বিএনপির ‌‘স্টিয়ারিং’ এখন কার হাতে?

চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এখন লন্ডনে অবস্থান করছেন। চিকিৎসার কারণে সেখানে প্রায় দুই মাস থাকবেন তিনি। দীর্ঘ এই সময়ে দল চলবে কিভাবে, কার হাতে থাকবে দল পরিচালনার ভার, সেসব বিষয় স্পষ্ট নয়।

দল প্রধান যখনই কোনো সফরে দেশের বাইরে যান তখনই এই জটিলতার সৃষ্টি হয়। আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা দেশের বাইরে গেলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে প্রায়ই সিনিয়র নেতা ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাজেদা চৌধুরীর ওপর দায়িত্ব পড়ে।

কিন্তু বিএনপি দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া বিদেশ গেলে সিনিয়র কোনো নেতার হাতে দল পরিচালনার দায়িত্ব দেননি কখনও। এবারও তাই হয়েছে। দুই মাসের জন্য তিনি লন্ডন সফরে গেছেন, কিন্তু দলের দায়িত্ব কারো হাতে তুলে দিয়ে যাননি! তবে কে চালাবে বিএনপিকে।

একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, দেশে যখন নির্বাচনী হাওয়া বইছে, সেই মুহূর্তে বড় একটি রাজনৈতিক দলের প্রধানের অনুপস্থিতিতে দল কিভাবে চলবে বা তিনি কাউকে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন কিনা, সেই প্রশ্ন এসে যায়। দলীয় প্রধানের অনুপস্থিতিতে দল পরিচালনার দায়িত্ব এককভাবে কাউকে দেওয়া হয়নি। তবে খালেদা জিয়া স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন।

দলের গঠনতন্ত্রেও চেয়ারপারসনের অবর্তমানে কে দায়িত্বে থাকবেন, তার কোনো নির্দেশনা নেই। তবে বিএনপিতে গুঞ্জন আছে, খালেদা জিয়া যাদের দিয়ে এতদিন দলের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করাতেন, সেই দুই নেতা এবং বর্তমান মহাসচিবের হাতেই থাকছে দলের দায়িত্ব। এ ক্ষেত্রে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের প্রভাব থাকবে খুবই নগণ্য, যদিও খালেদা জিয়া দলের দেখভালের জন্য স্থায়ী কমিটির সদস্যদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তিনি শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বলেন, ‘আমার অনুপস্থিতিতে দলকে সবাই ঐক্যবদ্ধ রাখবেন। কোনোভাবেই যেন দলে বিভেদ সৃষ্টি না হয়, সেই বিষয়ে আপনাদের চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। তাছাড়া সরকারের গতিবিধির ওপর নজর রাখবেন।’

দল চালাবে কে এমন প্রশ্নের উত্তরে দলের অধিকাংশ সিনিয়র নেতা জানান, দল চলবে স্বাভাবিক নিয়মেই। নির্ধারিত কারো ওপর দায়িত্ব অর্পিত হয়নি।

২০১৫ সালে দীর্ঘ দুই মাস লন্ডনে থাকায় দলের অভ্যন্তরে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছিল। খালেদা জিয়া দেশে ফিরে সেসব বিষয়ে যথেষ্ট ক্ষুব্ধ হন সিনিয়র নেতাদের ওপর। গতবারের তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে এবার লন্ডনে থেকেই দলকে দেখভালের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

একইসঙ্গে দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড গতিশীল রাখতে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মোহাম্মদ শাহজাহান এবং অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভীকে বেশকিছু বিষয়ে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন চেয়ারপারসন। সেই বিবেচনায় অনেকে মনে করেন, খালেদা জিয়ার অবর্তমানে বিএনপির স্টিয়ারিং থাকবে এই তিন নেতার হাতেই।

তবে বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, তিন নেতার হাতে বিএনপি থাকবে, এটা বলা ঠিক নয়। কারণ, চেয়ারপারসন যাদের দিয়ে এতদিন কাজগুলো করাতেন, সেই কাজ আপাতত স্থগিত থাকছে। দল পুনর্গঠনের দায়িত্ব চেয়ারপারসন দেশে আসা পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। তবে বিএনপির সদস্য সংগ্রহ অভিযান কার্যক্রম ৫১টি টিমের সদস্যদের মাধ্যমে করা হবে বলে জানা গেছে।

আর সেই কাজ ঠিকমতো হচ্ছে কিনা, তা দেখার দায়িত্ব ছাত্রদলকে দিয়েছেন। এছাড়া স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মাধ্যমে বা খালেদা জিয়া যখন যে সিদ্ধান্ত দরকার, তখন তাকে ফোন করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন বলে জানা গেছে। এছাড়া দলের নিয়মিত ব্রিফিং আগে যেভাবে হতো, সেভাবেই চলবে এবং মহাসচিব দলের নিয়মিত কার্যক্রম দেখভাল করবেন।

একটি পক্ষের মতে, প্রায় দুই মাস লন্ডনে অবস্থান করলে দলের পরিচালনা বা চেয়ারপারসনের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব কে পালন করবেন, এমন একটি বিষয় বিএনপির পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা উচিত ছিল। তাছাড়া সেই বিষয়ে গঠনতন্ত্রে কিছু উল্লেখ না থাকাটা সত্যিই দুঃখজনক।

তারা বলেন, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিকট অতীতে এত দীর্ঘ সময় দেশের বাইরে অবস্থান করেননি। আর যদি করেনও, সেক্ষেত্রে একজনকে দলের ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে যান এবং তা দলের গঠনতন্ত্রও অনুমোদন করে।