ভারতীয় ‘ধর্মগুরু’দের যতো কেলেঙ্কারি (দেখুন ভিডিও)

গেল কয়েকদিন ভারতসহ আন্তর্জাতিক সব গণমাধ্যমের পাতা উল্টালে যে নামটি সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে নিঃসন্দেহে তিনি স্বঘোষিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিং। ধর্ষণের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় আদালত তার ২০ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেয়। কিন্তু ভারতের ইতিহাস রাম রহিম সিং কোন নতুন চরিত্র নয়। এর আগেও দেশটির অনেক ‘ধর্মগুরু’ যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছেন। শুধু যৌন কেলেঙ্কারি নয় হত্যা, এমনকী আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগও এদের বিরুদ্ধে কম নয়।

রাম রহিমের মতো সাধারন মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে আর কে কে ফায়দা লুটেছেন চলুন এক নজরে দেখে নেয়া যাক-

গুরমিত রাম রহিম সিং: ডেরা সাচ্চা সৌদার প্রধান গুরমিত রাম রহিমকে ধর্ষণের মামলায় বিশেষ সিবিআই আদালত দোষী সাব্যস্ত করে ২০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেয়। ১৯৯৯ সালে দুই শিষ্যাকে ধর্ষণের অভিয়োগে আদালত এই রায় দিয়েছে। সেই ঘটনার পর তাণ্ডবের জেরে হরিয়ানায় ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।

বাবা পরমানন্দ: যৌন নির্যাতনের দায়ে গত ২৪ মে ভারতের উত্তরপ্রদেশের বারাবাঁকির পুলিশ গ্রেপ্তার করে রাম শঙ্কর তিওয়ারি ওরফে বাবা পরমানন্দকে। অভিযোগে বলা হয়, বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসার নামে নারীদের উপর যৌন নিপীড়ন চালাতেন তিনি। বেশ কয়েক জন নারী পরমানন্দের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। তার বারাবাঁকির আশ্রমে তল্লাসি চালিয়ে পর্ন মুভির সিডি, নারীদের অশ্লীল ভিডিও এবং অশ্লীল পত্রপত্রিকা উদ্ধার করে পুলিশ।

রামপাল: সতলোক আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা হরিয়ানার এই স্বঘোষিত ধর্মগুরু খুন ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে আপাতত জেলে রয়েছেন। ২০১৪ সালে রামপালকে গ্রেপ্তার করতে গেলে তার অনুগামীরা এক সপ্তাহ ধরে রাস্তা ও রেল অবরোধ করে রাখে। মোট ৪২ বার আদালতের সমন উপেক্ষা করেছেন রামপাল। তবে শেষপর্যন্ত পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে হাজতে নেয়। ধারণা করা হচ্ছে, রাম রহিমের পর এবার রামপালের মামলার রায় দেবে হরিয়ানার আদালত।

নিত্যানন্দ: ধর্ষণের মামলায় জেলে যেতে হয়েছিল নিত্যানন্দকে। এখন জামিনে মুক্ত রয়েছেন। একাধিক ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির অভিযোগে ২০১২ সালের জুনে বেঙ্গালুরুর আশ্রম থেকে ধর্মগুরু নিত্যানন্দকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২০১০ সালে এক তামিল অভিনেত্রীর সঙ্গে অপ্রস্তুত অবস্থায় তাকে দেখা গিয়েছিল। এক শিষ্যাও নিত্যানন্দের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন।

রামবৃক্ষ যাদব: স্বাধীন ভারত সুভাষ সেনার নেতা রামবক্ষ যাদব মথুরায় জওহর বাগ এলাকায় সহিংসতার জন্য অভিযুক্ত ছিলেন। অন্যায়ভাবে ২৮০ একর জায়গা তিনি ও তার অনুগামীরা দখল করে রেখেছিলেন। তার দাবি ছিল ভারতীয় রুপির বদলে আজাদ হিন্দ ফৌজ কারেন্সি চালু করতে হবে। পেট্রোল-ডিজেলের মূল্য এক রুপিতে নির্ধারন করতে হবে। এমন হাজারো আবদার করে বছরের পর বছর ওই এলাকায় প্রশাসনকে ব্যতিব্যস্ত করে অবশেষে ২০১৬ সালে মারা যান তিনি।

