‘বিচারকদের চাকরিবিধির গেজেট ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে’

অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণসংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট চলতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক।

রোববার দুপুরে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী জজদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।

প্রসঙ্গত, আজ (রোববার) আপিল বিভাগ নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালার গেজেট প্রকাশে শেষবারের মতো সময় দিয়েছেন।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বিচারকদের শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা বিচার বিভাগের শৃঙ্খলার ওপর যথেষ্ট প্রভাব রাখবে।

তিনি বলেন, এখন এটার খুঁটিনাটি বিচার বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে, যাতে এটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন না ওঠে। আশা করি, চলতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে গেজেট প্রকাশ হবে।

ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, চলতি মাসের ৯ তারিখে আইন মন্ত্রণালয় ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বৈঠক হবে। ওই বৈঠকে টেলিকমিউনিকেশন বিভাগের প্রতিমন্ত্রী ও কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। আমার মনে হয় সেখানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবে। সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে একটা শেষ ড্রাফট করার চেষ্টা করবো।

৫৭ ধারার বিকল্প হিসেবে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে জিনিসটা এখনও শেষ হয়নি, যে ড্রাফটা এখনও শেষ করিনি, সেটার ওপর আপনারা যে অভিমত দিচ্ছেন তা প্রি-ম্যাচিউরড (অপরিপক্ক)।

এর আগে, বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী জজদের ৩৫তম ফাউন্ডেশন ট্রেনিং কোর্সের উদ্বোধন করেন আইনমন্ত্রী।

প্রসঙ্গত, রোববার সকালে অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি গেজেট আকারে প্রকাশের জন্য দুই সপ্তাহ সময় দিয়ে এটাই ‘শেষ সুযোগ’ বলে উল্লেখ করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।

রাষ্ট্রপক্ষের অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম দুই সপ্তাহ সময়ের আবেদন জানালে তা মঞ্জুর করে প্রধান বিচারপতি এমন মন্তব্য করেন।

এর আগে, ২৯ মে বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করতে সরকারকে ২ জুলাই পর্যন্ত সময় দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ।

এরও আগে, আপিল শুনানিতে গেজেট প্রকাশের বিষয়ে দফায় দফায় সময় নেয় সরকারপক্ষ। গত মাসে শেষবারের মতো আবারও সময় পায় রাষ্ট্রপক্ষ।

নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়ন না করায় আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবকে ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর তলব করেছিলেন আপিল বিভাগ। ২০১৬ সালের ৭ নভেম্বর বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা ২৪ নভেম্বরের মধ্যে গেজেট আকারে প্রণয়ন করতে সরকারকে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।

১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় ১২ দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেয়া হয়। ওই রায়ের আলোকে নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিল।

১২ দফার মধ্যে ইতোমধ্যে কয়েক দফা বাস্তবায়ন করেছে সরকার। এজন্য বারবার আদেশ দিতে হয়েছে আপিল বিভাগকে। এমনকি, ২০০৪ সালে আদালত অবমাননার মামলাও করতে হয়েছে বাদীপক্ষকে। এরপর ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক ঘোষণা করেন।

এ অবস্থায় ২০১৫ সালের ১৫ মার্চ আপিল বিভাগ চার সপ্তাহ সময় দেন সরকারকে। এরপর গত বছরের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় থেকে একটি খসড়া শৃঙ্খলাবিধি তৈরি করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়। কিন্তু তা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে না হওয়ায় সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষ একটি কমিটি গঠন করে আলাদা একটি শৃঙ্খলাবিধি তৈরি করেন। গত ২ জানুয়ারি এ বিষয়ে আপিল বিভাগে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

২০০৭ সালের ১০ জানুয়ারি আপিল বিভাগ বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ সংক্রান্ত চারটি বিধিমালা সাত দিনের মধ্যে গেজেট আকারে প্রকাশের নির্দেশ দেন।