বেরোবিতে ব্রুডা’র সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগের জবাবে সংবাদ সম্মেলন

এইচ. এম নুর আলম, বেরোবি প্রতিনিধি : রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক সংগঠন(ব্রুডা)এর সভাপতি রক্তিম মিলনের বিরুদ্ধে ১২ সদস্যের আনীত অভিযোগের জবাবে সংগঠনটি সংবাদ সম্মেলন করেছে।গণমাধ্যমে প্রকাশিত অভিযোগের জবাবে গতকাল মঙ্গলবার খেয়াপার্কে সকাল ১০ টায় এ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সংবাদ সম্মেলনে, লিখিত অভিযোগ ও জবাব প্রদান করেন সভাপতি রক্তিম মিলন এবং সাধারণ সম্পাদক সালমান হাফিজ।

তাঁরা বলেন, ব্রুডার গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সদস্য ফর্ম পূরণ করলেই সবাই কার্যকরী সদস্য হিসেবে বিবেচিত হয় না। সদস্য ফর্ম পূরণের মধ্য দিয়ে তাঁরা কর্মী হিসেবে ব্রুডায় যুক্ত হয়। এরপর কাজের ভিত্তিতে তারা বিতার্কিক ও বিতর্ক সংগঠক হিসেবে সংগঠনের কাজে সম্পৃক্ত হবার সুযোগ পায়। যাঁরা পদত্যাগ নাটক পত্রে স্বাক্ষর করেছেন তাঁদের অনেকেই সদস্য ফর্মই পূরণ করেনি। এবং এদের দু’জন ব্যতীত কেউ বর্তমান কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য নয়। পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষরকারী প্রায় সকলেই সাংগঠনিকভাবে নিষ্ক্রিয়। এটি বিভ্রান্তি ছড়ানো এবং সংগঠনের ও ব্যক্তিক ভাবমূর্তি নষ্ট করতে কাজটি করা হয়েছে ।

লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, শামিমের সদস্য পদ স্থগিতকরণের নোটিশ দেয়া হয় গত ৬ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে অথচ সে সদস্য পদ ত্যাগ করে ৯ অক্টোবর। তাঁর ফেসবুক পোস্ট থেকে দেখা যায়, গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে সে ফেসবুকে লেফট ব্রুডা লিখে ব্রুডা ছাড়ার ঘোষণা দেয়। অথচ ২৬ সেপ্টেম্বর সকালে একটি ইভেন্টে সে যেতে চায় বলে সাধারণ সম্পাদককে জানায় এবং না পাঠালে ফোনকলে “সমস্যা হবে” বলে মন্তব্য করে। তাঁর এই দ্বিমুখী আচরণের কারণে সংগঠনের দায় থেকে সংগঠন তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পুনরায় পাঠায়। পরে অবশ্য সে তাঁর টাইম লাইন থেকে পোস্টটি সরিয়ে নিয়েছে।

অভিযোগ করা হয়, অনেকবার সে কমিটিকে প্রকাশ্যে অবৈধ বলেছে। কিন্তু গত ৫ অক্টোবর সংগঠনের মডারেটর ও উপদেষ্টা, গণযোযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধানের উপস্থিতিতে কমিটিকে বৈধ বলে সংগঠন থেকে সুবিধা নেয়ার চেষ্ট করে। বর্তমান সভাপতি রক্তিম মিলন বা সাধারণ সম্পাদক সালমান হাফিজ বিগত বছরগুলোতে কখনো সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন নাই। বর্তমান কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়েছে গত ১২ আগস্ট ২০১৭ তারিখে। উক্ত তারিখে সংগঠনের গঠনতন্ত্র মেনেই কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য মিটিং আহ্বান করা হয়েছে ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে। এই তারিখে উক্ত পদত্যাগ নাটক গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ বলে অন্যান্য সংগঠকগণ মনে করেন। কারণ তাঁরা কেউ গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিতর্ক সংগঠক নন এবং কার্যনির্বাহী কমিটি ২০১৭-১৮ এর সদস্যও নন।

২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের কমিটি থেকে তাঁর আচরণগত কারণে তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়, সেই নোটিশের জবাবও শামীম দেয় নাই। সংগঠনের বর্তমান কমিটি চতুর্থ কার্যনির্বাহী পরিচালনা করছে। বিগত সকল কমিটি তাঁদের মেয়াদ শেষে আর্থিক ও বার্ষিক প্রতিবেদন দিয়ে থাকে। প্রতিবেদনে সংগঠনের সকল কার্যক্রম তুলে ধরা হয়। বর্তমান কমিটির মাত্র দুইমাস পার না হতেই শামিম নামের শিক্ষার্থীটি বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে সংগঠনটি।

২০১৬ সালে ইংলিশ কালচালার সোসাইটি (ইসিএস) আয়োজিত বিতর্ক প্রতিযোগিতায় জিততে না পারার কারণে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের মাধ্যমে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষককেও সে ফোন দিয়েছিল। প্রতিযোগিতা চলাকালে ইচ্ছেকৃতভাবে বিশৃঙ্খলা তৈরির অপচেষ্টার অংশ হিসেবে তিনি উক্ত কাজ করেন।

ব্রুডা আয়োজিত ফ্রেশার্স চ্যাম্পিয়নশিপ ২০১৭ চলাকালীন আয়োজকদের ব্যঙ্গ করে অনুজ বিতার্কিকদের উস্কানিমূলক কথা শিখিয়েছিল বলে শোনা গেছে। উক্ত ফেশার্স ডিবেট চ্যাম্পিয়নশিপের আয়োজনে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের একটি দলের বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ব্রুডার সিনিয়রা বিচারিক কাজ করতে পারবে না বলে হুমকি প্রদান করে। অথচ আয়োজনটি ছিল ব্রুডার নিজস্ব।

প্রেস ব্রিফিংকালে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাঁদের যৌথ বিবৃতিতে বলেন, “ব্রুডা বিতর্কের উৎকর্ষ সাধনে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে কাউকে চ্যাম্পিয়ন বানানোর জন্য নয়। ভাল আচরণ তো দূরের কথা বিতর্কের মানদন্ড না জানা ব্যক্তিবর্গ এমন গর্হিত কাজ করতে পারে। তাঁরা বিভিন্ন্ সময়ে ব্রুডার বিতার্কিকদের নিকট বিতর্কে পরাজিত হয়ে উক্ত কার্যে লিপ্ত হয়েছে ব্যক্তিগত হিংসা চরিতার্থ করার জন্য। তাঁরা বিশ^বিদ্যালয় আয়োজিত দুইবারের বিতর্কেও ব্রুডার পরিশীলিত বিতর্কের কাছে হেরেছে। ব্যক্তি বিদ্বেষপরায়ন ব্যক্তিই কেবল এই কাজ করতে পারে।”

তাঁদের মতে ব্রুডা এখনো একনিষ্ঠভাবে সংগঠন চালাতে তৎপর। ব্রুডা বিতর্ক চর্চার মধ্য দিয়ে মানবিক সংবেদনশীল সমাজ গঠনে তৎপর। ব্রুডায় সংগঠক এবং সদস্যবৃন্দের মধ্যে ইস্পাত কঠিন বন্ধন এখনো বিদ্যমান বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়। এছাড়াও বিভ্রান্ত না হবার জন্য সকল শুভানুধ্যায়ী ব্যক্তিবর্গের প্রতি অনুরোধও জ্ঞাপন করেছেন।

এ ব্যাপারে বেলা বারোটায় সদ্য পদত্যাগকৃত সহ সাধারণ সম্পাদক শামীমের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সম্ভব হয়নি।