আশুতোষ মহারাজ: আশুতোষ মহারাজ মারা যাওয়ার পরও তার দেহ সৎকার করতে দেয়নি ভক্তরা। প্রায় ১১ মাস দেহ রাখা ছিল। মনে করা হয়েছে তিনি ধ্যানমগ্ন রয়েছেন। তার সঙ্গে কট্টর শিখদের বিরোধ লেগেই থাকত৷ তিনি শিখদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত আনায় জলন্ধরে ব্যাপক সহিংসতা হয়।

বালক ব্রহ্মচারী: পশ্চিমবঙ্গে বালক ব্রহ্মচারীকে নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। ১৯৯৩ সালে তিনি মারা যাওয়ার পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে ৫৫ দিন পর তার দেহ দাহ করা হয়। বারবার নোটিশ দেওয়ার পরে অবশেষে দুই হাজার শিষ্যকে সরিয়ে প্রায় পাঁচশো পুলিশ দেহ বের করে এনে দাহ করে। নানা দুর্নীতি ওবিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন এই স্বঘোষিত গুরু।

আনন্দ মূর্তি: আনন্দ আশ্রমের প্রধান আনন্দ মূর্তির আসল নাম ছিল প্রভাস রঞ্জন সরকার। ছয়জনকে হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। সেই ঘটনায় ১৯৭১ সালে জেলও হয়। বিশ্বের ৮৫টি দেশ মিলিয়ে ৪০ লাখ অনুগামী ছিল। পুরুলিয়া অস্ত্র বর্ষণ মামলাতেও এই সংগঠনের নাম ছিল।

আশারাম বাপু: মাকে ঘরের বাইরে বসিয়ে রেখে ১৬ বছরের মেয়েকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল স্বঘোষিত গুরু আশারাম বাপুকে। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের ইন্দোরের আশ্রম থেকে ধরা পড়েন বাপু। ধর্ষণ, শ্লীলতাহানিতেও অভিযুক্ত তিনি। দোষী সাব্যস্ত হয়ে এখনও যোধপুরের জেলেই আছেন। ধর্মগুরু হওয়ার আগে আসারাম সাইকেল মেকানিকের কাজ করতেন।

ইচ্ছাধারী ভীমানন্দ: যৌনচক্র চালানোর অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে ভীমানন্দ। দেহব্যবসা চালানোর অভিযোগে ২০১০ সালে উত্তরপ্রদেশের চিত্রকূটের শিব মুরাত দ্বিবেদী ওরফে স্বামী ভীমানন্দজি মহারাজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ১৯৯৭ সালে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ভীমানন্দ নাম গ্রহণের আগে সে দিল্লিতে সিকিউরিটি গার্ডের কাজ করত।

চন্দ্রস্বামী: জালিয়াতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছে চন্দ্রস্বামী। আসল নাম নেমি চাঁদ জৈন। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসীমা রাওয়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি। এছাড়া আরও অনেক অপরাধমূলক মামলা ছিল চন্দ্রস্বামীর বিরুদ্ধে। রাজীব গান্ধী হত্যা মামলাতেও তার বিরুদ্ধে তদন্ত হয়।

স্বামী গঙ্গেশানন্দ: ধর্ষণের চেষ্টায় কেরালার তিরু অনন্তপুরমে স্বামী গঙ্গেশানন্দ ওরফে হরি স্বামীর যৌনাঙ্গ কেটে নিয়েছিলেন এক তরুণী। ওই তরুণীর অভিযোগ ছিল, সাত বছর ধরে লাগাতার ওই স্বঘোষিত ধর্মগুরুর ধর্ষণের শিকার হতে হয়েছিল তাকে। হরি স্বামী নিজেকে কোল্লমের চাত্তাম্বি স্বামী আশ্রমের আবাসিক বলে দাবি করেছিলেন, যদিও পরে পুলিশ জানিয়েছে ওই আশ্রমের সঙ্গে তার কোন সম্পর্কই ছিল না।