ভবিষ্যতে যেভাবে বদলে যেতে পারে ক্রিকেট

আমিনুল ইসলাম : সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বদলে যাচ্ছে ক্রিকেট। দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সংক্ষিপ্ত সংস্করণগুলো। বদলে যাচ্ছে ক্রিকেটের নিয়ম কানুন থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট অনেক কিছুই। দশ বছর আগেও এলইডি বেলস, স্পাইডার ক্যাম, দিবারাত্রির টেস্ট কিংবা গোলাপী বলের কোন অস্তিত্বই ছিল না। মারকুটে ব্যাটিং এর এই যুগে ব্যাটসম্যানদের শটেও আসছে অনেক নতুনত্ব। প্রযুক্তির উত্তরোত্তর উন্নতিতে সামনে আসতে পারে আরো অনেক কিছুই।

তাহলে, কেমন হতে পারে আরো এক যুগ পরের ক্রিকেট? চলুন দেখে নেওয়া যাক ২০২৭ সালের মধ্যে আরো নতুন কি কি দেখা যেতে পারে ক্রিকেটে।

১. ব্রেইন ট্রেইনিং : শারীরিক দিক ছাড়াও ক্রিকেট যে কতটা মানসিক খেলা তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এখনকার দিনে মানসিকভাবে চাপ সামলে মনযোগ ধরে রাখা কিংবা তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্ত গ্রহনের বিষয়গুলোতে এগিয়ে রাখতে খেলোয়াড়দের নানারকম প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সামনের দিনগুলোতে এসব বিষয় দেখভাল করতে চলে আসবে বিশেষভাবে তৈরি হেডসেট। সেটি আবার যুক্ত হয়ে যেতে পারে খেলোয়াড়দের হেলমেটের সাথে, যা তাৎক্ষনিকভাবেই খেলোয়াড়দের মস্তিষ্কে চাপ কমাতে সহায়তা করবে।

২. থাকবে না টস সুবিধা : যেকোন পিচের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য কিংবা আবহাওয়ার কারণে টস জয়ী দল বেশ বড় রকমের সুবিধা পেয়ে থাকে। সেই সুবিধা কিছুটা হ্রাস করতে টসে হারা দলকে সুযোগ দেয়া হতে পারে পুর্ব নির্ধারিত একাদশে যেকোন একটি পরিবর্তন আনার।

৩. বেশি টাকা বেশি খ্যাতি : টি-টোয়েন্টির পর্বতসম জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে তরুণ খেলোয়াড়রাও অনেক বেশি আয় ও খ্যাতি অর্জন করার সুযোগ পাবেন। সেই সাথে বাড়বে গণমাধ্যমে পদচারনাও।

৪. বদলে যেতে পারে চারের সজ্ঞা : বাউন্ডারি সীমানায় ফিল্ডিং করা খেলোয়াড়রা কোন বল সেভ করলে এবং তা নিয়ে আম্পায়ারের সন্দেহ জাগলে টিভি রিপ্লেতে সেটি চার হয়েছে কি হয়নি তা নিয়ে বেশ সময় নষ্ট হতে দেখা যায় এখনকার দিনে। আসতে পারে এমন নিয়ম যেখানে খেলোয়াড়ের শরীর বাউন্ডারি লাইন স্পর্শ করল কিনা তাতে আর কিছুই আসবে যাবে না, চার নির্ধারিত হবে বল সীমানা পার হয়েছে কিনা তার উপর ভিত্তি করে। অনেকটা ফুটবলের মত।

৫. পোশাক পরিচ্ছেদে পরিবর্তন : স্বাগতিক দেশের আবহাওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে জার্সি কিংবা অন্যান্য পোশাক তৈরী করে খেলোয়াড়দের আরেকটু স্বাচ্ছন্দ্য দেওয়ার ব্যবস্থার প্রচলন হতে পারে। পরিবর্তন আসতে পারে প্যাড, গ্লাভস আর হেলমেটেও।

৬. পরিধেয় প্রযুক্তির ব্যবহার : খেলোয়াড়দের শরীরে জিপিএস ডিভাইস ব্যবহার করে তাদের গতি, মোট অতিক্রম করা দূরত্ব নির্ধারনের পদ্ধতি থাকবে। থাকবে প্রয়োজনের বেশি এবং শরীরের জন্য ক্ষতিকারক এমন পরিমাণ পরিশ্রম করে ফেললে সতর্ক করার সুবিধাও। বল কিংবা ব্যাটের সাথেও থাকবে জিপিএস ডিভাইস যার মাধ্যমে আরো নির্ভুলভাবে এবং বিস্তৃতভাবে জানা যাবে বল কিংবা ব্যাট চালানোর গতি, কৌনিক পরিমাপ ইত্যাদি।

৭. কেমন হবে ভবিষ্যত ক্রিকেট ফরম্যাট : আগামী দশ বছর পর তরুণদের মধ্যে টেস্ট খেলার আগ্রহ কমে যাবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। টেস্ট খেলা চালু থাকুক এমন প্রত্যাশী তরুণ খুঁজে পাওয়াই হয়ে যেতে পারে দুস্কর। একদিনের ম্যাচের দর্শক ও কমবে ব্যাপক হারে। আরো বিস্তৃত হবে টি-টোয়েন্টির পরিসর কিংবা ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের সংখ্যা।

৮. আম্পায়ারিং এ প্রযুক্তির ব্যবহার : আম্পায়ারিং এ বাড়বে প্রযুক্তির ব্যবহার। ফুটস্টেপ নো বল ডাকার ক্ষমতা হারাতে পারেন মাঠে থাকা আম্পায়ার। সেক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা ন্যস্ত হবে টিভি আম্পায়ারের হাতে। চালু হতে পারে প্রতিটি বলের পর পরই মাঠে থাকা পর্দায় বোলিং অ্যাকশান ঠিক আছে কিনা তা প্রদর্শন করার পদ্ধতি।

৯. বোলারদের জন্য প্রদত্ত কিছু সুবিধা : ব্যাটসম্যানদের সুইচ হিটের মত বোলারদের সুযোগ আসবে আর্ম সুইচের। আগে থেকে না জানিয়েই যেকোন হাতে বল ছোড়ার সুবিধা থাকবে বোলারদের। টি-টোয়েন্টিতেও এক ওভারে দুটি বাউন্সার দেওয়ার সুবিধা আসতে পারে বোলারদের জন্য।

১০. প্র্যাকটিসে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি : হালের কম্পিউটারে ভিডিও বিশ্লেষণ পদ্ধতি বাদ দিয়ে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশেষায়িত হেডসেট পরে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যান ও বোলারদের অনেকটা বাস্তব দৃশ্যের মতই পর্যবেক্ষন করার সুবিধা আসবে খেলোয়াড়দের হাতে।

১১. কোচ ও অধিনায়কের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ : বোলিং কিংবা ব্যাটিং এর সময় ইয়ারফোনের মাধ্যমে ড্রেসিং রুমে থাকা কোচ ও অধিনায়কের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখার সুবিধা যুক্ত হতে পারে আগামী দিনের ক্রিকেটে।

১২. খেলোয়াড়দের তথ্য উপাত্ত : খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের আরো বিস্তৃত তথ্য উপাত্ত রাখার সুযোগ আসবে। বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে তাদের ট্রেনিং কিংবা ম্যাচে আরো বেশি পর্যবেক্ষন করার পদ্ধতি প্রযুক্ত হবে যা কাজে লাগবে পরবর্তীতে খেলোয়াড় বাছাইয়ে।