‘বাড়ি নাই, খাবার নাই, কাপড়ও নাই’

চার শতাধিক লোক প্রাণ হারিয়েছেন সিয়েরা লিওনে বন্যা ও ভূমিধসে। তাদের মধ্যে তিনশ জনকে গণকবর দেয়া হচ্ছে। বাকি একশ শিশুর মরদেহ শিতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্থানে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন ছয় শতাধিক।

বৃহস্পতিবারও উদ্ধারকর্মীরা মাটিচাপা পড়ে থাকা মরদেহ উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়েছেন। চারদিকে উৎকট দুর্গন্ধের মধ্যেই প্রাণের স্পন্দন খুঁজে পাওয়ার আশায় তারা উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সেখানকার দুরাবস্থা এত খারাপ যে, পানিতে মরদেহ ভেসে যাচ্ছে। তার মধ্যেই উদ্ধারকর্মীরা নাকে-মুখে কাপড় চেপে মরদেহ উদ্ধার করছেন। খুঁজে দেখার চেষ্টা চলছে, কোথাও কোনো প্রাণের স্পন্দন পাওয়া যায় কি না।

আল জাজিরার মাতম প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মরদেহ উদ্ধারের আশায় পাথর ও ইট অপসারণের জন্য ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু সময় দ্রুত চলে যাচ্ছে বলে জানান তিনি। লোকবল কম থাকা এবং প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে উদ্ধারকাজ আরও কঠিন হয়ে পড়ার কথাও তিনি উল্লেখ করেন।

পরিবারের ১৭ জনকে হারিয়েছেন সাইও জাল্লোহ। এমনকি তার সন্তানও মারা গেছে ভূমিধসে। তিনি বলেন, প্রতিরাতে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। আজ সকালেও হয়েছে। বৃষ্টি হয়েছে ভোর সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত। আমার বার বার ভূমিকম্প হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।

সেই মুহূর্তের বিষয়ে জাল্লোহ বলেন, আমি সবাইকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলে পাশের বাড়ির লোকদের বের হওয়ার জন্য ডাকতে যায়। … কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সেই বিভৎস দৃশ্য আমি দেখলাম। চোখের সামনেই আমাদের বাড়ি ধসে পড়ে গেল।

তিনি আরও বলেন, এই যে আমি বেঁচে আছি, আমার ঘুমানোর কোনো জায়গা নেই, আমার খাবার কিছু নেই, কোনো কাপড় নেই কিছু নেই। কেবল আমার স্বামী বেঁচে আছে, তারও বয়স হয়েছে।

সিয়েরে লিওনের এই দুর্যোগে জাতীয় স্বাস্থ্য সমন্বয়ক আদিলে ফক্স জানান, এখন পর্যন্ত মরদেহ উদ্ধার তৎপরতা চলছে। তবে পরিস্থিতি খুব খারাপ। উদ্ধারকারীরা একেবারে বাজে পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে।

গত বুধবার তিনি জানিয়েছেন, তাদের জন্য মৌলিক চাহিদা হল খাদ্য, পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং চিকিৎসা সেবা। তার ওপর এটা তো বর্ষাকাল; আবার বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।

দুর্যোগের কারণে ওই এলাকার লোকজন একেবারে ভেঙে পড়েছেন। তার ওপর স্বল্প লোকের দ্বারা উদ্ধারকাজ চলার কারণে এবং প্রয়োজনীয় খাবার এবং ত্রাণ সহায়তার অভাবে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

অনেকেই আঙুল তুলছেন সরকারের দিকে। কেন আগে থেকেই পাহাড়ের ওইসব স্থানে ভবন নির্মাণে সরকার বাধা দিল না। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে তো আর এই দুর্দশা হত না।

নিহতদের আত্মীয়স্বজনদের ডেকে বৃহস্পতি ও শুক্রবারের মধ্যে সবাইকে দাফন করার কথা জানিয়েছে দেশটির সরকার। বুধবার এক বিবৃতিতে দেশটির প্রেসিডেন্ট আর্নেস্ট বাই কোরোমা আত্মীয়দের মর্গে আসতে বলেন। আর যাদের পরিচয় নিশ্চিত করা যাবে না, তাদেরও সম্মানের সঙ্গে দাফন করার কথা বলেন তিনি।

ক্যাথলিক রিলিফ সার্ভিসের ত্রাণ সমন্বয়ক ইদালিয়া আমায়া জানান, মর্গে অনেক মরদেহ জমা পড়েছে। বিষয়টা স্বাস্থ্যগত ইস্যু হয়ে পড়েছে। খুব তাড়াতাড়ি এই মরদেহগুলোেএখান থেকে সরাতে হবে।

সিয়েরা লিওন এখন অচেনা মৃত্যুপুরী। কাদামাটিতে ঢেকে গেছে রাজধানী ফ্রিটাউনের কাছের এক অঞ্চল। অধিকাংশ বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। মানুষের মরদেহ কাদামাটির স্রোতে ভেসে বেড়াচ্ছে। চারিদিকে উৎকট গন্ধ। অন্ধকার। ভয়। আতঙ্ক।

রেড ক্রস জানিয়েছে, মর্গে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় তাদের হাতে সময় খুব কম। চার শতাধিক মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে পাঁচ শতাধিক মানুষ নিহতের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

লাশ ঘরের প্রধান ওউজ কোরোমা জানান, পর্যাপ্ত জায়গা আমাদের এখানে নেই। ডেথ সার্টিফিকেট দিয়ে খুব তাড়াতাড়িই দাফন করা ছাড়া উপায় নেই।

সূত্র : আল জাজিরা