ারের পানিতে চিতলমারি ও রামপালসহ বিভিন্ন এলাকার আট হাজার ৩’শ ৩৭ হেক্টর জমির ১০ হাজার ৬’শ ৫০টি মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। মৎস্য বিভাগের প্রাথমিক হিসেবে টাকার ক্ষতি হয়েছে ৫৫ কোটি ৭ লাখ টাকা। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে আরো হাজার- হাজার মাছের ঘের তলিয়ে গেলে চাষীদের আর্থিক ক্ষতি আরও বেড়ে যাবে। এত করে সাদা সোনখ্যাত গলদা ও বাগদা চিংড়ি বিদেশে রপ্তনির পরিমাণ আর্ধেকে নেমে আসার আশংঙ্কা রয়েছে বলে ধারণা করছেন এই মৎস্য কর্মকর্তার।