বিরল রোগে ঘামের বদলে রক্ত ঝরে ফুটফুটে শিশু অহনার

তিন বছর বয়সী ফুটফুটে শিশু অহনা। ভারতের হায়দরাবাদের বাসিন্দা সে। এই বয়সে আধো আধো বোল এবং খেলাধুলায় ঘর মাতিয়ে বেড়ানোর কথা তার। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে বিরল একটি রোগে ভুগছে সে। ঘামের সঙ্গে রক্ত ঝরে তার। শুধু ঘাম নয়, অশ্রুর বদলেও রক্ত ঝরে চোখ নিয়ে। এমনকি কান, মুখ, নাকসহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গ দিয়েও রক্ত ঝরে অহনার।

অহনার বয়স তখন মাত্র এক বছর। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল সে। সেইবারই প্রথম নাক দিয়ে রক্ত ঝরে অহনার। এরপর কিছুদিন সুস্থ থাকলেও আবার ১৬ মাস আগে নাক দিয়ে রক্ত ঝরা শুরু হয়। চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় অহনাকে। চিকিৎসকরা জানান, প্রচণ্ড জ্বরের কারণেই এমন হয়েছে। এখন শুধু নাক নয়, প্রায় প্রতিদিনই কোনো রকমের ক্ষত ছাড়াই প্রায় সব অঙ্গ দিয়ে রক্ত ঝরছে তার। এছাড়াও প্রচণ্ড মাথা ব্যথায় ভুগছে শিশুটি।

এ প্রসঙ্গে পেডিয়াট্রিক অনকোলজিস্ট ডা. শিরিসা বলেন, ‘অহনা সম্ভবত হেমাটোড্রোসিস নামক একটি বিরল রোগে আক্রান্ত। এই রোগে ঘামের সাথে রক্ত ঝরে। চিকিৎসার মাধ্যমে রক্ত ঝরা কমিয়ে আনা হয়েছে অনেকটাই। তাকে চিকিৎসকের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। সে শিশু এবং এই রোগ তার স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করছে। পুরোপুরি সারানো না গেলেও চিকিৎসা চলছে।’

অহনার বাবা মোহাম্মাদ আফজাল এবং মা নাজিমা বেগম জানান, তাদের প্রায় সব অর্থ ইতিমধ্যেই খরচ হয়ে গিয়েছে নানান রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর জন্য। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা জানেন না মেয়ের সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে কিনা। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন আরও দেড় লক্ষ রুপি প্রয়োজন হবে শুধু মাত্র পরীক্ষার জন্যই। আর হাসপাতালের বিল, ওষুধের খরচ তো আছেই। অহনার মা বলেন, ‘আমার মেয়ে জিজ্ঞেস করে, মা আমার রক্ত পরে কেন? আমি কোনো উত্তর দিতে পারি না।’

অহনার বাবা বলেন, ‘এক বছর বয়সে নাক দিয়ে রক্ত ঝরার মাধ্যমে সমস্যা শুরু হয়েছিল আমার মেয়ের। এখন যখন আমি চিকিৎসকের জিজ্ঞেস করি অহনা পুরোপুরি ভালো হবে কিনা, তারা কোনো উত্তর দিতে পারেন না। বর্তমানে চিকিৎসকরা বিভিন্ন হাসপাতালের নামী চিকিৎসকের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে পরামর্শ করছেন।’

এর আগেও ভারতে হেমাটোড্রোসিস রোগে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গিয়েছিল। অতিরিক্ত ভয় কিংবা প্রচণ্ড মানসিক চাপ থেকে এই রোগের সৃষ্টি হতে পারে। বিরল এই রোগ পুরোপুরি সারানোর নিশ্চয়তা এখনও দিতে পারেননি চিকিৎসকরা।-মিরর