বাজেট জনমুখী করতে ‘বড়’ পরিবর্তন

বাজেট জনমুখী করতে শুল্কহারে ‘বড়’ পরিবর্তন এনেছে সরকার। কম্পিউটার, সেলুলার ফোন এবং তার যন্ত্রাংশ ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনকে দুই বছরের জন্য ভ্যাট অবমুক্ত করা হয়েছে।

বুধবার জাতীয় সংসদে বাজেট আলোচনার ওপর সমাপনী বক্তব্যে এসব প্রস্তাব দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

অর্থমন্ত্রী বলেন, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনকে একটি সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম হিসেবে আমরা বিবেচনা করব এবং ধ্যান অথবা যোগ (মেডিটেশন)-এর উপরে আগামী দুই বছরে কোনো ভ্যাট আরোপ না করার প্রস্তাব করছি।

কম্পিউটার, সেলুলার ফোন এবং তার যন্ত্রাংশ ভ্যাট অব্যহতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া শিপ বেকার্স অ্যান্ড রিসাইকেলারস অ্যাসোয়িশেন বাংলাদেশের বিষয়ে বর্তমানে বলবৎ প্রজ্ঞাপনই বহাল থাকবে।

অন্য পরিবর্তনগুলো

মোটরসাইকেল শিল্পের উপর স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে আরোপনীয় সমুদয় মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

মাইক্রোসফট বাংলাদেশ লিমিটেড অনেক সফটওয়্যার আমদানি করে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রদান করে। এবং কতিপয় পণ্য বিনা আমদানি শুল্কে আমদানি করে। যেসব পণ্যে আমদানি শুল্ক নেই সেগুলোর উপরে প্রস্তাবিত ভ্যাট অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক্স মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অভিযোগ করে আসছিল যে, যারা রেফ্রিজারেটর উৎপাদন করেন এবং অন্য যারা এর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সংযোজন করেন তারা ৯০ শতাংশ অধিক হারে শুল্ক কর দিয়ে থাকেন। এই শুল্ক বা কর হার অবনমিত করে সংযোজনকারীদের উপর প্রযোজ্য ৩০ শতাংশের স্থলে ২০ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এলপিজি গ্যাস ব্যবহার আমরা ব্যাপক হারে বাড়াতে চাই। সেজন্য কম্পোজিট অর্থাৎ প্লাস্টিক ও গ্ল্যাস ফাইবার নির্মিত খরচ কন্টেইনারের উপর আমদানি পর্যায়ে কোনো ভ্যাট আরোপ করা হবে না।

এলপিজি সিলিন্ডার এখনও ব্যাপকভাবে আমদানি নির্ভর। স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষার স্বার্থে আমদানি পর্যায়ে লৌহনির্মিত এলপিজি কন্টেইনারের উপর ভ্যাট বহাল থাকবে। এক কথায় গত বছর যে ব্যবস্থাটি ছিল সেটাই অব্যাহত থাকছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, মোটরসাইকেলের সব যন্ত্রপাতি উৎপাদনকে সাহায্য করার জন্য গত বছরের অর্থবিলে প্রগ্রেসিভ উৎপাদনকে কিছু কর/শুল্কের সুবিধা দেয়া হয়েছিল। এবারে তাদের অগ্রগতি লক্ষণীয় না হওয়ায় সেটি বাদ দেয়া হয়। তবে তারা জানিয়েছেন যে, শিগগিরই তারা উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করবেন এবং সেই বিবেচনায় এর উপর বর্ধিত শুল্ক করাদি মওকুফ করা হয়েছে।

মুহিত বলেন, জাপান দূতাবাস এবং নিটোল নিলয় কোম্পানি আমাদের জানিয়েছে যে, অদূর ভবিষ্যতে হোন্ডা এবং অন্যান্য কোম্পানি মোটরসাইকেল এবং মোটর গাড়ির উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করবে। সেই বিবেচনায় এজন্য প্রয়োজনীয় উপকরণের উপর আমদানি পর্যায়ে হ্রাসকৃত হারে শুল্ককর আরোপ করা হয়েছে।

সোলার প্যানেল আমদানি শুল্ক বাদ দেয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, অভ্যন্তরীণ নৌপথে যাত্রী ও মালামাল পরিবহনে বর্তমানে নানা ধরনের নৌযান যেমন- মাল্টি পারপাস নৌযান, বার্জ ও ট্যাঙ্কার ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত আছে। এ সম্পর্কে আয়করবিষয়ক এসআরও-তে যথাযথ সংশোধন করা হবে।

তৈরি পোশাক খাতে উৎসে কর ১ শতাংশ বহাল থাকবে। তবে সবুজ কারখানার ক্ষেত্রে আয়কর হার ১০ শতাংশ এবং অন্যদের ক্ষেত্রে ১২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

এছাড়া, কয়েকটি নির্দিষ্ট বিষয়ে আগামী অর্থবছরের শুরুতে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।

বাংলাদেশ ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো কোম্পানি তামাক এবং সিগারেটবিষয়ক তাদের কর ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এই বিষয়টি বাজেট পাস হবার পর একটি এসআরও জারি করে নিষ্পত্তি করা হবে। তবে, এই এসআরও জারির পূর্ব পর্যন্ত গত ১ জুন ঘোষিত মূল্য ও করহার এক্ষেত্রে বহাল থাকবে।