বাবা-মেয়ের আত্মহত্যা : ২২ দিনেও গ্রেফতার হয়নি ৬ আসামি

শ্রীপুরের কর্ণপুর সিটপাড়া গ্রামের বাবা-মেয়ে গত ২৯ এপ্রিল আত্মহত্যার ঘটনার ২২ দিন পার হলেও পুলিশ অভিযুক্ত কোনো আসামিকে গ্রেফাতার করতে পারেনি।

তবে গ্রেফতার হয়েছে গরু চুরির মামলার এক আসামি। আত্মহত্যার ঘটনাটিতে পুলিশের কোনো গাফিলতি ছিল কিনা তা তদন্ত করতে পুলিশের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও রিপোর্ট এখনো প্রকাশ হয়নি।

স্বামী ও মেয়ের আত্মহত্যার পর হালিমা বেগম কমলাপুর রেলওয়ে থানায় তার স্বামীকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেয়ার অভিযোগে সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

তারা হলেন কর্ণপুর গ্রামের ফারুক হোসেন (৩০), আ. খালেক (৬০), ফাইজুদ্দিন (৫০), পটকা গ্রামের বোরহান (৩৫), আব্দুল হামিদ (৪৫), শাহিদ (৪০) ও গোসিঙ্গা ইউপি সদস্য আবুল হোসেন বেপারী (৫৫)।

ঘটনার দিনই পুলিশ ইউপি মেম্বার আবুল হোসেনকে গ্রেফতার করে। কিন্তু শনিবার পর্যন্ত ঘটনার ২২ দিনেও এজাহারভুক্ত ৬ আসামিকে গ্রেফার করতে পারেনি পুলিশ।

কিন্তু সেই পরিবারের গত ৪ এপ্রিলের গুরু চুরির ঘটনায় ১৬ মে ওই পরিবারের সদস্য হালিমা বেগম শ্রীপুর থানায় মামলা করেন। এ মামলায় আবদুল কুদ্দুস নামে একজনকে শ্রীপুরের শালবন থেকে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার ব্যক্তি ছাড়াও মামলায় আসামিরা হলেন ফারুক, আবদুল খালেক ও আফছার ওরফে আফছু। এদের সবার বাড়ি কর্ণপুর সিটপাড়া গ্রামে।

এদিকে আত্মহত্যাকারী পরিবারের একমাত্র বেঁচে থাকা বিচারপ্রার্থী হালিমা বেগম বেশিরভাগ সময় ঘুমিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। শনিবার সকালে শ্রীপুরের কর্ণপুর গ্রামে হালিমার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে তিনি ঘুমাচ্ছেন।

কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর তিনি জেগে উঠেন। পরে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে খাওয়া-দাওয়া ও শারীরিক অবস্থা নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, কিসের খাওয়া কিসের সুস্থতা? একটি সিরাপের বোতল দেখিয়ে বলেন, এটি খেলে খালি ঘুম হয়। হালিমা বেগম বলেন, শুনছি পুলিশ আসামি ধরার জন্য চেষ্টা করছে। আমি ফারুকের ফাঁসি চাই। ফারুককে ধরতেই হবে।

হালিমার বাড়িতে শ্রীপুর থানা পুলিশের একজন উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও দুইজন গ্রাম পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করতে গেছে। আশপাশের বাড়িগুলোতে কোনো পুরুষ লোকজনকে পাওয়া যায়নি। অভিযুক্ত ফারুকের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, ঘর তালাবদ্ধ। বাড়িতে কোনো লোকজন নেই। পাশের বাড়ির ফাইজুদ্দীন বলেন, ঘটনার পর থেকে এই বাড়ির লোকজনকে দেখা যাচ্ছে না।

গত ২৯ এপ্রিল শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শ্রীপুর রেলস্টেশনের পশুহাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় চলন্ত তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে পালিত মেয়ে আয়েশা আক্তারসহ বাবা হযরত আলী আত্মহত্যা করেন। মেয়েকে শ্লীলতাহানি, গরু চুরি যাওয়া ও প্রতিবেশীদের হামলার হুমকির বিচার না পাওয়ায় তিনি আত্মহত্যা করেন। তাদের বাড়ি শ্রীপুর উপজেলার কর্ণপুর সিটপাড়া গ্রামে।

কমলাপুর রেলওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াসিন ফারুক বলেন, পুলিশ প্রতিদিন অভিযুক্তদের গ্রেফতারে চেষ্টা করছে। তারা প্রতিদিনই জায়গা পরিবর্তন করছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।

গাজীপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, আসামিদের গ্রেফতারের জন্য জেলা পুলিশও তৎপর রয়েছে। জেলা পুলিশের একাধিক টিম বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছে। আসামিরা এক জায়গায় থাকছে না। ফলে পুলিশও পিছু ছাড়ছে না।