বাম কিংবা মালিশ ব্যথা উপশমে কতটুকু কার্যকর?

ডা. সজল আশফাক : মালিশ একটি অতি প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি। গা ব্যথা, কোমর ব্যথা, গিঁটে ব্যথা, এমনকি মাথাব্যাথাতেও ‘বাম’ কিংবা মালিশের ব্যবহার হরহামেশাই দেখা যায়। ব্যথা উপশমে ‘বাম’ কিংবা মালিশের স্তুতি তুলে ধরতে গিয়ে টিভি বিজ্ঞাপনগুলোও কম যায় না। এসব চটকদার বিজ্ঞাপনে ‘বাম’, মালিশ, স্প্রে ইত্যাদিকে ব্যথা উপশমে তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর উপকরণ হিসেবে তুলে ধরা হয়। এতে স্বাভাবিকভাবেই মানুষ বাম বা মালিশ ব্যবহারের ব্যাপারে আকর্ষণ অনুভব করে। এ ছাড়া বিভিন্ন অসুখে বুকে- পিঠে, হাতে –পায়ের তালুতে তেল মালিশের প্রচলন তো রয়েছেই।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ‘ বাম ‘ কিংবা মালিশ ব্যবহার কি আসলেই কোনো উপকার হয়? অনেকেই অর্থাৎ যারা বাম কিংবা মালিশ ব্যবহার করে, তাদের ধারণা এ জাতীয় বাম ত্বকের গভীরে অবস্থিত মাংসপেশিতে তাপ সঞ্চালনের মাধ্যমে ব্যথা কমায়। সর্বসাধারণের মনে এই ধারণার সূত্রপাত ঘটেছে রাস্তাঘাটে ওষুধ বিক্রেতার লেকচার থেকে শুরু করে টিভির কাল্পনিক বিজ্ঞাপন চিত্রের মাধ্যমে।

বাম কিংবা মালিশের মলম বা তেল খুব বেশি হলে ত্বকের খানিকটা অভ্যন্তরে হয়তো যেতে পারে। কিন্তু সেই মলমের প্রভাবে মাংসপেশি পর্যন্ত পৌঁছা কিছুটা অসম্ভবই বটে! আর মাংসপেশি পর্যন্ত পৌঁছে সেখানে তাপ উৎপাদন করে ব্যথা উপশমের ব্যাপারটা অলৌকিক। বাজারে ব্যথা উপশমের জন্য যেসব বাম, মালিশ পাওয়া যায়, উপাদান হিসেবে এগুলোতে থাকে ক্যাম্পফর, মেনথল, মিথাইল, স্যালিসাইলেট। এগুলো ত্বকে ঠান্ডা অথবা গরম অনুভূতির উদ্রেগ করে এবং সেই সঙ্গে কিছুটা ব্যথা নিরাময় ও অবশভাব আনে। এতে সাময়িকভাবে ব্যথার উৎস থেকে ব্যথার অনুভূতি অন্যখানে ছড়াতে পারে না।

সম্ভবত এটা ব্যথার সংকেতের সরাসরি অথবা স্নায়ু উত্তেজিত করে এই কাজটি করে থাকে। এ ধরনের উপাদানকে বলা যেতে পারে কাউন্টার ইরিটেন্ট অর্থাৎ শরীরে নতুন উত্তেজনার উদ্রেক করে পুরোনো উত্তেজনা থেকে মনকে সরিয়ে আনা। এতে লাভ যা হওয়ার বাম কোম্পানিরই হয়। রোগীর এতে কোনো লাভই হয় না। বিশেষ করে কোমর ব্যথা। হাঁটুর ব্যথা কিংবা ঘাড়ের ব্যথা ও গিঁটরে ব্যথার সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। এগুলোর কোনো কোনোটির সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। এগুলোর কোনো কোনোটির খুব ভালো চিকিৎসা রয়েছে। কাজেই সঠিক রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা করা উত্তম। আর সামান্য মাংসপেশির ব্যথা এমনিতেই সেরে যায়। শরীরের নিজেরই সেই ক্ষমতা রয়েছে। মাংসপেশি থেঁতলে গেলে সে ক্ষেত্রে মালিশ করা নিষেধ। বেশির ভাগ মালিশেই থাকে ঝাঁঝালো গন্ধ।এই ঝাঁঝালো গন্ধও রোগীর ব্যথা উপশমে মানসিকভাবে কাজ করে। এতে ব্যথা উপশমে একটি মিথ্যা অনুভূতি জোগায়, যা খুব ক্ষণস্থায়ী।

এসব বাম বা মালিশ কখনোই ওষুধ হিসেবে গণ্য নয়। যে কারণে এগুলো পাওয়া যায় রাস্তাঘাটে, বাসে, ট্রেনে ক্যানভাসারের হাতে। এগুলো ওষুধ নয় বলেই এগুলোর বিজ্ঞাপন প্রচারের সুযোগ পায়। সাধারণভাবে কোনো ওষুধের বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে রোগীকে আকর্ষণ করার চেষ্টা বেআইনি। যারা বাম কিংমা মালিশ জাতীয় জিনিস শিক্ষিত চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করছে কিংবা মালিশ জাতীয় জিনিস চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করছে কিংবা ব্যবহার করার উৎসাহ বোধ করছে,তাদের উদ্দেশে শেষ কথা হচ্ছে, বাম মাংসপেশির গভীরে ঢুকে ব্যথা উপশম করে না।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হলিফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