বাস-ট্রেন ও লঞ্চঘাটে ঘরমুখো মানুষের ঢল

জীবন চালাতে ঢাকায় থাকা। আর সেই জীবনের জীবনই পড়ে থাকে গ্রামে। জীবন বাঁচাতে তাই ঈদের সময়ে গ্রামের জীবনের কাছে ফেরা চাই। ঝক্কি-ঝামেলা যাই হোক, কোনো মতে ১৬/২০ ঘণ্টার ক্লান্তিকর ভ্রমণ শেষ করে বাড়ির মুখে মা-বাবা, প্রিয়জনের মুখ দেখার নিমিষেই শরীরের অবসাদ দুর হয়ে যায়। এরই নাম বাড়ি। যেথায় থাকেন জীবনের জীবন।

সেই জীবনের কাছে ছুটতে মানুষ এখন রেল স্টেশন, বাস টার্মিনাল ও সদর ঘাটে ভিড় করছেন। চারদিকে শুধু মানুষ আর মানুষ। যানবাহনে টিকেটের অপ্রতুলতা, যানজট, রাস্তায় ভোগান্তিসহ নানা বিপত্তি পেরিয়ে যারা রাজধানী ছাড়ছেন তাদের চোখেমুখে ছিল উচ্ছ্বাস আর আনন্দ। কাঁধে ব্যাগ, কেউ পরিবারের সদস্য নিয়ে আর কেউবা একাই ছুটছেন।এ স্রোত নাড়ির টানে ঘরে ফেরার। সড়ক-নৌ ও রেলপথে তিল ধারণেই ঠাঁই নেই।

বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) ছিল সরকারি শেষ কর্মদিবস। দিনভর রাস্তায় ছিল ঘরমুখো মানুষের ঢল তবে দুপুরের পর থেকে এ ঢল আরও বাড়তে থাকে। আর সন্ধ্যার পর যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। চারদিকে শুধু মানুষ আর মানুষ। ইট-পাথরের শহর ছেড়ে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে রাজধানীবাসী। ঈদ আসলেই টিকিটপ্রাপ্তি থেকে শুরু করে বাড়ি পৌঁছা পর্যন্ত পথে পথে ভোগান্তি পোহাতে হয় ঘরমুখী মানুষদের।

ঈদে বাড়ি ফিরতে পদে পদে ভোগান্তি তবুও শেকড়ের টানে শত ভোগান্তি উপেক্ষা করে স্বজনদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা সবার। সে কারণেরই রাজধানীর সবাই এখন বাস টার্মিনাল, লঞ্চঘাট ও রেল স্টেশনমুখী।

রেল স্টেশন কর্মকর্তারা বলছেন, বিগত কয়েক দিনের চেয়ে (বৃহস্পতিবার) দুপুরের পর থেকে কমলাপুর স্টেশন জনস্রোত সৃষ্টি হয়েছে। অফিস শেষে সব প্রতিষ্ঠান ছুটি হওয়ায় আজই সবাই বাড়ি ফিরছেন। যাত্রীদের যেন কোনো সমস্যা না হয় সেজন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

অন্যদিকে কল্যাণপুরে দূরপাল্লার বাসের কাউন্টারের সামনে উপস্থিত যাত্রীরা গাড়িতে ওঠার অপেক্ষায়। ব্যাগ ব্যাগেজসহ পরিবার সদস্যদের নিয়ে অপেক্ষা করছেন তারা। তাদের একজন তাহিরা ফারজানা। তিনি বলেন, অফিস শেষ করে বাড়ি ফিরছি। সড়ক পথে নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়। এবার সেখানে যুক্ত হয়েছে খানাখন্দ। বন্যার কারণে পুরো রাস্তা খানাখন্দে ভরা। ফলে দীর্ঘ যানজটের আশঙ্কা করছি। তবুও বাসে বাড়ি ফিরছি। কেননা ট্রেনে অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে টিকিট পেলেও আসন পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব হয় না।

অন্যদিকে সদরঘাটে আগের দিনগুলোর তুলনায় আজ যাত্রীর চাপ বেড়েছে। দুপুরের পর থেকে গুলিস্তান থেকে সদরঘাট এলাকায় ঘরে ফেরা মানুষের ঢল দেখা যায়। যেন ঘরে ফেরা মানুষের জনস্রোত নেমেছে রাজধানীতে।

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে এখন রাজধানী থেকে ঘরেফেরা মানুষের উপচেপড়া ভিড়। প্রতিদিন এ ঘাট দিয়ে দক্ষিাঞ্চলের ২১ জেলার ৪০-৫০ হাজার যাত্রী কর্মস্থল থেকে ঘরে ফিরছে। তবে ফেরি ঘাটের চেয়ে লঞ্চঘাট দিয়েই বেশি যাত্রীদের নদী পাড় হতে দেখা যায়।

শিমুলিয়া ও মাওয়া ঘাটে যাত্রীরা দীর্ঘ সময় ফেরির অপেক্ষায় না থেকে লঞ্চে নদী পার বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করছে। যদিও নদী পথে লঞ্চ অপেক্ষা ফেরিতে নিরাপদ বেশি। তবুও অনুকূল আবহওয়া মনে করে দ্রুত নদী পার হওয়াসহ সবদিকেই পদ্মা নদী পার হতে লঞ্চেই এখন যাত্রীরা বেশি ভিড় করতে দেখা যায়। লঞ্চঘাট থেকে ঝিনাইদহ, মাগুরা, যশোহর ও খুলান থেকে আসা ৭৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ ফকর উদ্দিন, আফছার হোসেন, জামাল উদ্দিন খান ও করিমন বিবি বলেন, ফেরিতে আসতে সময় বেশি লাগায় তার লঞ্চে নদী পার হয়েছেন।

এ ছাড়া গত কয়েক দিনে বিভিন্ন কারণে ঘাট এলাকায় প্রচণ্ড যানজট থাকলেও এখন তেমন কিছু নেই বললেই চলে। বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানায়,বর্তমান এ রুটে ১৭টি ফেরি চলাচল করছে। এ প্রসঙ্গে রাজবাড়ী ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক মৃদুল কান্তি জানান, স্থানীয় প্রশাসনের পূর্ববর্তী সিন্ধান্ত অনুযায়ী ঘরমুখো মানুষের নির্বিঘ্ন পারাপার নিশ্চিত করতে বৃহস্পতিবার হতে ঈদের আগে ও পরে ৩ দিন করে মোট ৬ দিন দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে অপচনশীল পণ্যদ্রব্যবাহী যানবাহন পারাপার বন্ধ থাকবে।

ফেরির সংখ্যা বৃদ্ধি করায় মঙ্গলবার হতে ঘাটের যানজট পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। কোনো গাড়ি আটকা পড়ার ঘটনা ঘটছে না। আরো আগে থেকে রুটে অন্তত ১৭টি ফেরি চললে মানুষকে এতদিন এত দুর্ভোগ পোহাতে হতো না বলে তিনি মন্তব্য করেন।