বাড়ছে পদ্মার পানি, শরীয়তপুর-ফরিদপুরে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বে সিলেট ও সুনামগঞ্জ অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখো মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে যোগ হয়েছে আরও একটি দুশ্চিন্তার খবর, তা হলো পদ্মার পানি বাড়ছে। ফলে এ অঞ্চলে নতুন করে বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

শরীয়তপুর ও ফরিদপুর প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন বিস্তারিত।

শরীয়তপুর : জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার পানি ৩২ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শনিবার (১৮ জুন) সকাল ৯টা থেকে সুরেশ্বর পয়েন্টে রাডার স্কেলে পদ্মার পানি বইছে ৪ দশমিক ৪৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। এই পয়েন্টে ৪ দশমিক ৪৫ সেন্টিমিটার বিপৎসীমা নির্ধারণ করা আছে।

শনিবার (১৮ জুন) দুপুরে শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডর নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, এক সপ্তাহ ধরে অস্বাভাবিকভাবে পদ্মায় পানি বাড়ছে। ১১ জুন সুরেশ্বর পয়েন্টে পদ্মার পানি বইছিল ৩ দশমিক ২৩ সেন্টিমিটার পয়েন্টে। মাত্র এক সপ্তাহ ব্যবধানে পানি বইছে ৪ দশমিক ৪৬ সেন্টিমিটারে। এক সপ্তাহে এই পয়েন্টে পদ্মার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ১২৩ সেন্টিমিটার। পানি বৃদ্ধির ফলে শরীয়তপুরের নড়িয়া ও জাজিরা উপজেলার নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে। তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের কিছু গ্রামে নদীর পানি প্রবেশ করেছে।

এ ছাড়া নিম্নাঞ্চলে থাকা কৃষিজমিতেও পানি ঢুকে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যার যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করতে কাজ শুরু করেছে।

ফরিদপুর : উজানের ঢলের পানি ও আষাঢ়ের বৃষ্টির প্রভাব পড়েছে ফরিদপুরের পদ্মাপারের নিম্নাঞ্চলে। ফলে চরাঞ্চলের মানুষের মনে ভাঙন ও বন্যার আতঙ্ক কাজ করছে।

শনিবার গোয়ালন্দ পয়েন্টে পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ লিডার সালমা খাতুন জানান, গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মার পানি গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ৭ দশমিক ৭৪ সেন্টিমিটার সীমায় প্রবাহিত হচ্ছে, যা বিপৎসীমার শূন্য দশমিক ৯১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ফরিদপুর সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ও নর্থ চ্যানেল ইউনিয়ন এবং চরভদ্রাসন উপজেলার চারটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে।

ফরিদপুর সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদি হাসান মিন্টু বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা পানিতে তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল। আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকাই চরাঞ্চলবেষ্টিত এবং ভাঙনপ্রবণ এলাকা।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফরিদপুর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, গত মে মাসের উজানের ঢলে ১০৯ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণভাবে এবং ১৯৪ হেক্টর জমির ফসল আংশিকভাবে নিমজ্জিত হয়।

ডিক্রিরচর ইউনিয়নের মুরাদ হোসেন নামে এক কৃষক বলেন, ‘চরাঞ্চলের মানুষের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম মাধ্যম বাদাম চাষ। আর এই বাদাম চাষ করেই যা রোজগার হয়, তা দিয়ে সারা বছরের সংসার চলে। গত মে মাসের শেষ দিকে হঠাৎ করে উজানের ঢলে পদ্মার পানি বেড়ে যাওয়ায় ফসল নষ্ট হয়ে গেল।

‘অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহায়তা পাইনি। এখন আবার পানি বৃদ্ধিতে ভাঙন আতঙ্কে আছি। কখন যে ভিটেবাড়ি ছাড়া হই।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফরিদপুর কার্যালয়ের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. হযরত আলী বলেন, ‘পদ্মায় পানি বাড়ার ফলে নিম্নাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। গত মে মাসের আকস্মিক পানি বৃদ্ধিতে ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারিভাবে সহযোগিতা করার জন্য তালিকা করেছি। এখন তাদের কোনো ফসল বপন করা নেই।’

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, ‘পদ্মার পানি আবারও বৃদ্ধি পাচ্ছ। ভাঙনের বিষয়টি আমরা নজরে রেখেছি। এখনও কোনো ভাঙনের খবর পাইনি।’

জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, ‘ফরিদপুর অঞ্চলে পানি বৃদ্ধির বিষয়ে নজর রেখেছি। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।’